Image Credit source: Twitter
বিশ্বের তাবড় তাবড় বোলারদের শায়েস্তা করেছেন ব্যাটে। ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি, সুনীল গাভাসকর একবার ‘ডাকাতে’র খপ্পরে পড়েছিলেন। কোথায় ঘটেছিল সেই ঘটনা? কীভাবে রক্ষা পেলেন?
কলকাতা: গোয়ালিয়রের কনকনে শীত। সূর্য ডুবতেই চারিদিক কেমন যেন নিঝুম। শীতের দিনে সেসময় তাড়াতাড়ি কাজকর্ম সেরে ঘরে ঢুকে যাওয়াটাই দস্তুর ছিল। রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে একটু তাড়াতাড়িই বিছানায় চলে গিয়েছিলেন তৎকালীন ভারতীয় ক্রিকেট দলের তিন স্তম্ভ সুনীল গাভাসকর, গুণ্ডাপ্পা বিশ্বনাথ এবং এরাপল্লী প্রসন্নরা। হঠাৎই শীতের রাতের নিস্তব্ধতা খান খান করে দিল পরপর গুলির আওয়াজ। ব্যাটে বলে ঠোকাঠুকির শব্দ শুনে অভ্যস্ত গাভাসকর, প্রসন্নরা চমকে উঠেছিলেন। চকিতে ঘুম থেকে উঠেই দেখলেন, মুখ ঢাকা, অস্ত্র হাতে ষণ্ডামার্কা কিছু লোক ঘিরে ধরেছে। মুহূর্তে শুকিয়ে গেল গলা। বুঝতে দেরি হল না, ভিনরাজ্যে এসে ডাকাতের খপ্পরে পড়েছেন!
১৯৮০-৮১ সালের কথা। একটি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে গোয়ালিয়রে গিয়েছিল ভারতীয় দল। ম্যাচের পর বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা এবং গোয়ালিয়র রাজপরিবারের বংশধর মাধবরাও সিন্ধিয়া শিকারে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান ভারতীয় দলের সদস্যদের। রাজনীতির বাদ দিলে মাধবরাওয়ের ছিল প্যাশন গল্ফ আর ক্রিকেট। ব্যপক জনপ্রিয়, তাঁর মতো ব্যক্তিত্বের আমন্ত্রণ উপেক্ষা করার জো নেই। তার উপর সিন্ধিয়া পরিবারের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক ছিল নবাব মনসুর আলি খান পতৌদির। যাই হোক রাজপরিবারের আমন্ত্রণে শিবপুরীতে শিকার ট্রিপে যাওয়ার কথা ছিল ভারতীয় দলের সদস্যদের। রাতের খাওয়াদাওয়া করে সবে বিছানায় গা এলিয়েছেন। কারও কারও চোখও লেগে গিয়েছিল।
হঠাৎই পরপর গুলির শব্দ। গাভাসকর, বিশ্বনাথ, প্রসন্নরা চোখ বিস্ফারিত করে দেখলেন, তাঁদের ঘিরে ধরেছে কয়েকজন লোক। ষণ্ডামার্কা লোকগুলির মধ্যে একজন বলে উঠল, কাছে টাকাপয়সা, ঘড়ি-সহ দামি জিনিস যা আছে সব দিয়ে জিপে উঠে পড়ুন। বেশি চালাকি করলে কিন্তু…বাইশ গজে বিপক্ষের ত্রাস সুনীল গাভাসকর টুঁ শব্দটি করেননি। ভয়ে হয়তো গলা শুকিয়ে গিয়েছিল তাঁর। বরং বিশ্বনাথ ও প্রসন্ন বেশ হাট্টাগোট্টা ছিলেন। কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে তাঁরা জোরে জোরে বলতে থাকেন, “আমরা ভারতের টেস্ট দলের ক্রিকেটার। এই দেশের প্রয়োজন আছে আমাদের।” ক্রিকেট সেটা আবার কি? ডাকাতের দল জানিয়ে দেয়, তারা কোনওদিন ক্রিকেটের নামই শোনেনি। জিনিসপত্র খোয়া গেলেও সমস্যা নেই, প্রাণে বাঁচবেন কি না সেটাই বুঝতে পারছিলেন না গাভাসকররা।
উপরোক্ত পুরো ঘটনার কথা তাঁর বই The House of Scindias: A Saga of Power, Politics and Intrigue-তে লিখেছিলেন বর্ষীয়াণ সাংবাদিক রশিদ কিদওয়াই। সিন্ধিয়া পরিবারের এই কাছের মানুষটি তাঁর বইতে লেখেন, ডাকাতের খপ্পরে পড়ার পুরো বিষয়টি ছিল প্র্যাঙ্ক। আর এর পিছনে ছিলেন খোদ মাধবরাও সিন্ধিয়া। কিছুক্ষণ ডাকাতির নাটক চলার পর গাভাসকররা জানতে পারেন, ওই ‘ডাকাত’রা আসলে সিন্ধিয়ার কর্মচারী। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গুরু গম্ভীর বর্ষীয়াণ রাজনৈতিক নেতা যে এমন প্র্যাঙ্ক করতে পারেন তা ভাবনারও অতীত ছিল। পুরো ঘটনাটা অবাক করে দিয়েছিল ভারতীয় দলের ক্রিকেটারদের। একইসঙ্গে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন তাঁরা। তবে সিন্ধিয়ার এই পরিকল্পনা কোনওভাবেই কার্যকর হত না যদি না এর পিছনে থাকতেন মনসুর আলি খান পতৌদি। টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে সেদিনের ঘটনার পিছনে তাঁর জড়িত থাকার কথা পরে স্বীকার করেন পতৌদি।