চলতি বছরের মধ্যভাগের কথা। আইএস পরিচালিত একটি জঙ্গি ওয়েবসাইট সম্পর্কিত কাজে ডাক পড়ল টিম টাইগার ফোর্সের। সরকারের সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্টের ডাকে সাড়া দিয়ে কাজে নামলেন টিমটির সদস্যরা। তারপর মাত্র চার দিনের মাথায় তারা বন্ধ করে দিলেন জঙ্গি সাইটটি।
গত বছর সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাহাত তরফদার এবং চলতি বছর নগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট গোলাম সোবহানী চৌধুরী দিপনের ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন তারা। টিম টাইগার ফোর্সের সদস্যরা মাত্র কয়েক মিনিটে তাদের আইডি ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হন।
সিলেটের তরুণ জহিরুল ইসলাম জুয়েলের নেতৃত্বে কাজ করছে এই টিম টাইগার ফোর্স। এরই মধ্যে এ রকম শত শত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাইবার-সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান করেছেন ফোর্সের সদস্যরা। সরকারি সংস্থাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেও সাইবার অপরাধের ফাঁদ থেকে উদ্ধারের কাজে এগিয়ে যায় এ ফোর্স। বেসরকারি খাত থেকে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আশার আলো জাগিয়ে তুলেছে এ সংস্থা।
টিম টাইগার ফোর্সের প্রধান, সাইবার বিশেষজ্ঞ ও সাইবার ফরেনসিক এক্সপার্ট জুয়েল জানান, দেশে বেসরকারি বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাইবার অপরাধ রোখার তেমন কোনো ক্ষেত্র তৈরি হয়নি। এ ক্ষেত্রে সরকারের ক্রাইম ডিটেকটিভ ইউনিটকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তিনি মনে করেন, ডিজিটাল দুনিয়ায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে সাইবার বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
জুয়েল সমকালকে বলেন, সারাদেশেই আমাদের সদস্যরা কাজ করছেন। সিলেটে আমি ও আমার চার সহকর্মী কাজ করছি। মূলত আমরাই সদস্যদের বিভিন্ন জায়গায় কাজে লাগাই। তিনি জানান, দেশদ্রোহী ও অশ্নীল কনটেন্ট রিমুভ, সাইবার অপরাধী শনাক্তকরণ, ফুটেজ ফরেনসিক ও ভিকটিম সাপোর্ট-সংক্রান্ত কাজ করছেন তারা।
মোবাইল ফোন, কম্পিউটার বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাইবার জগতে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ দেশে সম্প্রতি অহরহ ঘটছে। কিন্তু সরকারিভাবে বিভিন্ন দপ্তরে এখন সাইবার ক্রাইম রোধে শক্তিশালী ইউনিট যেমন গড়ে ওঠেনি, তেমনি দক্ষ জনবল নেই বললেই চলে। একইভাবে বেসরকারিভাবে এ কাজের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্র তৈরি হয়নি। যদিও কয়েক বছর আগে থেকে সরকার সাইবার অপরাধ রুখতে কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি বেসরকারিভাবে টিম টাইগার ফোর্সও কয়েক বছর ধরে কাজ করছে। এই টিম সারাদেশেই কাজ করছে। বিভিন্ন থানা ও সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্ট থেকেও তাদের ডাকা হচ্ছে।টিম টাইগার ফোর্স এরই মধ্যে সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে ছয়-সাত হাজার কেসের সমাধান করেছে। এর মধ্যে শুধু সিলেটেই করেছে তিন হাজারের মতো সমস্যার সমাধান। জহিরুল ইসলাম জুয়েলের সঙ্গে এ টিমে আরও রয়েছেন টিমের সিনিয়র অ্যাডমিন, ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টিং এক্সপার্ট মো. জয়, অ্যাডমিন ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টিং এক্সপার্ট সৌরভ দাস, মডারেটর ও ভিকটিম সাপোর্টার ইসরাত জাহান সেতু এবং ট্রেইনার ও ভিকটিম সাপোর্টার মেহেদী হাসান সাকিব। তরুণ এই সাইবার বিশেষজ্ঞরা সবাই লেখাপড়ার পাশাপাশি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের নিরাপত্তা তথা সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছেন।টিম টাইগার ফোর্স যাত্রা শুরু করে ২০১৫ সালে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ৫ ধারা অনুসারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তা গঠন করা হয়। পরে এ ফোর্সের সাইবার ক্রাইম ডিটেকটিভ ইউনিট (সিসিডিইউ) দেশে প্রথম সাইবার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করে। দেশে বর্তমানে তাদের প্রায় ৫০০ সদস্য রয়েছে। যারা নিজ এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি কিংবা ব্যক্তির সমস্যা সমাধান করছেন। তারা অনলাইনে প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন। এসব কাজ থেকে অর্জিত পারিশ্রমিকের সিংহভাগই তারা ব্যয় করছেন ছিন্নমূল মানুষের জন্য খাদ্যের পেছনে।
টিমের সদস্যরাই সাইবার অপরাধে জড়াতে পারেন কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে জুয়েল বলেন, আমাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট (www.teamtigerforce.com) রয়েছে। এখানে আমরা যারা কাজ করছি, তাদের বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। কেউ অপরাধ করলে তাকে ধরার সুযোগও রয়েছে আমাদের। আমরা নিয়মিত কাউন্সেলিং করে থাকি।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশের এএসপি (মিডিয়া) লুৎফুর রহমান সমকালকে বলেন, টিম সাইবার ফোর্সের কার্যক্রম সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। সাইবার-সংক্রান্ত বিষয়ে আমরা সিআইডি বা সাইবার ক্রাইম বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকি।
অবশ্য কোতোয়ালি থানার সদ্য বদলি হওয়া ওসি এস এম আবু ফরহাদ জানান, সাইবার-সংক্রান্ত অনেক বিষয়ে আমরা তাদের সহযোগিতা নিয়ে থাকি। তারা আমাদের সহযোগিতাও করে।অবশ্য কোতোয়ালি থানার সদ্য বদলি হওয়া ওসি এস এম আবু ফরহাদ জানান, সাইবার-সংক্রান্ত অনেক বিষয়ে আমরা তাদের সহযোগিতা নিয়ে থাকি। তারা আমাদের সহযোগিতাও করে।