Vedaant Madhavan: ড্যানিশ ওপেনে সোনাজয়ী আর মাধবনের ছেলে বেদান্তের পাখির চোখ প্যারিস অলিম্পিকে
ড্যানিশ অলিম্পিকে সফল হওয়ার পর বেদান্ত এ বার প্যারিস অলিম্পিকের জন্য ফোকাস করছেন। তাঁর হাত ধরেই অলিম্পিক থেকে ভারত সাঁতারে প্রথম সোনা জয়ের স্বপ্ন দেখাও শুরু করে দিয়েছে। তাঁর এই যাত্রায় তিনি সবসময় পরিবারের সমর্থন পেয়েছেন। সদ্য এক সাক্ষাৎকারে সেকথাই তুলে ধরেছেন ভারতীয় তারকা সাঁতারু বেদান্ত।
মুম্বই: খেলাধূলার জগতে ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, কুস্তির মতো একাধিক বিভাগে ভারত দাপট দেখালেও সাঁতারে (Swimming) এখনও সেভাবে আধিপত্য দেখাতে পারেনি ভারত। সেই পথেই এ বার এগোচ্ছেন ভারতীয় বলিউড তারকা আর মাধবনের (R Madhavan) ছেলে বেদান্ত মাধবন (Vedaant Madhavan)। বাবার পথে না হেঁটে, অভিনয়ের জায়গায় খেলাধূলাকেই বেঁছে নিয়েছেন মাধবনপুত্র। তিনি যে ভুল পথ বাঁছেননি তা প্রমাণও করে দিচ্ছেন বেদান্ত। ইতিমধ্যেই ১৬ বছরের বেদান্ত দেশকে গর্বিত করেছেন ড্যানিশ ওপেনে জোড়া পদক জিতে। কয়েকদিন আগেই ড্যানিশ ওপেনের (Danish Open) ১৫০০ মিটার ফ্রি স্টাইল সাঁতারে রুপো অর্জন করেছিলেন বেদান্ত। রুপো অর্জন করতে তিনি সময় নিয়েছিলেন ১৫:৫৭:৮৬ সেকেন্ড। এরপর একই টুর্নামেন্টের ৮০০ মিটার ফ্রি স্টাইল সাঁতারে সোনা জেতেন বেদান্ত। সোনা জিততে তিনি সময় নেন ৮:১৭:২৮ সেকেন্ড। ড্যানিশ অলিম্পিকে সফল হওয়ার পর বেদান্ত এ বার প্যারিস অলিম্পিকের জন্য ফোকাস করছেন। তাঁর হাত ধরেই অলিম্পিক থেকে ভারত সাঁতারে প্রথম সোনা জয়ের স্বপ্ন দেখাও শুরু করে দিয়েছে। তাঁর এই যাত্রায় তিনি সবসময় পরিবারের সমর্থন পেয়েছেন। সদ্য এক সাক্ষাৎকারে সেকথাই তুলে ধরেছেন ভারতীয় তারকা সাঁতারু বেদান্ত।
ড্যানিশ ওপেনে জোড়া পদক (১টি রুপো, ১টি সোনা) জয় নিয়ে কেমন অনুভূতি আপনার?
বেদান্ত – আমি কঠোর পরিশ্রম করি। এই সাফল্য পেয়ে আমি সত্যিই ভীষণ খুশি। যারা আমাকে সমর্থন করেছে তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। তবে এই সাফল্যের পিছনে অনেকের অবদান রয়েছে। যেমন আমার কোচ, আমার বাবা-মা, আমার ডায়েটিশিয়ানদের ছাড়া সম্ভব হত না। আমি ভারতীয় সাঁতার ফেডারেশনকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাতে চাই। কারণ তারাই আমাকে সেখানে পাঠিয়েছিল।
এরপর আপনার লক্ষ্য কী?
বেদান্ত – বেশ কয়েকটা প্রতিযোগিতা তো সামনে রয়েছে। আমি আর আমার কোচ একসঙ্গে বসে ঠিক করব, কোনটায় অংশ নেব আর কোনটায় নেব না। আপাতত মূল লক্ষ্য আমার জুলাইয়ে হতে চলা জুনিয়র ন্যাশানালসে। কারণ, ওই টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্সে ভর করে আমি ফিনা জুনিয়র বিশ্ব গেমস এবং বিশ্ব স্কুল গেমসের জন্য নির্বাচিত হতে পারি।
অলিম্পিক নিয়ে আপনার কী ভাবনা?
বেদান্ত – আমার আসল লক্ষ্যই হল অলিম্পিক। জুনিয়র ন্যাশানালসের পারফরম্যান্সের ওপর ভর করে আমি এশিয়ান গেমসের জন্য নির্বাচিত হতে পারি। ন্যাশানালসের পরই কমনওয়েলথ গেমসও হবে। তাই আমার মনে হয় না আমি সিডব্লিউজির জন্য নির্বাচিত হব। তবে ন্যাশানালসের পারফরম্যান্স আমাকে এশিয়ান গেমস ও ফিনা জুনিয়রের দরজা খুলে দিতে পারে। গত বছর সজন প্রকাশ ও শ্রীহরি নটরাজন অলিম্পিকে ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করার পর অনেক তরুণ সাঁতারু অনুপ্রাণিত হয়েছে। আমার আসল লক্ষ্য অলিম্পিকে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা। ২০২৪ এর অলিম্পিকই আমার আসল টার্গেট। আমি বিশ্বাস করি, আমি ওই জায়গাটায় পৌঁছতে পারব। এবং আমার উদ্দেশ্যে দেশকে অলিম্পিক থেকে সোনা এনে দেওয়া।
সাঁতারে কীভাবে অনুপ্রাণিত হলেন?
বেদান্ত – চার বছর আগে আমি স্কুলের সাঁতার দলে ছিলাম। যেখানে আমি দেখতাম কয়েকজন জাতীয় স্তরের সাঁতারুদের। ওদের ভালোভাবে আমি পর্যবেক্ষণ করতাম। ওদের সাঁতার কাটা দেখতাম। একদিন অন্য এক স্কুলের সঙ্গে আমাদের একটা প্রতিযোগিতা ছিল। কোচ তাতে আমাকে রিলে দলে রেখেছিল। ওই মুহূর্তটা আমার কাছে বেশ উপভোগ্য ছিল। ওরা আমার থেকে তিন বছরের বড় ছিল। তবে আমি ভালো সময় কাটিয়েছিলাম ওদের সঙ্গে। তারপর থেকে আমি প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া শুরু করি।
পরিবারের ঠিক কতটা সমর্থন পেয়েছেন?
বেদান্ত – আমার পুরো যাত্রাটাতেই আমি সবসময় আমার পরিবারকে পাশে পেয়েছি। তাঁরা জানে আমি সাঁতারটা উপভোগ করি, ভালোবাসি। আমি ওঁদের সমর্থন পেয়ে ভীষণ খুশি। আমি ওঁদের সমর্থন ছাড়া এই জায়গায় পৌঁছতে পারতাম না। প্রথমদিকে শখে সাঁতার কাটতাম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমি এই ব্যাপারে সিরিয়াল হই। আমার বাবা আমাকে ভীষণ সমর্থন করে। আমার জন্য তাঁকে অনেক ট্রাভেল করতে হয়। তিনি যেখানেই থাকুন না কেন আমাকে ফোন করেন, সমর্থন করেন, আমার হিটের আগে আমাকে তিনি উৎসাহিত করেন। আমার জন্য সবসময় প্রার্থনা করেন। আমার সঙ্গে তিনি যখন থাকেন, তখন আমাকে ট্রেনিংয়ে নিয়ে যান, আমার সঙ্গে ডিনার করেন, সময় কাটান। আমার বাবার কাছ থেকে মানসিক ও শারীরিক দিক থেকে যে সমর্থনটা আমি পাই তার জন্য নিজেকে ভীষণ ভাগ্যবান মনে হয়।
ড্যানিশ ওপেনে পদক জয়ের পর আপনার মা-বাবার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
বেদান্ত – আমার বাবা তো পুরো কেঁদেই ফেলেছিলেন। তিনি ভীষণ খুশি হয়েছিলেন। আমার মা ও বাবা দু’জনই আমার ওপর গর্বিত হয়েছিলেন। আমার জন্য তাঁরা যে ত্যাগ করেছিলেন সেটা আমি সার্থক করতে পেরেছিলাম। বেশ খুশির পরিবেশ ছিল।
আপনার আদর্শ কে এবং কেন?
বেদান্ত – আমার আদর্শ মাইকেল ফেলপস। তিনি সর্বকালের সেরা সাঁতারু। কিন্তু পাশাপাশি আমি ভারতীয় সাঁতারুদেরও দেখি। সজন প্রকাশ, কুশাগ্র রাওয়াত, শ্রীহরি নটরাজদের। শ্রীহরির আশ্চর্য মানসিকতা আছে। তবে আমার প্রধান আদর্শ মাইকেল ফেলপস।
মাইকেল ফেলপসের সাথে আপনার কথোপকথন কেমন ছিল?
বেদান্ত – মাইকেল ফেলপসের সঙ্গে কথোপথনের জন্য আরও ১০টি বাচ্চার সঙ্গে একটি দলে আমি ছিলাম। এটা একটি কনফারেন্স ছিল। যেখানে একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব ছিল। একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল তাঁর খাদ্যর ব্যাপারে। স্পষ্টতই, অনেক রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে তিনি দিনে আট হাজার ক্যালোরি গ্রহণ করেন। তিনি আমাদের বলেছিলেন এটি একটি মিথ। এটা ঠিক যে তিনি অনেক খান, কিন্তু ততটাও খান না। যতদূর শেখার বিষয়, আমি অবশ্যই তাঁর মানসিকতা এবং মানসিক শক্তিকে নিজের সঙ্গে দেখতে চাই। আমি তাঁকে তাঁর ট্রেনিং সময়সূচী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, তিনি আমাদের মতোই ট্রেনিং করেন। তিনি সকালে প্রায় ৬ কিমি প্রতি সেশনে ট্রেনিং করেন।