এই শহর দেখেছে তাঁকে। ৩৭ বছর আগে বাঙালির বড় আপন ইডেন গার্ডেন্সে ভারতের জাল কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সেদিনের সেই দীর্ঘ চেহারার, সুদর্শন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার এখন পেরু জাতীয় দলের কোচ। তিনি রিকার্ডো গারেকা (Ricardo Gareca)। একসময়ের সতীর্থ দিয়েগো মারাদোনার (Diego Maradona)মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন। আবার লিওনেল মেসির (Lionel Messi)সপ্তম বার ব্যালন ডি অর জেতার খবরে উচ্ছ্বসিতও। তাঁর দীর্ঘ কোচিং অভিজ্ঞতা, আর্জেন্টিনার ফুটবল এবং বিশ্বকাপে তাঁর পছন্দের দল নিয়ে ঝাঁপি খুললেন সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের প্রতিনিধি কৃশানু মজুমদারের কাছে।
কলকাতায় (নেহেরু কাপ ১৯৮৪) খেলে গিয়েছেন । আপনার গোলে ভারতকে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা। কলকাতার স্মৃতি নিশ্চয় মনে আছে।
গারেকা– কলকাতায় খেলেছি। মনে প্রাণে ভালবেসে ফেলেছিলাম শহরটাকে। এখনও অনেক স্মৃতি মনে রয়েছে। কলকাতায় সহৃদয় মানুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল। তাঁরা খুবই নম্র। দারুণ সেই সব অভিজ্ঞতা।
বছরের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছি। বছরটা কেমন গেল আপনার?
গারেকা- সার্বিক ভাবে যদি বলেন, তাহলে এই বছরটা আমাদের ভালয়-মন্দে কেটেছে। আমাদের মানে পেরুর। বছরের শেষটা ভালই হয়েছে বলতে হবে। ভাল কিছুর প্রত্যাশা নিয়ে এই বছরটা শেষ হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: ভারতীয় ক্রিকেটের বড় পদে বসতে চলেছেন শচীন? বিরাট বিতর্কের মধ্যেই ইঙ্গিত সৌরভের]
আপনি পেরুর ফুটবলের কথা বলছেন। কিন্তু আপনার দেশ আর্জেন্টিনার জন্য সময়টা মোটেও ভাল যায়নি। ফুটবলের রাজপুত্র দিয়েগো মারাদোনা নেই এক বছর হয়ে গেল। ২৫ নভেম্বর তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী গেল।
গারেকা- আর্জেন্টিনার সবার জন্য বড় ক্ষতি। ফুটবল অনুরাগীদের জন্যও খারাপ খবর। দিয়েগো মারাদোনা নেই, এ কথা বিশ্বাসই হয় না। ওঁর মৃত্যু আমাদের সবাইকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে। মারাদোনার সঙ্গে অনেক মুহূর্ত কাটিয়েছি। ব্যক্তিগত মুহূর্তও রয়েছে। ফুটবল মাঠে তো ও অনেক মুহূর্ত রয়েছে। সেই সব সুন্দর সুন্দর সব মুহূর্তগুলো স্মৃতি হয়েই থেকে যাবে। মারাদোনার মৃত্যু গোটা দেশকে জোরাল ধাক্কা দিয়েছে সন্দেহ নেই। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে। তবে ফুটবল মাঠে বছরটা ভালই গিয়েছে আর্জেন্টিনার। খুব ভাল ভাবে শেষ করেছে বছরটা। কোপা আমেরিকা জিতেছে। কাতার বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতাও অর্জন করে ফেলেছে আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ভাল কিছু করতেই পারে। আমার ঘোড়া আর্জেন্টিনাই।
আপনি বলছেন মারাদোনার সঙ্গে অনেক ভাল সময় কাটিয়েছেন। সেগুলো যদি শেয়ার করেন।
গারেকা- বোকা জুনিয়র্স ও আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের হয়ে খেলার সময়ে ওঁর সঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি মাঠে, ড্রেসিং রুমে। তার পরে অবশ্য অনেক দিন মারাদোনার সঙ্গে অবশ্য আমার দেখা হয়নি। গতবারের বিশ্বকাপের সময়ে লটারিতে পেরুর নাম তুলেছিল মারাদোনাই।
লিওনেল মেসির জন্যও তো বছরটা ভালই গিয়েছে। কোপা আমেরিকা জিতেছে, সপ্তম বার ব্যালন ডি অর জিতেছেন। আপনি পেরুর কোচ হলেও আর্জেন্টাইন হিসেবে তো গর্ব বোধ করতেই পারেন।
গারেকা-মেসি সপ্তমবার ব্যালন ডি অর পাওয়ায় সবাই খুশি। আমিও খুবই খুশি। এই মুহূর্তে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় যে মেসি তাতে কোনও সন্দেহই নেই। আমি ওকে দূর থেকেই আলিঙ্গন করছি।
আপনি পেরুর জাতীয় দলের কোচ। নিজের দেশের বিরুদ্ধে খেলা হলে কীভাবে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করেন?
গারেকা- আমি পেশাদার কোচ। আমার উপরে অনেক দায়িত্ব। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে যখন পেরু খেলে, তখন কোচ হিসেবে আমার দায়িত্ব থাকে। অনেক বড় দায়িত্ব। আমি তো সবসময়েই চাইব পেরু যেন ভাল খেলে।
Diego Maradona, Ariel Krasousky, Ricardo Gareca,
Roberto Passucci, Oscar Ruggeri (Boca Juniors)
in Japan vs Boca Juniors 0-1 at Tokyo in Japan
on 24 Jan 1982
pic.twitter.com/Tr9hEgPuxy— tphoto (@tphoto2005) January 18, 2020
আর্জেন্টিনায় কোচ নিয়ে কত কথা শোনা যায়। মেসির ইয়েসম্যান হয়ে চলতে হবে, এমন গুঞ্জনও শোনা যায়। আপনি এতদিনের অভিজ্ঞ কোচ। আপনি তো পেরু না এসে দেশের দায়িত্বই নিতে পারতেন?
গারেকা- সাত বছর হয়ে গেল আমি পেরুকে কোচিং করাচ্ছি। পেরুর কোচ হিসেবে ভাল মুহূর্ত যেমন রয়েছে, তেমনই কঠিন সময়ও কাটাতে হয়েছে আমাকে। পেরুর ফুটবল ঠিক পথেই এগোচ্ছে। তবে এখনও অনেক উন্নতি দরকার আছে বলেই মনে হয়। আপনি আর্জেন্টিনার কোচ হওয়ার কথা বললেন, সেই প্রসঙ্গে বলি, ওদের তো কোচ আছেই। খুব ভাল কাজও করছে। আমি আমার কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট। পেরুর মানুষজন আমাকে খুবই সমাদর করেন। আমার সঙ্গে সবাই খুব ভাল ব্যবহার করেন।
এগিয়ে আসছে বিশ্বকাপ। পেরু তো এখনও পৌঁছয়নি বিশ্বকাপের মূলপর্বে। আপনার ফেভারিট কোন কোন দেশ?
গারেকা- বিশ্বকাপ জেতার জন্য আমার কোনও প্রিয় দল নেই। আমি মনে প্রাণে চাই, আর্জেন্টিনা জিতুক। মূলপর্বে খেলার সুযোগ এখনও রয়েছে পেরুর। কোয়ালিফাই করার জন্য এখনো আমার কোনো প্রিয় দল নেই, কিন্তু আমি অবশ্যই চাই যে আর্জেন্টিনা জিতবে। পেরুর সুযোগ রয়েছে। কোয়ালিফাই করার জন্য চারটে ম্যাচ বাকি আছে। অবশ্য অনেক দলেরও এখনও মূলপর্বে খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের সামনে অন্য কোনও উপায় নেই। আমাদের জিততেই হবে। কারও উপর নির্ভর করে থাকলে চলবে না।
[আরও পড়ুন: ‘দাদার পাশে দেশ’, বিরাট বিতর্কে এবার নেটদুনিয়ায় সৌরভকে সমর্থনের বন্যা]
Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ