যুবভারতীতে খেলার অভিজ্ঞতাই হাতিয়ার, AFC কাপে নামার আগে সবুজ-মেরুনকে হুঁশিয়ারি ব্রাজিলের রাফায়েলের


কৃশানু মজুমদার: বাংলাদেশ আমাকে ভারতের স্মৃতি ফিরিয়ে দেয়। আবেগপ্রবণ হয়ে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা আবাহনীর (Dhaka Abahani) হয়ে কলকাতায় খেলতে আসা ব্রাজিলীয় ফুটবলার রাফায়েল আগুস্তো (Raphael Augusto)। আইএসএলে দাপটের সঙ্গে খেলেছেন তিনি। চেন্নাইয়িনের হয়ে ফুল ফুটিয়েছেন। খেলেছেন বেঙ্গালুরুতেও। সেই রাফায়েল আগুস্তো এখন পদ্মাপারের ক্লাবে। চলতি মাসের ১৯ তারিখ এএফসি কাপের দ্বিতীয় প্লে অফে এটিকে মোহনবাগানের (ATK Mohun Bagan) বিরুদ্ধে খেলবেন তিনি। নামবেন যুবভারতীতে।

২০১৫ ও ২০১৮ সালের আইএসএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইয়িন। প্রথম বার খেলতে নেমেই নজর কেড়ে নিয়েছিলেন রাফায়েল। চোটের লাল চোখ দেখে ২০১৫ সালের ফাইনালে চেন্নাইয়িনের হয়ে আর নামা হয়নি তাঁর। কিন্তু ২০১৮ সালের আইএসএল ফাইনালে চেন্নাইয়িনের হয়ে বেঙ্গালুরুর জালে বল জড়িয়েছিলেন তিনি। পরে বেঙ্গালুরুর হয়েও খেলেন তিনি। সেই রাফায়েল আগুস্তো সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে বললেন, ”ফুটবল সুন্দর সুন্দর সব মুহূর্ত উপহার দেয়। আমার ফুটবল জীবনের সেরা সব মুহূর্ত কাটিয়েছি চেন্নাইয়িনে। সেই মুহূর্তগুলো চিরকাল মনে থেকে যাবে।”

[আরও পড়ুন: IPL 2022: ‘বুড়ো’ কার্তিকের কাছে হারল দিল্লি, মরশুমে চতুর্থ জয় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের]

আইএসএল যাঁর যৌবনের তপোবন, তিনি কেন নেই ভারতের এই মেগা টুর্নামেন্টে? নিজেকে কি স্বেচ্ছায় সরিয়ে নিয়েছেন তিনি? রাফায়েল দার্শনিক হয়ে যান প্রশ্ন শুনে। উত্তরে বলেন, ”ইটস আ কান্ট্রি দ্যাট রিমাইন্ডস মি আ লট অফ ইন্ডিয়া।” বাংলাদেশ ব্রাজিলীয় মিডফিল্ডারের হৃদয়ে এঁকে দিয়ে যায় ভারতের অনেক স্মৃতি। পেশাদার ফুটবলারদের মন ইস্পাত কঠিন হয় বলেই শোনা গিয়েছে। আবেগের ধার ধারেন না তাঁরা। রাফায়েলের কথা শুনে মনে হওয়াই স্বাভাবিক অলস ক্ষণে, কোনও এক পড়ন্ত বিকেলে তাঁর স্মৃতিতে কড়া নেড়ে যায় ভারতে খেলে যাওয়া স্মৃতিরা।

বাংলাদেশের ক্লাবে কোচিং করানোর সময়ে রাফায়েল আগুস্তোর ঢাকা আবাহনীর বিরুদ্ধে দল সাজিয়েছিলেন আর এক ব্রাজিলীয় ডগলাস দ্য সিলভা। এপারের ক্লাব ফুটবলে যাঁর বিস্তর অভিজ্ঞতা। সেই ডগলাস তাঁর দেশের ফুটবলার রাফায়েল সম্পর্কে বলছিলেন, ”হোয়াট আ প্লেয়ার। আমি যখন বাংলাদেশে কোচিং করিয়েছি, তখন রাফায়েল আগুস্তোর দলের মুখোমুখি হয়েছিলাম। ওদের দলটাও বেশ শক্তিশালী। আর রাফায়েল আগুস্তো যেরকম ধরনের প্লেয়ার, তাতে অন্য যে কোনও শক্তিধর ফুটবল খেলিয়ে দেশের লিগে খেলতে পারত। আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয় বেশি অর্থ রোজগারের জন্যই রাফায়েল আগুস্তো বাংলাদেশের ক্লাব বেছে নিয়েছে।”

১৯ তারিখ যুবভারতীতে রাফায়েল ও তাঁর ক্লাবের হয়ে গলা ফাটাবেন না কেউ। জুয়ান ফেরান্দোর এটিকে মোহনবাগান পূর্ণ সমর্থন পাবে। রাফায়েল আগুস্তোও জানেন সেই সারসত্য। তাই বলছেন, ”ভরা স্টেডিয়াম দেখতে ভালই লাগে। আমিও ভরতি স্টেডিয়ামে খেলতেই পছন্দ করি।”

প্রথম ম্যাচে এটিকে মোহনবাগান উড়িয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কার ক্লাব ব্লুস্টারকে। অন্যদিকে মলদ্বীপের ক্লাব ভ্যালেন্সিয়ার সঙ্গে খেলা ছিল ঢাকা আবাহনীর। ভ্যালেন্সিয়া সিলেটে খেলতে না আসায় এএফসি কাপের প্রথম প্লে অফে ওয়াকওভার পেয়ে যায় আবাহনী। মঙ্গলবারের ম্যাচ দু’ দলের কাছেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেউই সুযোগ নষ্ট করতে চাইবে না। একে অপরের বিরুদ্ধে হোমওয়ার্ক করে ফেলেছেন। রাফায়েল বলছিলেন, ”আইএসএলে এটিকে মোহনবাগানের বেশ কয়েকটি ম্যাচ দেখেছি আমি। খুবই শক্তিশালী দল। ম্যাচটা খুবই কঠিন হবে।” তার পরই চোয়াল শক্ত করে রাফায়েলের সংযোজন ”ফুটবল তো খেলা হয় মাঠে, তাই না? মাঠে অনেককিছুই হতে পারে। ভুলে গেলে হবে না আমাদের দলটাও কিন্তু যথেষ্ট শক্তিশালী।”

নিজে খেলেছেন আইএসএলে। এই টুর্নামেন্টের নাম শুনলে নস্ট্যালজিক হতে বাধ্য। এখন অন্য দেশের লিগে খেললেও ভারতের এই মেগা টুর্নামেন্টেও চোখ রাখেন ব্রাজিলীয় মিডফিল্ডার। এদেশে দু’ বারের আইএসএল জয়ী দল চেন্নাইয়িনের সদস্য তিনি। ওপারেও ঢাকা আবাহনীর হয়ে জেতা হয়ে গিয়েছে ফেডারেশন ও ইনডিপেনডেন্স কাপ। ফুটবল মাঠ ফিরিয়ে দেয় অনেককিছু। মিলিয়ে দিয়ে যায় পুরনো আর বর্তমানকে।

ভরা যুবভারতীতে অতীতেও খেলে গিয়েছেন রাফায়েল আগুস্তো। চেন্নাইয়িনের হয়ে প্রথম গোল তিনি করেছেন এই বিশালাকায় স্টেডিয়ামেই। প্রতিপক্ষ ছিল এটিকে। সাত বছর আগের সেই ম্যাচে এটিকে-র তিন-তিনজন ডিফেন্ডার স্লাইডিং ট্যাকল করেও হদিশ পাননি আগুস্তোর। ব্রাজিলীয় ফুটবলার গোল করলেও চেন্নাইয়িনকে হার মানতে হয়েছিল এটিকে-র কাছে। এটিকে-র প্রাক্তন ডিফেন্ডার অর্ণব মণ্ডল বলছিলেন, ”খুব ভাল বল হোল্ড করত। শারীরিক দিক থেকে খুব শক্তিশালী ছিল। পাসিং ক্ষমতাও খুব ভাল ছিল।”

২০১৫-র পর কেটে গিয়েছে সাত-সাতটি বছর। গঙ্গা দিয়ে গড়িয়ে গিয়েছে অনেক জল। রাফায়েলও দেশ, ক্লাব বদলে ফেলেছেন। কিন্তু ঘুরে ফিরে তাঁর কাছে উড়ে আসছে আইএসএল, চেন্নাইয়িন, যুবভারতী নিয়ে সব প্রশ্ন। আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছেন আগুস্তো। স্মৃতির পাতা উল্টে বলছেন, ”আমি নিশ্চিত তামিলনাড়ুর মানুষ আমাকে মনে রাখবেন।”

চেন্নাইয়িন ও আগুস্তোর এই রোম্যান্স যেন মান্না দে-র সেই বিখ্যাত গানের লাইন, ”হৃদয়ে লেখো নাম, সে নাম রয়ে যাবে।”

[আরও পড়ুন: IPL 2022: হেরেই চলেছে মুম্বই, রাহুলের চওড়া ব্যাটে সহজ জয় লখনউয়ের]

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে



Leave a Reply