Image Credit source: Twitter
সাদা ধবধবে, তুলতুলে রসগোল্লা। যেমন রাজকীয় দেখতে, খেতেও তেমন সুস্বাদু। রস নিংড়ে মুখে পুরতেই মনে হয়…আহা। কিন্তু জানেন কি বাঙালির প্রিয় এই মিষ্টির জন্য একবার ধুন্ধুমার বেঁধে গিয়েছিল ভারতীয় দলের অন্দরে। চড়, থাপ্পড়, টানা হ্যাঁচড়া- কিছুই বাকি থাকেনি। যার একদিক ছিলেন নভজ্যোত সিং সিধু, অন্যদিকে মনোজ প্রভাকর।
কলকাতা: ঝামেলা, বিবাদের সঙ্গে পুরনো সম্পর্ক নভজ্যোত সিং সিধুর। ক্রিকেট হোক বা রাজনীতির ময়দান, সারাজীবন ধরে বিবাদ বয়ে নিয়ে চলেছেন। এমনিতেই পঞ্জাবিদের হঠাৎ হঠাৎ মাথা গরম হওয়ার দুর্নাম রয়েছে। সিধুও এর ব্যতিক্রম নন। রাগের মাথায় তিন দশক আগের একটি বড় ভুলের ফল ভুগছেন। গাড়ি পার্কিং নিয়ে ঝামেলায় এক ব্য়ক্তিকে এমন পিটিয়েছিলেন যে পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। সেই মামলায় বর্তমানে জেল খাটছেন সিধু। ১৯৮৮ সালের ওই ঘটনার সময়ও নভজ্যোত সিং সিধু ভারতীয় দলের সদস্য। এরপর রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করেও বিবাদ গা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারেননি। জানেন কি, গরম মাথার সিধু একবার জাতীয় দলের সতীর্থকে কষিয়ে চড় মেরেছিলেন। অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিন, কপিলদেব-দের সামনেই জড়িয়েছিলেন মারামারিতে। যার একদিকে ছিলেন সিধু ও অন্যদিকে মনোজ প্রভাকর। আর ঝামেলার কারণ শুনলে বিষম খাবেন। বাঙালির প্রিয় রসগোল্লার জন্য ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুম পরিণত হয়েছিল ‘রণক্ষেত্র’-এ।
জাতীয় ক্রিকেট দলের ড্রেসিংরুম সম্পর্কে আমরা অনেক কথাই শুনে থাকি। খেলোয়াড়রা দিনের অনেকটা সময় সেখানেই কাটান। সতীর্থদের সঙ্গে সম্পর্কের বাঁধন মজবুত করতে ড্রেসিংরুমের পরিবেশ অনেকাংশে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মনকষাকষি, মনোমালিন্য সেই পরিবেশ নষ্ট করে দিতে পারে এক লহমায়। তেমনই এক ঘটনার কথা জানতে পিছিয়ে যেতে হবে ১৯৯৩ সালে। মহম্মদ আজহারউদ্দিনের নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কা সফরের জন্য গিয়েছিল ভারতীয় দল। সফরে তিনটি টেস্ট ম্যাচের সিরিজ খেলার কথা ছিল ভারতের। সেই সময় ক্রিকেটারদের সবার জন্য আলাদা কামরার ব্যবস্থা ছিল না। মনোজ প্রভাকর এবং নভজ্যোত সিং সিধু সেই সফরে রুম পার্টনার ছিলেন। দু’জনে প্রায় সমবয়সী। একইসঙ্গে কেরিয়ার শুরু করায় বন্ধুত্বও ছিল বেশ। যাই হোক, একদিন হোটেলের রুমে সকলে মিলে সিনেমা দেখার পরিকল্পনা করেন।
ক্যাপ্টেন আজহারউদ্দিনের রুমে কপিলদেব, নভজ্যোৎ সিং সিধু, মনোজ প্রভাকর মিলে ডিভিডিতে সিনেমা দেখতে শুরু করেন। সিনেমা শুরু হওয়ার পর সিধু বুঝতে পারেন ছবিটি তিনি আগেও দেখেছেন। তাই কপিলদেবকে বলেন, “একবার দেখা সিনেমা আর দেখব না। অন্য সিনেমার ডিভিডি নিয়ে আমার ঘরে যাচ্ছি।” এতে কারও আপত্তি ছিল না। কপিল পাজীর সায় মিলতেই ডিভিডির তাকের দিকে এগোতে থাকেন সিধু। তখনই শুনতে পান, অন্ধকার রুমের ভেতরে থেকে বলিষ্ঠ আওয়াজে কেউ বলে উঠলেন,”ডিভিডি মত ছুঁ না শেরী।” গলার আওয়াজটা যে প্রভাকরের তা বুঝতে সময় লাগার কথা নয়। ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে না পারলেও উচ্চবাচ্য না করে চুপচাপ সেই আগের সিনেমাটাই দেখতে শুরু করেন।
এমন সময় হঠাৎ করেই ঘরের মধ্যে রাখা রসগোল্লার দিকে নজর যায় সিধুর। নিজের জায়গা থেকে উঠে গিয়ে রসগোল্লা দিকে এগিয়ে যান। ফের গমগম করে বেজে ওঠে সেই কন্ঠ। “রসগুল্লা মত ছুঁ না শেরী।” ভারতীয় দলের অন্দরে সিধুকে ‘শেরী’ নামেই ডাকা হত। দ্বিতীয়বারের ঘটনায় আর চুপ থাকতে পারেননি তিনি। প্রচণ্ড রেগে গিয়ে মনোজ প্রভাকরকে প্রথমে কষিয়ে একটা থাপ্পড় লাগান। মারের হাত থেকে বাঁচতে প্রভাকর পালানোর চেষ্টা করলে দুটি বিছানার মাঝের অংশে পড়ে যান। তা সত্ত্বেও সিধুর রাগ কমেনি। বিছানার তলা থেকে প্রভাকরকে হিড়হিড় করে টেনে বের করেন। বাকিরা না আটকালে সেদিন মনোজ প্রভাকরকে মেরে ‘তক্তা’ বানিয়ে দিতেন পাঞ্জাব-জাত এই ক্রিকেটার।
নভজ্যোত সিং সিধুর দাবি ছিল, দলের সবার জন্য রসগোল্লা তিনিই এনেছিলেন। উল্টোদিকে প্রভাকরের বক্তব্য, সিধু নয়, দলের বাইরের একজন রসগোল্লা নিয়ে আসেন। তিনি সিধুকে মিষ্টিতে হাত দিতে বারণ করেছিলেন কারণ রুম সার্ভিসকে ততক্ষণে প্লেট ও চামচ নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল। প্লেট চামচ এলে সবার মধ্যে মিষ্টি ভাগ করে দেওয়া হত। রাগের চোটে প্রভাকর এও বলেন, সিধু রসগোল্লায় হাত দিলে গোটা ডিব্বাটাই বাইরে ফেলে দেবেন তিনি। যাই হোক সেই রাতের মতো দু’জনে চুপ করে যান। এক রুমে থাকলেও কথাবার্তা বন্ধ ছিল। দলের ড্রেসিংরুমে এর প্রভাব বেশ কিছুদিন ধরে চলেছিল। পুরো ঘটনাটি সাংবাদিক শিবেন্দ্র কুমার সিং তাঁর লেখা ‘ক্রিকেট কে অনসুনে কিস্সে’ বইটিতে উল্লেখ করেছেন।
মাঠের বাইরে যাই হোক, বাইশ গজে দু’জনের বোঝাপড়া ছিল দারুণ। সেবার শ্রীলঙ্কা সফরে একটি টেস্ট জেতে ভারত। সেই জয়ের পিছনে সিধু ও প্রভাকরের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ও দ্বিতীয় ইনিংসে যথাক্রমে ৮২ ও ১০৪ রান করেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান সিধু। অপরদিকে মনোজ প্রভাকর প্রথম ইনিংসে ৪ রান করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর ব্যাটে আসে অনবদ্য ৯৫ রান। এছাড়া ৬টি উইকেট ঝুলিতে পুরেছিলেন। সেবার ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ পুরস্কার পান মনোজ প্রভাকরকে।