কিদাম্বি শ্রীকান্ত ও লক্ষ্য সেন (ছবি-ব্যাডমিন্টন ফটো টুইটার)
অভিষেক সেনগুপ্ত
প্রথম গেম: লক্ষ্যর জয় ২১-১৭
দ্বিতীয় গেম: কিদাম্বির জয় ২১-১৪
তৃতীয় গেম: কিদাম্বির জয় ২১-১৭
নেট বল আধিপত্য, কোণাকুণি স্ম্যাশ, প্রতিপক্ষকে থার্ড কোর্টে ব্যস্ত রাখা, পিছিয়ে পড়লে, এমনকি গেম হারালেও ঘাবড়ে না যাওয়া, দুরন্ত রিফ্লেক্স— এ সব নিয়েই তো আলোচনা হওয়ার কথা! হল না কিদাম্বি শ্রীকান্তের জন্য। লক্ষ্য সেনকে ২-১ গেমে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠে ইতিহাস তৈরি করলেন তিনি। এর আগে ভারতের কোনও ছেলে ফাইনালে পৌঁছতে পারেনি।
১৯৮৩ সালে প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন প্রকাশ পাড়ুকোণ। ৩৬ বছর পর, ২০১৯ সালে ফের কোনও ভারতীয় হিসেবে বিশ্ব মিট থেকে সাই প্রণীত ব্রোঞ্জ উপহার দিয়েছিলেন দেশকে। কিন্তু অতীতের যাবতীয় সাফল্য ছাপিয়ে গেলেন লক্ষ্য সেন। সেমিফাইনালে পৌঁছে প্রকাশ, প্রণীতকে আগেই ছুঁয়েছিলেন লক্ষ্য এবং শ্রীকান্ত। লক্ষ্যকে হারিয়ে এ বার ইতিহাস গড়ে ফেললেন। ফাইনালে পৌঁছে।
অভিজ্ঞতা অনেক সময় ফারাক গড়ে দেয়। কিন্তু তারুণ্য চমকে দিতে পারে যে কোনও সময়। কোর্টে লক্ষ্যকে দেখে কিন্তু অন্য রকম লাগছিল। হারলেও যথেষ্ট লড়াই করেছেন তিনি। প্রথমবার বিশ্ব মিটে নেমে ব্রোঞ্জ পেলেন। তাও কম কি। ১৭-২১, ২১-১৪, ২১-১৭ জেতা কিদাম্বি আবার রুপো নিশ্চিত করে ফেললেন। এ বার তাঁর লক্ষ্য সোনা জয়।
প্রথম গেম থেকে অবশ্য আশ্চর্য পরিণত বোধ দেখাচ্ছিলেন ২০ বছরের লক্ষ্য। বিশ্বের প্রাক্তন এক নম্বর শাটলারের বিরুদ্ধে নেমেও ধৈর্য হারাননি। অতি সাহসী হতে গিয়ে মুঠো আলগা করেননি। প্রথম গেমে ৬-৬ থেকে লিড নিয়েছিলেন লক্ষ্য। প্রথম গেমের ব্রেকেই ১১-৮ করে ফেলেছিলেন। প্লেসিংয়ে খুচরো পয়েন্ট তুললেন শ্রীকান্তের বিরুদ্ধে। কিন্তু ১৫-১১ পয়েন্টে এগিয়ে যাওয়ার পর পিছনে তাকানো উচিত ছিল না লক্ষ্যর। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ালেন কিদাম্বি শ্রীকান্ত। তাঁকে যদি স্ম্যাশের সুযোগ না দিতেন লক্ষ্য, প্রথম গেমটা কঠিন হত না। ১৬-১৬ থেকে আবার পরিস্থিতি পাল্টে দিলেন। শ্রীকান্তের ভুলের সুযোগ নিয়ে ২১-১৭ জিতে নিলেন প্রথম গেমটা।
দ্বিতীয় গেমে শুরুটা ভালোই করেছিলেন লক্ষ্য। কিন্তু ৯-৯ থেকে মুঠো আলগা করে ফেলেন। সেখান থেকে খেলায় ফেরেন শ্রীকান্ত। অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে টানা ব্যাক কোর্টে খেলান লক্ষ্যকে। আর তা থেকেই এল পর পর সাতটা পয়েন্ট। ৪-৮ থেকে ১১-৯ করে প্রতিপক্ষর চাপ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বিশ্বের ১২ নম্বর শাটলার। দ্বিতীয় যতটা সম্ভব র্যালিতে জোর দিয়েছিলেন কিদাম্বি। যাতে ভুল করেন লক্ষ্য। তা-ই হল। ২১-১৪ জিতে ম্যাচে দুরন্ত ফিরে আসেন শ্রীকান্ত।
সেমিফাইনালে ওঠার পথে দুটো তিন গেমের ম্যাচ জিতেছেন লক্ষ্য। শ্রীকান্ত একটা। লম্বা ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন তরুণ ভারতীয় শাটলার। ৩৪ শটের র্যালি থেকে যে ভাবে পয়েন্ট তুলে ৮-৭ করলেন লক্ষ্য, কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। তৃতীয় গেমে ১১-৮ সাইড বদলানোর সময়ই আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল তাঁকে। কিন্তু ১৩-১২-তে করা আনফোর্সড এরর ম্যাচ হারের টার্নিং হতে পারত। সেখান থেকে দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়ে ১৫-১৩ করেছিলেন। অভিজ্ঞ কিদাম্বিও পাল্টা লড়াই চালিয়ে ১৫-১৫ করেন।
তৃতীয় গেমের শেষ পর্বটা যে কোনো বলিউড থ্রিলারকে হার মানাবে। ম্যাচে ফেরা, হারিয়ে যাওয়া, আবার ম্যাচে ফেরা। লক্ষ্য-কিদাম্বি যেন রোমাঞ্চকর সেমিফাইনাল খেলতে নেমেছিলেন। ১৮-১৬ থেকে ৩ পয়েন্টের লিড নেওয়ার পরও লক্ষ্য হার মানেননি। ১৭-১৯ করেন। কিন্তু তাঁর ভুলেই ২০-১৭ করে ফেলেন শ্রীকান্ত।
২০ বছরের লক্ষ্যর লক্ষ্যপূরণ হল না। ২৮ বছরের কিদাম্বি যদি সোনা জেতেন, তা হলে বিশ্ব মিটে ইতিহাস করে ফেলবেন ভারতীয় শাটলার। সেই স্বপ্ন দেখা শুরু হয়ে গিয়েছে।