যদি ক্রিকেট প্রেম জিতে না যেত, তা হলে কী হতেন মিতালি রাজ?


যদি ক্রিকেট প্রেম জিতে না যেত, তা হলে কী হতেন মিতালি রাজ?

ছেলেবেলা থেকে নিজের কাজের প্রতি রীতিমতো নিষ্ঠাবান ছিলেন মিতালি। কড়া পরিশ্রম করা থেকে কোনওদিন পিছপা হননি তিনি। ঝড়-জল-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই দিনের পর দিন, রাতের পর রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে গিয়েছেন মিতালি। তাঁর ফলও পেয়েছেন তিনি।

সঙ্ঘমিত্রা চক্রবর্ত্তী

দেখতে দেখতে প্রায় ২৩ বছরের লম্বা ক্রিকেট (Cricket) কেরিয়ারে ইতি টানলেন মিতালি রাজ (Mithali Raj)। ২২ গজে ২৩ বছর ধরে রাজ করার বদলে অন্য কিছুও কি করতে পারতেন মেয়েদের ক্রিকেটের অন্যতম সফল ক্রিকেটার? মিতালির অবসরের দিন কেন এমন প্রশ্ন? যে কেউ অবাক হতেই পারেন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ক্রিকেট নয়, অন্য মঞ্চে সফল হতে পারতেন মিতালি। তাঁর প্রথম ভালোবাসা ছিল নাচ (Dance)। ক্লাস ২-তে পড়ার সময় থেকে নাচের প্রতি একটা আলাদা টান ছিল মিতালির। তিনি রীতিমতো পারদর্শীও ভারতনাট্যমে (Bharatanatyam)। ফলে ক্রিকেটের জন্য ব্যাট নাকি নাচের জন্য ঘুঙুর কোনটা তুলে নেবেন মিতালি, তা নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন তাঁর অভিভাবকরা। কিন্তু বাবার জন্যই ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয় মিতালির। সেও এক মজার গল্প। অলস মিতালিকে একপ্রকার জব্দ করার জন্যই ক্রিকেটের দিকে পাঠান তাঁর বাবা। সেই মিতালিই ধীরে ধীরে মেয়েদের ক্রিকেটে সর্বকালের অন্যতম সেরা তারকা ওঠেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় মিতালির। এর পর তাঁর মুকুটে জুড়েছে একাধিক পালক। আর ৩৯ বছর বয়সে আজ, বুধবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে অবসর জানিয়ে দিলেন মিতালি।

মিতালির মা লীলা রাজ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “সত্যি বলতে কী মিতালি নাচতে ভীষণ ভালোবাসে। ও ক্লাস ২-তে পড়ার সময় স্কুলে গিয়ে নাচের ক্লাসে নিজের নাম লিখিয়েছিল। ও দেরি করে ঘুম থেকে উঠত। তাই আমি ওকে তাড়াতাড়ি তুলে দিতাম এবং ওর বাবা ওকে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া শুরু করে।”

প্রাক্তন হায়দরাবাদী প্লেয়ার জ্যোতি প্রসাদের অধীনে মিতালির ভাই মিঠুন রাজ সেন্ট জোনস ক্রিকেট কোচিং ফাউন্ডেশনে অনুশীলন করত। সেই সময় মিতালির বাবা দোরাই রাজ তাঁকেও সঙ্গে নিয়ে যেতেন। তবে মিতালি প্রায় সময়ই ঘুমোতেন। যা দেখে একদিন জ্যোতি প্রসাদ মিতালিকে নেটে বল থ্রো করার জন্য ডাকেন। খুদে মিতালির বল ছোড়ার ধরণ দেখে তিনি বুঝে যান, সঠিক ট্রেনিং দিলে এই মেয়ে ক্রিকেটে উন্নতি করতে পারে। তখনই মিতালির বাবাকে জ্যোতি প্রসাদ জানান, তাঁর ক্রিকেটের দিকে যেন নজর দেওয়া হয়।

ছেলেবেলা থেকে নিজের কাজের প্রতি রীতিমতো নিষ্ঠাবান ছিলেন মিতালি। কড়া পরিশ্রম করা থেকে কোনও দিন পিছপা হননি তিনি। ঝড়-জল-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই দিনের পর দিন, রাতের পর রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে গিয়েছেন মিতালি। তাঁর ফলও পেয়েছেন তিনি। ভারতনাট্যমে পারদর্শী হওয়ায় একসময় নিজেকে নৃত্যশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা টেক্কা দিয়েছিল ভারতনাট্যমকে। শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটই জিতে যায়। ধীরে ধীরে প্রিয় ভারতনাট্যম থেকে দূরে সরে যান মিতালি। তবে ক্রিকেটের ফাঁকে মিতালি নিজেকে মনোযোগী রাখার জন্য বইয়ে মগ্ন থাকেন। একাধিক ম্যাচের আগে, এমনকি মিতালিকে ব্যাট করতে যাওয়ার আগেও ড্রেসিংরুমে বসে বই পড়তে দেখা গিয়েছে। ২২ গজে তাবড় তাবড় বোলারদের নাকানিচোবানি খাওয়ানো মিতালি যে ২২ গজের বাইরে এতটা নির্লিপ্ত তা তাঁকে না দেখলে বোঝা যায় না।

এই খবরটিও পড়ুন



মিতালির ক্রিকেট কেরিয়ার জ্বলজ্বল করছে সকলের সামনে। চলতি বছরের ১৫ জুলাই এ বার রুপোলি পর্দাতেও দেখা যাবে মিতালিকে। আশা করা হচ্ছে সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘শাবাশ মিঠু’ মিতালি রাজের বায়োপিকে উঠে আসবে তাঁকে নিয়ে না জানা আরও একাধিক তথ্য।

Leave a Reply