শাহবাজ ও আকাশদীপ।
ছবি: টুইটার
কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়
মহম্মদ সামিকে কি ভূমিপুত্র বলা চলে? না। আদতে বাঙালি না হলেও সামিকে অনেক আগেই আপন করে নিয়েছে বাংলা। এই রাজ্য থেকেই উত্থান। এই রাজ্যের হয়ে জাতীয় টিমে খেলা। সামির কেরিয়ারে উত্তরপ্রদেশের থেকে অনেক বেশি অবদান বাংলার। হয়তো কয়েক বছর পর আর দু’জনকে নিয়ে বাংলা একই কথা বলবে। বাংলার দুই জোড়া ফলার কাছেই আইপিএলের ম্যাচে হারতে হল কলকাতা নাইট রাইডার্সকে। বাংলার রঞ্জি টিমে যদি চোখ রাখা হয়, এমনই ভিন রাজ্যের ক্রিকেটারদের ভিড়। যাঁরা টিমকে টানছেন। বাংলাকে এগিয়ে দিচ্ছেন সর্বভারতীয় টুর্নামেন্টগুলোয়। আর সেই টিমের স্তম্ভ শাহবাজ আহমেদ (Shahbaz Ahmed) ও আকাশদীপ সিং (Akashdeep)। শাহরুখ খানের কলকাতা টিমে কেন বাঙালি ক্রিকেটারদের নেয় না? এই বিতর্ক আরও একবার উস্কে দিল শাহবাজ-আকাশের পারফরম্যান্স।
শাহবাজ গত ২ বছর ধরেই আরসিবির জার্সিতে প্রমাণ করেছেন নিজেকে। মঙ্গলবার নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে তাঁর ২০ বলে ২৭-এর সুবাদে জয় ছিনিয়ে নিল ব্যাঙ্গালোর। আকাশদীপ গত বছর নেট বোলার হিসেবে ছিলেন ব্যাঙ্গালোরের ক্যাম্পে। সেখান থেকে অবিশ্বাস্য উত্তরণ তাঁর। এ বারের নিলামে তাই বাংলার পেসারকে নিতে দ্বিধা করেনি আরসিবি (Royal Challengers Bangalore)। তার সুফলও মিলল। কেকেআরের বিরুদ্ধে ৪৫ রানে ৩ উইকেট। ভেঙ্কটেশ আইয়ার, নীতীশ রানার উত্তাপ ছড়ানোর আগেই ড্রেসিংরুমে। শাহবাজ ও আকাশদীপ— পবাংলার এই দুই মিলেই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিল শ্রেয়স আইয়ারের টিমকে।
নাইট রাইডার্সকে হারানোর পর মুম্বই থেকে টিভি নাইন বাংলাকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে আকাশদীপ ফোনে বলে দিলেন, ‘আরসিবি টিমে আমাকে আর শাহবাজকে সবাই বাংলার শের বলে ডাকে। মাঠে নামলে বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে নামতেই হত। বাংলার মান যে রাখতে হবে! সিরাজ ভাইও বলেছে, শুরুতে তোর মতো এত আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামতে পারতাম না। ভয় লাগত।’
এর কারণ কী? আকাশদীপের উত্তর, ‘যে দলে ফাফ ডু প্লেসির মতো অধিনায়ক আর বিরাটভাই থাকে, তারা ভয়ডরহীন ক্রিকেটই খেলে। নিজের উপর আত্মবিশ্বাস ছিল। ডু প্লেসি আর বিরাট সবসময় আমাদের সাহস দেয়। মোটিভেট করে। মার খেলেও উজ্জীবিত করে।’
৩ উইকেট নেওয়ার পর কি ইকোনমি রেট ঠিক রাখার নির্দেশ এসেছে? আকাশদীপের ঝটিতি উত্তর, ‘টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রান হজম করা স্বাভাবিক। কিছু জায়গায় ফিল্ডিংয়ের ভুলে বেশি রান দিয়েছি। তবে উইকেট তোলাটাই ছিল আসল উদ্দেশ্য। ডু প্লেসির নির্দেশই ছিল, ওদের উইকেট ভাঙতে হবে।’ খুশি যেন উপচে পড়ছিল আরব সাগরের পাড় থেকে।
শাহবাজের বিধ্বংসী ইনিংসটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। শাহবাজ বললেন, ‘উইকেটে ঘাস থাকায় বল মুভ করছিল। শুরুতে ৩টে উইকেট পড়ে যাওয়ায় চাপ বেড়ে গিয়েছিল। ব্যাটিং গভীরতা বাড়াতে পরের দিকে ব্যাট করতে যাই। ঠিকই করেছিলাম, শুরু থেকে চালিয়ে খেলব। আস্কিং রেট তখন অনেক উপরে। শুরুতেই রাসেলের ওভারটা টার্গেট করি। ওই ওভারে দুটো ছয় মারতে চাপ কমে গিয়েছিল।’
বরুণ চক্রবর্তীর ওভারে একটা ছয় মারার পরের বলে স্টেপ আউট করে উইকেট দেন শাহবাজ। ম্যাচের পর তাঁকে টিপসও দিয়েছেন বিরাট। ঠিক কী বলেছেন আরসিবির প্রাক্তন অধিনায়ক? ‘বিরাট ভাই বলছে, ম্যাচটা শেষ করে আসা উচিত ছিল আমার। ও আমাকে পারফেক্ট ফিনিশারের ভূমিকায় আমাকে দেখতে চাইছে। একটা ভুলের জন্যই আউট হয়েছি। শেষ পর্যন্ত থেকে ম্যাচ জেতানোর চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে।’
ভেঙ্কটেশ আইয়ার, নীতীশ রানা, উমেশ যাদব— কোন উইকেটটা সেরা? আকাশদীপের জবাব, ‘৩টে উইকেটই সেরা। ভেঙ্কটেশ চালিয়ে খেলছিল। রানাও একটা চার, একটা ছয় মেরেছিল। ওদের দ্রুত ফেরাতে হত। আর উমেশ? শেষ উইকেটে কেকেআর ২৫ রানের পার্টনারশিপ করে ফেলেছিল। না থামাতে পারলে রানটা ১৩৫-১৪০ হয়ে যেত। আর সেটা হলে কিন্তু আমাদের কাজটা কঠিন হত।’ ম্যাচের পর আকাশের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের প্রশংসা করেন আরসিবির ডিরেক্টর মাইক হেসন।
প্রত্যেক উঠতি ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন আইপিএলে খেলা। বাংলার ক্রিকেটার হওয়া সত্ত্বেও কেকেআর দলে নিতে আগ্রহ দেখায়নি। তাই কি শুরু থেকে বাড়তি জেদ? বিতর্কে না ঢুকেও আকাশের উত্তর, ‘আমাদের কথা ছেড়ে দিন, কেকেআর তো বাংলার বড় ক্রিকেটারদেরও টিমে নেয় না। তবে, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে যে কোনও দলে খেলাই বড় ব্যাপার।’
মঙ্গলবার রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ম্যাচ আরসিবির। তার আগেই দলে যোগ দেবেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। টিমের শক্তি বাড়বে। তেমনই বাড়বে চ্যালেঞ্জও। প্রথম এগারোয় টিকে থাকার। বাংলার দুই ক্রিকেটার শাহবাজ আর আকাশদীপও কিন্তু বিরাটদের প্রথম এগারো থেকে হারিয়ে যেতে চান না।
আরও পড়ুন: IPL 2022: ধোনির সঙ্গে কার তুলনা করলেন ফাফ?