লর্ডসে মহারাজকীয় অভিষেক, আজকের দিনেই ভারতীয় ক্রিকেট বদল শুরু সৌরভের হাত ধরে


দাদাগিরির শুরুর দিনটাকে বাংলা, বাঙালি, ভারতীয় ক্রিকেট কীভাবেই বা ভুলতে পারে! হ্যাঁ, আজই সেই দিন।

কলকাতা : দেশে বাঘ, বিদেশে বিড়াল। ভারতীয় ক্রিকেট (BCCI) এবং এই প্রবাদ একটা সময় সমার্থক ছিল। এখন সেই ধারণায় অবিশ্বাস্য বদল এসেছে। একদিনে সেটা হয়নি। তবে শুরুর বীজ বপন আজকের দিনেই হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার আগ্রাসন হোক বা ইংল্যান্ডের দম্ভ। এই লোকটার সামনে সব আটকে গিয়েছিল। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। জিওফ্রে বয়কট যার নাম দিয়েছিলেন ‘প্রিন্স অফ ক্যালকাটা’। ১৯৯৬, ২০ জুন। ক্রিকেটের স্বপ্নের ময়দান, ইংল্যান্ডের লর্ডসে (Lords) সাদা জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। অনেকেই বলেছিলেন, ‘কোটায় সুযোগ’। সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে খুব বেশি সময় নেননি। অফসাইডের ভগবান অভিষেক টেস্টেই (Test Cricket) খেলেছিলেন শতরানের ইনিংস। বল হাতেও অবদান রেখেছিলেন। ইংল্যান্ডের মাটিতেই ভারতীয় ক্রিকেট পেয়েছিল সৌরভ নামের কোহিনুর।

মহারাজ, প্রিন্স অফ ক্যালকাটা, সবকিছুর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মানান সই দাদা। সতীর্থদের কাছে ‘দাদি’। বিশ্ব ক্রিকেট তাঁর দাদাগিরি দেখেছে সব ফরম্যাটেই। কিন্তু ক্রিকেটের সনাতন ফরম্যাটের শুরুর দিনটা সকলের কাছেই স্পেশাল। লর্ডসে সৌরভের অভিষেক ম্যাচে টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিন। প্রথম ইনিংসে বল হাতে জোড়া উইকেট নিয়েছিলেন সৌরভ। কোনও লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানের নয়। প্রতিপক্ষ দলের টপ এবং মিডল অর্ডারের সেরা দুই ব্যাটসম্যান নাসের হুসেন এবং গ্রেম হিকের উইকেট নিয়েছিলেন সৌরভ। এবার ব্যাট হাতে শাসনের পালা। ২৫ রানে প্রথম উইকেট পড়তেই ক্রিজে প্রবেশ দাদার। লর্ডসে ক্ষণে ক্ষণে হাততালি পড়েছে ক্লাস শটে। বিশেষ করে তাঁর কভার ড্রাইভে। পেস, বাউন্স এবং বিষাক্ত সুইং সামলে ১৩১ রানের চোখ জুড়োনো ইনিংস। ইংল্যান্ডের পরিস্থিতিতে প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা ক্রিজে কাটানো, কোটা নয়, ক্লাসের উদাহরণ। সেই ইনিংসেও সকলের মুখ বন্ধ করা যায়নি। তাদের জন্য দ্বিতীয় ম্যাচটি তুলে রেখেছিলেন। সিরিজের তৃতীয় এবং তাঁর দ্বিতীয় টেস্ট। ট্রেন্টব্রিজে ১৩৬ রানের ইনিংসে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, দাদাগিরি সবে শুরু হল। ট্রেন্টব্রিজে দ্বিতীয় ইনিংসে অল্পের জন্য অর্ধশতরান আসেনি।

এই খবরটিও পড়ুন



সৌরভ গাঙ্গুলি এবং টেস্ট ক্রিকেট। একবার পরিসংখ্যান দেখে নেওয়া যাক। ১১৩ টি টেস্ট, মোট রান ৭২১২। শতরান ১৬টি। সর্বাধিক ২৩৯। শুধুমাত্র পরিসংখ্যানে যেগুলো বোঝানো যাবে না। এমন অনেক ঘটনাও রয়েছে। ব্যাটসম্যান সৌরভের সঙ্গে অধিনায়ক সৌরভের পার্থক্য খুঁজতে বসা খুব কঠিন। তবে অধিনায়ক সৌরভ যে উদাহরণ তৈরি করে রেখেছেন, ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে অমর গাঁথা হয়ে থাকবে। স্টিভ ওয়ার নেতৃত্বে জয়ের অশ্বমেধের ঘোড়ায় সওয়ার অস্ট্রেলিয়া। টানা ১৬টি টেস্ট জেতা অস্ট্রেলিয়া হোঁচট খেয়েছিল অধিনায়ক সৌরভের কাছেই। কলকাতার ঐতিহ্যের ইডেনে ফলোঅন খেয়েও রূপকথার জয়ের দাদাগিরি দেখেছিল বিশ্ব ক্রিকেট। দাদাগিরির শুরুর দিনটাকে বাংলা, বাঙালি, ভারতীয় ক্রিকেট কীভাবেই বা ভুলতে পারে! হ্যাঁ, আজই সেই দিন।



Leave a Reply