মেসেজে লেখে যে, অনেক দিন থেকেই একটা কথা বলব ভাবছি, বলে উঠতে পারছি না।
দীপঙ্কর ঘোষাল
ভারতীয় ফুটবল (Indian Football) দলে রক্ষণে অন্যতম ভরসা। ক্লাব ফুটবলে দাপিয়ে খেলেছেন। বহু ডার্বি ম্যাচও খেলছেন দীর্ঘদিন ধরে। আইএসএলের (ISL) মতো প্রতিযোগিতায় খেলছেন শুরু থেকে। দেশ-বিদেশের তাবড়-তাবড় স্ট্রাইকারদের সামলেছেন। কিন্তু যাকে মনে ধরেছে, তাঁকে ‘ভালোবাসি’ বলার সাহস সঞ্চয় করতে লেগে গিয়েছে বেশ কয়েকটা বছর। পুরনো কথাগুলো বলার সময়, যেন চোখের সামনে অনেক কিছুই ভাসছিল সোনেলার। কে এই সোনেলা, বুঝতে পারছেন না? আচ্ছা যদি বলি, প্রীতম কোটালের (Pritam Kotal) বান্ধবী?
প্রীতম-সোনেলার প্রেমের শুভ মহরৎ হয়েছিল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। সোনেলা তখন উঠতি অ্যাথলিট। মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১০০ মিটার, ৪০০ মিটার হার্ডলস ছিল প্রধান। রোজ সকালে যুবভারতীতে অনুশীলনে যেতে হত সোনেলাকে। তাদের অনুশীলনের পরই সেখানে দলের সঙ্গে অনুশীলনে নামতেন প্রীতম। ‘তোমার হল সারা, আমার হল শুরুর’ মাঝেই, এক তরফা ভালো লাগা শুরু প্রীতমের। তখনও সোনেলার নামও জানতেন না প্রীতম। সোনেলার মুখেই শোনা গেল শুরুর সে কথা। ‘প্রথমবার দেখা হতেই প্রশ্ন, তোর এই নামটা কে রেখেছিল? যুবভারতীতে বহুদিন দেখেছে আমাকে। ফেসবুক তখন নতুন। ছিল না স্মার্ট ফোন। বাঙালি মেয়েদের সম্ভাব্য সমস্ত নাম দিয়ে ফেসবুকে খুঁজেছে। কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিল না।’
তাহলে পরিচয় হল কী করে? ‘কমন ফ্রেন্ডের ফ্রেন্ডলিস্ট ঘাঁটতে গিয়ে পেয়েছে। রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল। জানি না ভুলবশত, না জেনেশুনেই অ্যাকসেপ্ট করেছিলাম কিনা।’ তখন কি জানতেন, সারা জীবনের জন্য অ্যাক্সেপ্ট করতে চাইবেন কোনওদিন? ‘একদমই না। রিকোয়েস্ট অ্যাক্সেপ্ট করার পরও যুবভারতীতে দেখা হয়েছে, কিন্তু সামনে আসেননি। জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে মেসেজ করে। নরম্যালি থ্যাঙ্ক ইউ লিখে পাঠাই। তারপরই মেসেজ, আমাকে চিনতে পারছিস? আমি কিন্তু তোকে চিনি। মানে, সরাসরি তুই! আমার প্রথম প্রতিক্রিয়াই ছিল, কী অভদ্র ছেলে রে বাবা! সটান বলে দিই-আমি তোমাকে চিনি না। মেসেজে জিজ্ঞেস করে, পরদিন যুবভারতী যাব কী না, আমাকে দেখে হাত নাড়বে। ও তখন ইন্ডিয়ান অ্যারোজে খেলে। পরদিন কথা বলে। ফোন নম্বর চায়, বন্ধুত্বের কথা পরিষ্কার করে দিই। প্রচুর এসএমএস করত। ইগনোর করতাম। দিনে ১০০ এসএমএস থাকত, শেষ না হলেও, ওকে বলতাম শেষ।’ সোনেলা বলছেন, ‘আসলে তখনও ওর সম্পর্কে কিছু ভাবিইনি, ঠিকঠাক চিনতাম না, বন্ধু, পড়াশোনা, কেরিয়ার নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।‘
‘কে প্রথম প্রপোজ করেছিল? শোনা গেল সোনেলার মুখেই, ‘১৪ ফেব্রুয়ারি, রাত ১২ টা বাজার কয়েক মিনিট আগে মেসেজ এল। তখন অনেক দিনই হয়ে গেছে। স্বাভাবিক কথা হত। মেসেজে লেখে যে, অনেক দিন থেকেই একটা কথা বলব ভাবছি, বলে উঠতে পারছি না। হয়তো বলাটাও দরকার। আই লাভ ইউ। যদি রিপ্লাই না করিস তাহলে আমি বুঝে যাব তুই কী চাস।’ তারপর? ‘আমার বেশ কিছু বন্ধু বান্ধবীরা তখন রিলেশনে ছিল। সাত-পাঁচ না ভেবেই রিপ্লাই দিই, আই লাভ ইউ টু। ভেবেছিলাম, মনের কথা বলার কেউ তো থাকবে। একটা কথা মাথায় ছিল, জীবনটা জার্নি, ভুল করলে শিখতে পারব। ও এসএমএস করার, এক মিনিটের মধ্যেই রিপ্লাই করি, কিন্তু ওদিক থেকে আর কোনও রিপ্লাই নেই।‘
এই অবধি সফর কতটা মসৃণ ছিল… ‘ও গাড়ি কেনার পর প্রথম যেদিন কফি ডেটে বেরোই, বিশ্বাসই হচ্ছিল না। একটা সময় ও সাইকেল নিয়ে উত্তরপাড়া থেকে বরানগর আসত দেখা করতে। শুরুতে আমার পরিবার সম্পর্কটা ভালোভাবে নেয়নি। ওর মোহনবাগানে যোগ দেওয়া, চ্যাম্পিয়ন হওয়া, আইএসএলে সুযোগ। পরিবার ভরসা পায়, ভুল সিদ্ধান্ত নিইনি। একটা কথা না বললেই নয়। ওর বাবা রিক্সা চালাতেন, সেটা সংবাদমাধ্যমে জানতে পারি। আমাকে হারানোর ভয়ে বলেনি। ওকে বোঝাই, পরিবারকে সম্মান দিতে, আমি ওকে দেখে ভালোবেসেছি, পরিবার কী করে সেটা দেখে নয়।’
আপনি নিজেও ক্রীড়া সাংবাদিক ছিলেন, ছাড়লেন কেন? ‘মনে হয়েছিল, সহজভাবে মিশতে পারতাম না। ফুটবলার আর ক্রীড়সাংবাদিকের কম্বিনেশন ঠিক মনে হয়নি। খেলার মাঠ ছেড়ে দিইনি। একটা পরিকল্পনা চলছে। ‘দ্রুতই কি গাঁটছড়া বাঁধার খবর পাচ্ছি? ‘সেটা রহস্য। ২০-তে পরিকল্পনা ছিল। এখন দেখা যাক।’