বরফের ফাটলে আটকে ৪ ঘণ্টা, মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে হিমাচলের শৃঙ্গ জয় বাঙালি পর্বতারোহীর


দিব্যেন্দু মজুমদার: পিয়ালীর পর এবার পর্বতারোহণে (Mountaineering) নজির গড়লেন চুঁচুড়ার যুবক দেবাশীস মজুমদার। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে পরেও হিমাচলের (Himachal Pradesh) ইন্দ্রাসন শৃঙ্গ (Indrasan Peak) জয় করলেন তিনি। পাঁচ বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে পৃথিবীর অন্যতম কঠিন পর্বতশৃঙ্গ জয় করলেন এই তরুণ। যে শৃঙ্গকে পর্বতারোহীদের ভাষায় বলা হয় ‘হাইলি টেকনিক্যাল পিক’। পাহাড় জয় করে শনিবার দুপুরে চুঁচুড়ার পীরতলার বাড়িতে ফেরেন দেবাশীস। শোনান তাঁর ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। যার শেষটা অবশ্য মধুর।

চুঁচুড়া সুইমিং ক্লাবে সাঁতার শেখানোর পাশাপাশি পর্বতারোহণের নেশা দেবাশীসের। সোনারপুরের আরোহী ক্লাবের সদস্য তিনি। এই ক্লাবেরই ১১ জন সদস্য, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের সাহায্যে ২৮ মে হিমাচল প্রদেশের ইন্দ্রাসন শৃঙ্গ জয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। ইন্দ্রাসনের উচ্চতা ৬২২১ মিটার। পৃথিবীর পাঁচটি কঠিন ও বিপজ্জনক শৃঙ্গের একটি ইন্দ্রাসন। ১৯৬১ সালের পর যা কোনও অভিযাত্রী দল জয় করতে পারেনি, সেই শৃঙ্গ জয় নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের সাক্ষ্য বহন করে।

[আরও পড়ুন: ইংল্যান্ডে ব্যস্ত দ্রাবিড়, লক্ষ্মণের কোচিংয়েই আয়ারল্যান্ড সিরিজের প্রস্তুতি ভারতের]

৩০ মে সকালে দেবাশীসদের অভিযাত্রী দল মানালি পৌঁছে সেখান থেকে চিকা হয়ে সেরি বেস ক্যাম্পে পৌঁছান। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে বেস ক্যাম্পেই পাঁচ দিন আটকে থাকেন তাঁরা। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে চার জন পর্বতারোহী অভিযান বাতিল করেন। ৬ জুন বেস ক্যাম্প থেকে রওনা দিয়ে লোট ফেরি পৌঁছান সাত সদস্য। ১৪ জুন সকালে সামিট ক্যাম্পে পৌঁছানোর পর ওই দিন রাতেই ইন্দ্রাসন শৃঙ্গের উদ্দেশ্যে রওনা দেন দেবাশীস ও অন্য অভিযাত্রীরা।

পরদিন অভিযাত্রীরা দড়ি ধরে বরফের ঢালে অভিযান চালানোর সময় হঠাৎই লুকিয়ে থাকা এক বরফের ফাটলে পড়ে যান এক শেরপা। শেরপা ওই ফাটলের পড়ে যাওয়ার ফলে দড়িতে টান পড়ে। এর ফলে দেবাশীস মজুমদার ও সত্যরূপ সিদ্ধান্ত পরপর ওই বরফের ফাটলের মধ্যে পড়ে যান। যাকে বলে সাক্ষাৎ মৃত্যুর সঙ্গে দেখা। তখন বরফের উপরে মাথাটুকু শুধু বেরিয়ে আছে। এরকম পরিস্থিতিতে বাকি অভিযাত্রীরা নিজেদের সামলে নেন। তাঁরাই প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় দড়ি ধরে টেনে বরফের ফাটল থেকে তিন জনকে উদ্ধার করেন।

[আরও পড়ুন: ম্যাচের মাঝে হঠাৎই চলল শেন ওয়ার্নের বিজ্ঞাপন! ‘অত্যন্ত অপমানজনক’, তোপ নেটিজেনদের]

এরপরও কিন্তু দেবাশীস সাহস হারাননি। একটানা প্রায় ২১ ঘণ্টা ধরে অভিযান চালিয়ে ১৫ জুন সন্ধে নাগাদ পৌঁছে যান ইন্দ্রাসন শৃঙ্গে। পৃথিবীর অন্যতম বিপজ্জনক শৃঙ্গ জয় করার পর পার্শ্ববর্তী ৬১০০ মিটার উচ্চতার দেওটিব্বা শৃঙ্গও জয় করেন অভিযাত্রীরা।

মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেও শৃঙ্গ জয় করা দেবাশীস একরাশ হাসি মুখে জানান, ১৯৬১ সালে জাপানি অভিযাত্রীরা ইন্দ্রাসন শৃঙ্গে পৌঁছেছিলেন। তারপর আর কোনও অভিযাত্রী এই শৃঙ্গে পৌঁছাতে পারেননি। তবে প্রত্যেক পর্বতারোহীর স্বপ্ন থাকে এভারেস্ট জয়ের। আগামী দিনে দেবাশীসেরও লক্ষ্য এভারেস্ট জয় করা। তার জন্য অর্থের প্রয়োজন। তাই এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিতে চান যুবক।

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে



Leave a Reply