আয়ুষ বাদোনি।
ছবি: টুইটার
মুম্বই: পারফরম্যান্সের জন্য প্রত্যেকেই এক একটা মঞ্চ বেছে নেন। নিজেকে প্রতিষ্টার জন্য আইপিএলই (IPL 2022) উঠতি প্রজন্মের কাছে আদর্শ মঞ্চ। সোমবার রাত তেমনই এক ক্রিকেটারের উত্থান দেখল। আয়ুষ বাদোনি (Ayush Badoni)। লখনউ সুপারজায়ান্টসের (Lucknow Super Giants) হয়ে অভিষেকেই কামাল। দল হারলেও আয়ুষের পারফরম্যান্স ঈর্ষণীয় হয়ে থাকল। মহম্মদ সামির আগুনে পেসে ছারখার লোকেশ রাহুলদের টপ অর্ডার। দলের স্কোরবোর্ড ১০০ পেরোবে কিনা সন্দেহ। সেই অবস্থায় দীপক হুডার সঙ্গে জুটি বেঁধে দলের হাল ধরলেন নবাগত আয়ুষ। আগুনে পেসের বদলা নিলেন পাল্টা মারে। মহম্মদ সামি, লকি ফার্গুসন, রশিদ খান, হার্দিক পান্ডিয়া, বরুন অ্যারোনদের সামলালেন দক্ষতার সঙ্গে। দেখে বোঝার উপায় নেই, প্রথম আইপিএল। আইপিএল অভিষেকে ছয় নম্বরে নেমে ৫০ এর ওপর রান করা প্রথম ক্রিকেটার হলেন আয়ুষ বদোনি। ম্যাচের পর তরুণ ক্রিকেটারের প্রশংসায় দলনায়ক লোকেশ রাহুলও। তিনি বলেন, ‘ও (বদোনি) আমাদের জন্য বেবি এবি। প্রথম দিন থেকেই ও অসাধারণ। এত অল্প বয়সেও ও কিন্তু ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে শট খেলতে পারে। ওর জন্য আমি খুব খুশি, কারণ ও সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে। আমাদের ৪টে উইকেট পড়ার পর নেমেছিল ও। ফলে ওর কাছে পরিস্থিতিটা খুব একটা সহজ ছিল না। কিন্তু চাপের মধ্যেও ও ভালো করেছে এবং আশা করি, ও এভাবেই এগিয়ে যেতে পারবে।’
কিন্তু কে এই আয়ুষ বাদোনি? ঋষভ পন্থদের কোচ তারক সিনহার কোচিংয়ে আত্মপ্রকাশ এই ক্রিকেটারের। অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে ভারতের হয়ে খেলেছেন। ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১৮৫ রান করেন আয়ুষ। এশিয়া কাপের ফাইনালে ২৮ বলে ৫২ রানের ধুন্ধুমার ইনিংস খেলেছিলেন। কিন্তু এ সবের পরেও দিল্লির হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাননি। দিল্লির রঞ্জি ট্রফি আর বিজয় হাজারে ট্রফিতে ঠাঁই হয়নি আয়ুষের। তবে নজর এড়ায়নি লখনউয়ের মেন্টর গৌতম গম্ভীরের। আইপিএল নিলামেই তাই ভারতের বেবি এবিকে দলে নেয় সঞ্জীব গোয়েঙ্কার দল। আর আইপিএল অভিষেকেই বুঝিয়ে দিলেন, তাঁকে নিয়ে ভুল করেনি লখনউ।
ম্যাচের পর বাদোনি বলেন, ‘গত ৩ বছর আমি নিলামে অবিক্রিত ছিলাম। তাই এ বারের নিলামে যে জায়গা পাব ভাবিনি। দুটো, তিনটে দলে ট্রায়াল দিয়েছিলাম। কিন্তু নিলামে যে সুযোগ পাব ভাবিনি। লখনউয়ের কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ। এখন আইপিএলে পারফর্ম করে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে।’
গত বছর মুম্বইয়ে সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টিতে ৫টা ম্যাচ খেলেছিলেন। তবে একটা ম্যাচেই ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেই ম্যাচে ৮ রান করেছিলেন। ৩ বছর ধরে কম লড়াই চালাতে হয়নি আয়ুষকে। ডিভিলিয়ার্সের মতো ৩৬০ ডিগ্রি শট মারতে অনেক অনুশীলন করেছেন। আইপিএলের মঞ্চে অবশেষে সাফল্য পেয়েছেন।
আয়ুষের ছোটবেলার কোচ বলরাজ কুমার হাসতে হাসতে বলেন, ‘মাত্র ৯ বছর বয়স থেকেই এ রকম শট মারতে পারত ও।’ অনূর্ধ্ব-১৪ ক্রিকেটে তিনটে শতরান ছিল আয়ুষের। তা সত্ত্বেও অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রিকেটে সুযোগ পাননি। একটা সময় হতাশায় ভেঙে পড়েছিল আয়ুষ। এরপর তাঁকে ডাবল সেঞ্চুরির টার্গেট দেন কোচ বলরাজ। রোহতকে হরিয়ানার বিরুদ্ধে সেই লক্ষ্যে সফল হন আয়ুষ। ঢাকায় অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে এক ওভারে চার ছক্কা মেরে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। বলরাজ আরও বলেন, ‘খুব একটা কথা বলতে ভালোবাসে না আয়ুষ। তারকও আমাকে বারবার সেই কথা বলেছে। ওর কাকিমা আমাকে জিজ্ঞাসা করে ওর চুপচাপ থাকার কারণ। কিন্তু ও এ রকমই। নিজের ভাবনাতেই থাকে সব সময়। মুখে কথা না বললেও, ওর ব্যাট খুবই কথা বলে।’
আরও পড়ুন: IPL 2022: লখনউয়ের অধিনায়কের চোখে দলের কোন তরুণ ‘বেবি এবি’ জানেন?