Santosh Trophy 2022: কেরলের বিরুদ্ধে দুটো ভুলে সন্তোষ ট্রফি হাতছাড়া প্রিয়ন্ত, মনোতোষদের
এগিয়ে গিয়েও ফাইনালে হার। কেরলের বিরুদ্ধে আর বদলা নেওয়া হল না বাংলার। নির্ধারিত সময়ে ফলাফল ছিল গোলশূন্য। এক্সট্রা টাইমে ১-০ এগিয়ে গিয়েও টাইব্রেকারে হার বাংলার ছেলেদের।
বাংলা-১ (৪) : কেরল-১ (৫)
(দিলীপ ওঁরাও ৯৬) (অজয়ন ১১৭)
কলকাতা: মাটিতে শুয়ে পড়েছেন তিনি। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত চোখ-মুখ। তবু যেন তৃপ্তি ঝরে পড়ছে। সেই তাঁকেই কোলে তুলে নিলেন ফুটবলাররা। বিনু জর্জ এবং তাঁর টিমের জন্য মঞ্জেরি তখন ঢাক-ঢোল বাজছে। আকাশ রাঙিয়ে দিচ্ছে আতসবাজি। ১৯৯৩ সালের পর ঘরের মাঠে সন্তোষ ট্রফি জয়ের এই উৎসব হয়তো হতই কেরলের (Kerala), যদি দুটো ভুল পর পর না করত বাংলা (West Bengal)। প্রথমটা ১১৭ মিনিটে। ডানদিক থেকে নৌফল পিএনের বাঁকানো ক্রস থেকে সুপারসাব বাবিন অজয়নের দুরন্ত গোলে ১-১ করে ফেলেন জিজু জোসেফরা। আর দ্বিতীয়টা টাইব্রেকারে। সজল বাগ যদি কিকটা তিনকাঠিতে রাখতে পারতেন, তা হলে পাঁচ বছর পর কেরল অধরা থাকত না বাংলার। ২০১৮ সালেও সন্তোষ ট্রফি ফাইনালে (Santosh Trophy Final 2022) টাইব্রেকারেই হারতে হয়েছিল। এ বারও তা-ই হল।
সুপ্রিয় পণ্ডিতের ক্রসটা কিন্তু অন্য স্বপ্নই দেখাচ্ছিল। নির্ধাতির সময়ে ফলাফল গোলশূন্য থাকার পরই প্রতিপক্ষের গোলমুখ খুলে ফেলেছিল রঞ্জন ভট্টাচার্যের বাংলা। ৯৬ মিনিটে তীক্ষ্ণ ফলার মতো সেন্টার থেকে দিলীপ ওঁরাওয়ের জোরালো হেডে ১-০ করে ফেলে বাংলা। মঞ্জেরি স্টেডিয়াম চুপ করে গিয়েছিল নিমেষে। পিছিয়ে পড়েও কেরলও যে লড়াই ছাড়েনি, বোঝা গেল ১১৭ মিনিটে দুরন্ত প্রত্যাবর্তনে। টাইব্রেকারে শেষ পর্যন্ত ৫-৪ (১-১) জিতে ফের সন্তোষ জিতল কেরল।
? C.H.A.M.P.I.O.N.S ? #KERWB ⚔️ #HeroSantoshTrophyFinal ? #HeroSantoshTrophy ? #IndianFootball ⚽ pic.twitter.com/WHsBPNfwfM
— Indian Football Team (@IndianFootball) May 2, 2022
রঞ্জন ভট্টাচার্যের কোচিংয়ে কেরলের বিরুদ্ধে বদলার পাশাপাশি ৩৩তম সন্তোষ জিততে চেয়েছিল বাংলা। সারা সন্তোষ ট্রফি জুড়ে দুরন্ত খেলা কেরলই ঘরের মাঠে ছিল ফাইনালের ফেভারিট। বাংলা কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে চমৎকারই খেলেছে। সারা ম্যাচে ৫১ শতাংশ বল পজেশন ছিল তন্ময়, প্রিয়ন্তদের। ঘরের মাঠে আগ্রাসী ফুটবল খেলা বিনু জর্জের কেরলের বিরুদ্ধে ৫-৩-২ ছকে টিম সাজিয়েছিলেন বাংলার কোচ রঞ্জন ভট্টাচার্য। খুব ভালো করেই জানতেন, ডিফেন্স পোক্ত রাখতে না পারলে যে কোনও সময় গোল খেয়ে যেতে পারে টিম। সেই সঙ্গে কেরলের গ্যালারি ভর্তি মাঠে টিম যাতে চাপে না পড়ে, সেই কারণে পাল্টা আক্রমণের রাস্তাও তৈরি রেখেছিলেন। প্রথমার্ধে আইএম বিজয়নের কেরল বারবার চাপ বাড়াল বাংলার বক্সে। শুভেন্দু-নবি-তুহীনরা কিন্তু জমাট রেখেছিলেন ডিফেন্স। তবে বাংলার শেষ রক্ষণ সারা টুর্নামেন্ট যে ভাবে খেলেছেন, প্রিয়ন্ত কুমার সিং ঠিক সে ভাবেই খেললেন ফাইনালটা। ৩৪ মিনিটে ম্যাচের সেরা সেভ তাঁর। বাঁ প্রান্ত থেকে কেরলের সোয়েল জোসি কোণাকুণি শট সেভ করে দেন বাংলার কিপার। তিনি না থাকলে ম্যাচটা হয়তো ওখানেই শেষ হয়ে যেত।
মঞ্জেরির মাঠে প্রায় ২৭ হাজার দর্শক সন্তোষ ট্রফি ফাইনাল দেখতে এসেছিলেন। প্রথমার্ধ দাপিয়ে খেলল বাংলাই। সব মিলিয়ে ৫টা গোলমুখী শট ছিল ফার্দিন আলি মোল্লা, দিলীপ ওঁরাওরা। বেশ কয়েক বার কেরলের গোলমুখ খোলা পেয়েও তাঁরা জালে বল রাখতে পারেননি। বাংলার চাপের সামনে খানিকটা পিছিয়েই ছিল কেরল। বিরতির পর খেলার গতি ঘুরিয়ে দেন অজয় অ্যালেক্স, সঞ্জু পি, বীনেশ এমরা। দুটো প্রান্ত ধরে ঘনঘন আক্রমণে উঠে আসায় প্রায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন মনোতোষ চাকলাদাররা। ৭৬ মিনিটেও কিন্তু গতির বিরুদ্ধে গিয়ে প্রায় গোল করে ফেলছিলেন ফার্দিন। সুপ্রিয় পণ্ডিতের ডান দিক থেকে তোলা মাপা ক্রস ফাঁকা গোলের সামনে পেয়েও হেডটা তিনকাঠির মধ্যে রাখতে পারলেন না। ম্যাচের শেষ ৫টা মিনিট বাংলা মিস পাসের ভরিয়ে দিয়েছিল। কেরল বারবার গোলের সুযোগ তৈরি করে ওই সময়। ৯২ মিনিটে বাংলার ভুলের সুযোগ নিয়েই প্রতিপক্ষের বক্সে হানা দেয় কেরল। একা প্রিয়ন্তকে পেয়েও বাইরে বল মারেন সিঘিল।
বাংলা: প্রিয়ন্ত, শুভেন্দু, নবি, জয়, তুহীন, মনোতোষ, সুজিৎ, মহীতোষ, তন্ময়, দিলীপ, ফার্দিন