Cricket: বলে থুতু নিষিদ্ধ করা নিয়ে কী প্রতিক্রিয়া বল প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোর? (ছবি-টুইটার)
নয়াদিল্লি: যে এমসিসিকে (MCC) ধরা হয় ক্রিকেটের ধারক-বাহক, সেই এমসিসির নতুন কয়েকটি নিয়মে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না বহু ক্রিকেটাররা। বল প্রস্তুতকারক সংস্থা গুলোও এ ব্যাপারে নিজেদের মতামত জানাতে শুরু করেছে। ১ অক্টোবর থেকে নতুন নিয়ম বলবৎ হবে। এমসিসি যে ৯টি নতুন নিয়ম এনেছে তাতে রয়েছে থুতু দিয়ে বল পালিশ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা। ১ অক্টোবর থেকে বলে আর থুতু ব্যবহার করতে পারবেন না ক্রিকেটাররা। বল পালিশ করার জন্য় যদি থুতু ব্যবহার করেন কোনও ক্রিকেটার, তা অপরাধের পর্যায়ে পড়বে। তবে ঘাম লাগিয়ে বল পালিশ করা যাবে।
যুগ যুগ ধরে ক্রিকেটাররা বলের একটা দিক চকচকে রাখতে থুতু ও ঘাম ব্যবহার করে আসছে। এতে পুরনো বলের একটা দিকের পালিশ ধরে রাখা যায়। তাতে পুরনো বলেও বোলাররা সুইং পান। এবং ব্যাটারদের আউট করতে সুবিধা হয়। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে বলে থুতু ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে পৃথিবী। তা সত্ত্বেও এমসিসি তাদের নিয়ম পাল্টাতে চাইছে না। তাদের গবেষণা বলছে, বলে থুতু লাগানোর ফলে সুইং করানোর ক্ষেত্রে তেমন কোনও বাড়তি সুবিধা মেলে না। তাই স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখেই থুতু ব্যবহার পাকাপাকি ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হল। এমসিসির নয়া নিয়মাবলী কোনও ক্রিকেটার স্বাচ্ছন্দে মেনে নিচ্ছেন তো কেউ আবার তার বিরোধিতাও করছেন। এই পরিস্থিতিতে বল প্রস্তুতকারক সংস্থার তরফ থেকে জানা গেল তাদের প্রতিক্রিয়া।
ব্রিটিশ ক্রিকেট বলস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর দিলীপ জাজোদিয়া এবং এসজি বলের ডিরেক্টর পরস আনন্দ এই বলে থুতু লাগানো বাতিলের ব্যপারে তাঁদের মতামত জানিয়েছেন। জাজোদিয়া বলেন, “আমি আগেও বলেছি ক্রিকেট বলে থুতু লাগানোতে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়াটা খুব একটা প্রভাব ফেলবে না, যদিও বোলাররা বলে থাকেন, যে তাঁরা বল সুইং করাতে পারেন না থুতু ব্যবহার না করলে। যাই হোক স্বাস্থ্যের দিকটা মাথায় রেখে মানুষ এটা মেনে নিয়েছে। এখন তারা বলছে যে (থুতু ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা) খুব বেশি সমস্যা সৃষ্টি করেনি, তাই তাদের শুধু ঘাম ব্যবহার দেওয়া উচিত, থুতু নয়। এবং থুতু নিষিদ্ধ করার আরও একটি কারণ হল, লোকেরা মিষ্টি চুষে এবং থুতুর সঙ্গে তাই চিনি যুক্ত হয়, সেই কারণে এক ধরণের সেলুলোজ পদার্থ যা স্পষ্টতই চামড়ার (বলের) ছিদ্রগুলিতে ভিজে যায় যখন বলটা ঘষা হয়, তখন এটা চকচকে করতে সাহায্য করতে পারে। তাই অন্যায্য সুবিধা নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কারণ আপনি কাউকে চুইংগাম থেকে আটকাতে পারবেন না বা মিষ্টি চোষা থেকেও আটকানো যাবে না।”
এসজি বলের ডিরেক্টর পরস আনন্দ বলেন, “নিষেধাজ্ঞা আগে থেকেই ছিল। ২০২০ সালে যখন ক্রিকেট আবার শুরু হয় তখন এই জিনিসটি (থুতু নিষেধাজ্ঞা) নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, সেই সময়ে এটা আমাদের জন্য একটা নতুন জিনিস ছিল। ওই সময়ে আমরা কিছু গবেষণা এবং উন্নয়ন করেছি। যে এটা কীভাবে খেলাকে প্রভাবিত করবে। থুতুর বিকল্প কী, কেউ কেউ বলকে চকচকে করার জন্য মোমের ব্যবহারও করা শুরু করেছিল। কিন্তু গত দুই বছরে যেটা হয়েছে তা হল, লাল বল আর সাদা বলের ক্রিকেট দুটোতেই থুতুর নিষেধাজ্ঞাতে এখনও খুব একটা প্রভাব ফেলেনি।”
পাশাপাশি জাজোদিয়া তুলে ধরেন থুতুর বিকল্প হিসেবে ঘাম যথেষ্ট ভালো ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, “ঘামও থুতুর মতো একই কাজ করে। ঘাম থেকে মূলত শরীর স্বাভাবিক গ্রীস বের হয়, উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি এক সপ্তাহ স্নান না করেন তবে আপনার ত্বক খুব চর্বিযুক্ত হবে, তার মানে আপনার শরীরে ইতিমধ্যেই গ্রীস রয়েছে। সুতরাং আপনি যদি বিশেষভাবে গরম আবহাওয়াযতে খেলাধুলা করছেন, যেখানে ক্রিকেট খেলা উচিত, যেমন আপনি দৌঁড়াচ্ছেন এবং আপনি ঘামছেন, তা হলে এটি (গ্রীস) ঘামের সাথে মিশে যায় এবং আপনি যদি আপনার কপাল ঘষেন বা আপনার ঘাড়ের পিছনে ঘষেন, এবং আপনার হাতে যে স্যাঁতসেঁতে ভাবটা আসবে তাতে গ্রীস থাকবে, প্রাকৃতিক চর্বি এবং জল, যা ঘাম, যেটা আপনি চামড়ার (বলের) উপর লাগান, ঘামটা বলটাকে ভিজিয়ে রাখে এবং আপনি আপনার ট্রাউজারে বল ঘষার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গ্রীস থাকবে। এবং এটি জুতোর পালিশের মতো কাজ করে, এটি পৃষ্ঠকে উজ্জ্বল করে। তবে এটি থুতুর মতো ভালো না হলেও বোলারদের সাহায্য করার জন্য এটি অবশ্যই যথেষ্ট ভালো হবে। এবং এখন আমি মনে করি বোলাররা ঘাম ব্যবহারে এখন অভ্যস্ত, তাই আমি মনে করি না এটি (থুতু নিষেধাজ্ঞা) নিয়ে খুব বেশি সমস্যা হওয়া উচিত।”
জাজোদিয়ার মতো আনন্দও বলেন, “এটা কখনওই মনে হয়নি যে বোলাররা বল রিভার্স সুইং করতে পারেনি বা তারা বলকে চকচকে করতে পারছে না। তাই শুধু ঘাম ব্যবহার করেও বোলাররা তাদের কাজটি করতে পারছে। বোলিং দলের জন্য বল তৈরি করতে হয়তো একটু বেশি সময় লাগতে পারে। বল প্রস্তুত করার সময় এক দিকের চেয়ে অন্য এক দিক বেশি উজ্জ্বল করতে পারেন তারা। দলে একজন না একজন খেলোয়াড় আছে যে প্রচুর ঘামে। প্রথম একাদশে সব সময় একজন খেলোয়াড় থাকে যে প্রচুর ঘামে এবং তাকে এই বল পালিশের কাজটা দেওয়া উচিত। ঘাম দিয়ে বল পালিশ করাতে তা হলে কোনও সমস্যা থাকে না।”