কিয়ান নাসিরি।
ছবি: টুইটার
ফাতোরদা: প্রায় বছর তিনেক আগের কথা। জুনিয়র স্তরে দারুণ খেলে সকলের নজর কাড়ছেন। জামশিদ (Jamshid Nassiri) পুত্রকে দেখেই মনে ধরে জর্জ টেলিগ্রাফের কোচ রঞ্জন ভট্টাচার্যের। ঠিক করেছেন, কিয়ানকে জর্জে সই করাবেন। জামশিদ পুত্রও মনস্থির করে ফেলেছেন। কিন্তু মোহনবাগানের (Mohun Bagan) জুনিয়র দলের তত্কালীন কোচ নাসিম আলি ছাড়লেন না কিয়ানকে। এরপরই বাংলার অনূর্ধ্ব-১৯ এক ফুটবল টুর্নামেন্টে হইচই ফেলে দেন জামশিদ পুত্র। ভুরি ভুরি গোল করার পরই মোহনবাগানের সিনিয়র দলের কোচ কিবু ভিকুনার নজরে আসেন কিয়ান (Kiyaan Nassiri)। ট্রায়ালে দেখে বেশ পছন্দ হয় বাগানের স্প্যানিশ কোচের। এরপরই কিয়ানকে সই করায় মোহনবাগান। ট্রাউয়ের বিরুদ্ধে সবুজ-মেরুন জার্সিতে অভিষেক হয়। বাগানের হয়ে আই লিগও জেতেন জামশিদ পুত্র। আই লিগজয়ী দল থেকে তিন ফুটবলারকে দলে রাখে এটিকে মোহনবাগান। শেখ সাহিল, শুভ ঘোষের সঙ্গে ছিলেন কিয়ান নাসিরি। এটিকে মোহনবাগানের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেন এএফসি কাপে। আল নাসাফের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে ০-৬ গোলে পর্যুদস্ত হয় সবুজ-মেরুন। হাবাসের দলে অধিকাংশ সময় রিজার্ভ বেঞ্চেই ঠাঁই হয় কিয়ানের। এত কিছুর মধ্যেও কখনও ফোকাস হারাননি। সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। শনিবার রাতই সেই সুযোগ এনে দিল কিয়ানের সামনে। দল ০-১ পিছিয়ে। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটের জন্য রয় কৃষ্ণাকে নামানোর ঝুঁকি নেননি এটিকে মোহনবাগান কোচ হুয়ান ফেরান্দো। গোল পরিশোধের লক্ষ্যে ৬১ মিনিটে দীপ টাঙরির জায়গায় অনভিজ্ঞ কিয়ানকে নামান ফেরান্দো।
মাঠে নামার ৫ মিনিটের মধ্যেই প্রথম গোল। দলকে সমতায় ফেরানোর পাশাপাশি ডার্বি অভিষেকে গোল। সবাই যখন ধরে নিয়েছে ম্যাচ ১-১ শেষ হতে চলেছে, তখনই ফের কিয়ান ম্যাজিক। ইনজুরি টাইমে ২ মিনিটের ব্যবধানে পরপর ২টো গোল। ডার্বি অভিষেকেই হ্যাটট্রিক। ৩০ মিনিট মাঠে ছিলেন। তার মধ্যেই ৩টে গোল। বড় ম্যাচে এমন কীর্তি আর কোনও ফুটবলারের দখলে নেই। আইএসএলের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে হ্যাটট্রিকের নজির ২১ বছরের কিয়ানের। বড় ম্যাচ জিতে কিয়ান বলছেন, ‘ডার্বিতে নেমেই হ্যাটট্রিক করেছি। এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো। বড় ম্যাচে গোল করার স্বপ্ন সবারই থাকে। আমারও ছিল। স্ট্রাইকার হিসেবে আমার লক্ষ্য গোল করা। ইতিহাস নিয়ে ভাবতে চাই না। আরও বেশি সময় মাঠে থাকাই আমার লক্ষ্য। কোচের কাছে কৃতজ্ঞ, উনি আমার উপর ভরসা রেখেছে। আমাদের দল খুব শক্তিশালী। আমার মতো জুনিয়র ফুটবলারের সুযোগ পাওয়া ভীষণ কঠিন। তাই আরও পরিশ্রম করে দলে জায়গা পেতে চাই। বড় ম্যাচে গোল করেই থেমে থাকতে চাই না।’
তিনটে গোলের মধ্যে দ্বিতীয়টাই সেরা। জানিয়ে দিলেন জামশিদ পুত্র। বড় ম্যাচ জেতার পর আলাদা ভাবে কোনও সেলিব্রেশন হয়নি। বাবার সঙ্গে আলাদা করে কোনও কথা হয়নি। জামশিদ নাসিরিরও ডার্বিতে গোল রয়েছে। বড় ম্যাচে বাপ-ছেলের গোল ভারতীয় ফুটবলে এক বিরল নজির। কিয়ান বলেন, ‘বাবার খেলা দেখিনি। শুনেছি বড় ম্যাচে গোল আছে। বাবার সঙ্গে মাঠে প্র্যাকটিস করেছি। আমার কোনও লক্ষ্যে বাবা বাধা দেয়নি। শুধু বলত, পরিশ্রমের কোনও বিকল্প হয় না। ম্যাচের আগে বা শিবিরে থাকার সময় ফুটবল নিয়ে বাবার সঙ্গে কোনও কথা হয় না।’ কোচ হিসেবে হুয়ান ফেরান্দো, আন্তোনিও হাবাস ও টিয়েন ল-কে কৃতজ্ঞতা জানান বাগানের নয়া সুপারস্টার। গোটা দলকে নিজের হ্যাটট্রিক উত্সর্গ করেন ২১ বছরের ফরোয়ার্ড।
এখানেই থেমে থাকতে চান না। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপানোই লক্ষ্য মেসিভক্তের। দেশের হয়ে খেলে দেশকে গর্বিত করতে চান কিয়ান। বাবা জামশিদ কয়েক যুগ আগে ইরান থেকে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছিলেন। মজিদ, জামশিদ, খাবাজি- ইরানের ৩ ফুটবলারকে সই করিয়ে চমক দেয় ইস্টবেঙ্গল। ময়দানে মজিদ-জামশিদের খেলার স্মৃতি এখনও অমর। ইরানীয় জামশিদ ভালোবেসে ফেলেন এই শহরকে। চিরতরের জন্য থেকে যান কলকাতাতেই। আর সেই জামশিদের ছেলে কিয়ান ইরানীয় হলেও, আপাদমস্তক তিনি একজন ভারতীয়। ভারতের নাগরিকত্ব রয়েছে তাঁর। তাই দেশের জার্সিতে খেলে তেরঙ্গা ওড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন কিয়ান নাসিরি।
আরও পড়ুন: ISL 2021-22: ‘আমার আক্ষেপ মেটাল কিয়ান’: জামশিদ নাসিরি