সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শেষ ল্যাপে এসে গিয়েছে আইপিএল (IPL)। আজ মঙ্গলবার ইডেন গার্ডেন্সে প্লে অফের ম্যাচে মুখোমুখি গুজরাট টাইটান্স (Gujarat Titans) এবং রাজস্থান রয়্যালস (Rajasthan Royals)। বুধবার ক্রিকেটের নন্দনকাননে লখনউ সুপার জায়ান্টসের (LSG) মুখোমুখি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর (RCB)। চলতি আইপিএলের শুরু থেকে এপর্যন্ত অনেকেই নিজেদের ক্যারিশমায় দলকে ম্যাচ জিতিয়েছেন। রক্তের গতি বাড়িয়ে দেওয়া ম্যাচ হয়েছে। নজর কেড়েছেন একাধিক তরুণ প্রতিভা। ব্যাটে-বলে নিজেদের প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। এই প্রতিবেদনে সেই তরুণ প্রতিভাদের তুলে ধরা হল।
তিলক ভার্মা: মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের তিলক ভার্মা নজর কেড়েছেন এবারের টুর্নামেন্টে। তাঁর অধিনায়ক রোহিত শর্মার কাছ থেকে প্রশংসা আদায় করে নিয়েছেন তিলক। চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে ম্যাচ মুম্বই জিতেছিল তিলকের ব্যাট ঝলসে ওঠায়। আর তার পরেই রোহিত শর্মা প্রশংসা করে বলেন, ”তিলক দুর্দান্ত। প্রথম বছর খেলছে আইপিএল। আর প্রথম বছরে এত ঠান্ডা মাথার পরিচয় দেওয়াটা সত্যিই খুব কঠিন ব্যাপার। আমার মনে হয় খুব শীঘ্রেই দেশের হয়ে সব ফরম্যাটে খেলার সুযোগ পাবে তিলক। ওর টেকনিক, মানসিকতাও ভাল। ওর ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল। সেই সঙ্গে ওর খিদেটাও আছে।” তিলকের সম্পর্কে এমন প্রশংসা করেছিলেন রোহিত। খিদেই তো একজনকে এগিয়ে নিয়ে যায় সাফল্যের দিকে। তিলক ভার্মা মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে ১৪ টি ম্যাচ খেলেছেন। আর এই ১৪টি ম্যাচে ৩৯৭ রান করেছেন তিলক। তাঁর সর্বোচ্চ রান ৬১।
উমরান মালিক: গতির তুফান তুলে কাশ্মীর থেকে জাতীয় দলে উমরান মালিক। অতীতেও দেখা গিয়েছিল ভাল পারফরম্যান্স করলে সুযোগ পাওয়া যায় জাতীয় দলে। উমরান মালিক এবারের আইপিএলে আগুন জ্বালিয়েছেন শুরু থেকেই। সুনীল গাভাসকর, ব্রেট লির কাছ থেকে প্রশংসিত হয়েছেন। ওয়াঘার ওপাড় থেকেও প্রশংসার ঝড় উসেছে তাঁর দিকে। আইপিএলের দুরন্ত পারফরম্যান্সের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য ডাক পেয়েছেন। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই উমরানের হাত থেকে বেরিয়েছে ১৫০ কিলোমিটারের উপরে ডেলিভারি। আইপিএলের দ্রুততম বলটাও করেছেন উমরান। ১৫৭ কিলোমিটার গতিতে বলটা ধেয়ে এসেছিল দিল্লির ব্যাটার রোভম্যান পাওয়েলের দিকে। সানরাইজার্সের জার্সিতে এবার সত্যিই উজ্জ্বল উমরান মালিক। ১৪টি ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ২২টি উইকেট।
মহসিন খান: লখনউ সুপার জায়ান্টসের সহকারী কোচ বিজয় দাহিয়া প্রশংসা করে মহসিন সম্পর্কে বলেছিলেন, ”প্রথমবার টুর্নামেন্ট খেলতে নেমেছে। অথচ কোন পরিস্থিতির মধ্যে ওকে বল করতে হয়েছে। সেটা আমাকে মুগ্ধ করেছে। যাঁরা খেলা দেখেননি তাঁরা অনেকসময় শুধু বোলারদের ফিগার দেখে সিদ্ধান্তে পৌঁছে যান। একটা ম্যাচ ছাড়া বাকি সব ম্যাচেই দুর্দান্ত বোলিং করেছে মহসিন। প্রথম বার টুর্নামেন্টে খেলতে নেমে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তুলে ধরা প্রমাণ করছে মহসিন খুবই দক্ষ একজন বোলার। সেই সঙ্গে প্রমাণ করছে তাঁর মানসিক কাঠিন্যও।” তাঁর বাঁ হাতের পেস বোলিংয়ের জবাব ছিল না কলকাতা নাইট রাইডার্সের ব্যাটসম্যানদের কাছে। নাইটদের তিন-তিনটি উইকেট নেন মহসিন। ৮ টি ম্যাচ থেকে মহসিন নিয়েছেন ১৩টি উইকেট।
আয়ুশ বাদোনি: গুজরাট টাইটান্স বনাম লখনউ সুপার জায়ান্টস ম্যাচের আগে তাঁকে কেউ চিনতেন না। কিন্তু আইপিএলের প্রথম ম্যাচে নেমেই তিনি সুপারহিট। আইপিএল-অভিষেকেই রেকর্ড গড়ে ফেলেন। তাঁর অধিনায়কের কাছ থেকে পেয়ে গেলেন নাম, ‘ছোট্ট এবি’। যদিও এত কিছুর পরে সর্বাঙ্গীন সুন্দর হয়নি। তাঁর দল লখনউ সুপার জায়ান্টস হেরেই গেল শেষমেশ। তাঁর লড়াই পেল না পোয়েটিক জাস্টিস। কিন্তু প্রথম দর্শনেই সবার নজর কেড়ে নিলেন অখ্যাত অনামী আয়ুশ বাদোনি (Ayush Badoni)। বাদোনির খেলা মন কেড়ে নিয়েছে পার্থিব প্যাটেলেরও। তিনি বলেছেন, ”আয়ুশ বাদোনি আমাকে বিস্মিত করেছে। শান্ত ভাবে চার-ছক্কা মেরে অনেক ম্যাচেই অবাক করে দিয়েছে আয়ুশ। কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে নিজেকে শান্ত রেখে। এই কারণে আমি আয়ুশকে দলে রাখব।” ১৩ ম্যাচে ১৬১ রান করেছেন আয়ুশ বাদোনি। রান সংখ্যার নিরিখে বিচার করলে তা কম বলে মনে হতেই পারে কিন্তু পার্থবের কথাই ঠিক পরিস্থিতির মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন আয়ুশ। এবারের নিলামে ২০ লাখ টাকা দিয়ে তাঁকে কিনেছিল। প্রথম ম্যাচে করেন মাত্র ৪১ বলে ৫৪ রান করেন আয়ুশ। আইপিএলের ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার আয়ুশ ছ’ নম্বরে বা তার নীচে ব্যাট করতে নেমে অভিষেকেই পঞ্চাশ করেছেন।
অভিষেক শর্মা: সানরাইজার্স হায়দরাবাদ প্লে অফে পৌঁছতে পারেনি। কিন্তু অভিষেক শর্মার খেলা মন জিতে নিয়েছে সিনিয়র সতীর্থ ভুবনেশ্বর কুমারের। তিনি বলেছেন, ”উমরান মালিকের পাশাপাশি অভিষেক শর্মা ইচিবাচক দিক।” ১৪ ম্যাচে ৪২৬ রান করেছেন তিনি। সর্বোচ্চ রান ৭৫। নিলামে তাঁকে সাড়ে ছ কোটি টাকা দিয়ে কেনা হয়েছিল। টুর্নামেন্ট শুরুর পরে অভিষেক বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি সত্যি সত্যিই কোটি টাকার খেলোয়াড়।
মুকেশ চৌধুরী: দীপক চহার ছিলেন না। আতঙ্কিত হয়েছিলেন চেন্নাই সুপার কিংসের ভক্তরা। পাওয়ারপ্লেতে কে বল করবেন, এই আশঙ্কা ছিল। কিন্তু মুকেশ চৌধুরী চহারের অভাব অনুভব করতে দেননি। শুরুর দিকের ওভারগুলোয় মুকেশ চৌধুরী সত্যি নজরকাড়া বোলিং করেন। ১৩ ম্যাচে ১৬টি উইকেট নিয়েছেন চেন্নাই সুপার কিংসের এই বোলার।
রিঙ্কু সিং: সেই অর্থে তিনি নতুন মুখ নন। কিন্তু এবারের টুর্নামেন্টে কলকাতা নাইট রাইডার্সের রিঙ্কু বেশ কয়েকটি ম্যাচে অসাধ্য সাধন প্রায় করে ফেলেছিলেন। নাইট ভক্তদের মনে থাকবে লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে রিঙ্কু সিংয়ের মরিয়া লড়াই। এভিন লিউইসের এক হাতে ক্যাচ রিঙ্কুকে ফিরিয়ে দেয় ঠিকই। ট্র্যাজিক নায়ক হিসেবে থেকে যান সেই ম্যাচে। কিন্তু রিঙ্কু সিং পরিচয় দিয়েছিলেন তিনিও ম্যাচ উইনার হতে পারেন। সব ম্যাচ তিনি খেলেননি। ৭টি ম্যাচে রিঙ্কু করেন ১৭৪ রান।
Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ