Image Credit source: নিজস্ব চিত্র
বিশ্বের তাবড় তাবড় প্রতিযোগীদের সঙ্গে পাল্লা দিতে তৈরি উদয়নারায়ণপুরের ছেলে কর্ণ বাগ। অলিম্পিকে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার যে স্বপ্ন লালন করে এসেছেন। তা পূর্ণ করতে হলে এই মঞ্চ কর্ণের কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
উদয়নারায়ণপুর (হাওড়া): বিশ্ব মঞ্চে এ বার বাংলার অ্যাথলিট। অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের (World Athletics U20 Championships) জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছেন হাওড়ার অ্যাথলিট কর্ণ বাগ (karna Bagh)। ২ অগস্ট থেকে কলম্বিয়ার কালি (Cali)শহরে বসছে চ্যাম্পিয়নশিপের আসর। ৪০০ মিটার হার্ডেলসে পদক জয়ের স্বপ্ন নিয়ে শীঘ্রই কলম্বিয়ার বিমান ধরবেন কর্ণ। সম্প্রতি গুজরাটের নাদিয়া ফোর্থ কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত জাতীয় জুনিয়র ফেডারেশন কাপে অংশ নেন তিনি। ৪০০ মিটার হার্ডেলসে প্রথম স্থান অধিকার করেন। মাত্র ৫২.৭ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করে সোনা জেতেন। এতেই কর্ণের কাছে বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ চলে আসে । বিশ্ব মঞ্চে বাংলার অ্যাথলিটের অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে গর্বের।
চলতি বছরে রাজ্য চ্যাম্পিয়নশিপে তিনটে সোনা জিতেছেন কর্ণ। তারপরই জাতীয় জুনিয়র ফেডারেশন কাপে অংশ নেন। সদ্য উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পার করা হাওড়ার এই অ্যাথলিট এ বার আন্তর্জাতিক স্তরে নিজের প্রতিভার ছাপ রাখতে চান। অস্বচ্ছল পরিবারের ছেলে কর্ণের সব চড়াই উতরাইয়ের সাক্ষী প্রশিক্ষক রাজদ্বীপ কারক। মাত্র ছয় বছর বয়সে তারকেশ্বরের একটি কোচিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু। রাজদ্বীপ কারকের তত্ত্ববধানে বছর দশেক ধরে অনুশীলন করছেন। কোচ-অ্যাথলিটের দিনরাত পরিশ্রমের সুফল মিলেছে। আন্তর্জাতিক স্তরে ছাত্রের অংশগ্রহণ নিয়ে তিনি বললেন, “এতদিন কর্ণ পুকুরে সাঁতার কাটছিল। এ বার সাগরে গিয়ে পড়ল। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যোগ্যতা অর্জন করে কর্ণ দেশের মান বাড়িয়েছে।” কোচ বলছেন, বিশ্বের তাবড় তাবড় প্রতিযোগীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজের দক্ষতা সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা হবে কর্ণের। অলিম্পিকে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার যে স্বপ্ন লালন করে এসেছেন, তা পূর্ণ করতে হলে এই মঞ্চ কর্ণের কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
আর্থিক পরিস্থিতি কোনওদিন ভালো নয় কর্ণের। হাওড়ার উদয়নারায়নপুরের আসুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা। বাবা বিকাশ বাগ একজন ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ী। ভালো জুতো, খেলার সাজ সরঞ্জামের তেমন জোগান ছাড়াই লড়ে গিয়েছেন। ছেলের প্রতিভা দেখে গর্বিত পরিবারও। কোনওক্রমে সংসার চললেও ছেলেকে প্রতিমুহূর্তে উৎসাহ দিয়ে যান বিকাশ বাবু। চেয়ে চিন্তে হলেও ক্রীড়া সরঞ্জামে খামতি না রাখার চেষ্টা করেন। প্রতিমুহূর্তে জীবনযুদ্ধে লড়াই করে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। বিভিন্ন সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কোচ রাজদ্বীপ কারক। সবার মিলিত প্রয়াসে কর্ণ আজ এই পর্যায়ে। তাঁর কলম্বিয়া পাড়ি দেওয়ার যাবতীয় দায়িত্ব এখন অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার ।
জেলা ও রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় সোনা, রূপোর পদক নিয়ে পঞ্চাশের বেশি মেডেল রয়েছে কর্ণের ঝুলিতে। পদকের ভিড়ে একটা আন্তর্জাতিক মেডেলের অভাব। অনূর্ধ্ব ২০ অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে সেই অভাব পূরণ করে কলম্বিয়ায় তেরঙ্গা ওড়াতে তৈরি হাওড়ার কর্ণ। তারই লক্ষ্যে কোচের কড়া তত্ত্বাবধানে তারকেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে জোরকদমে চলছে অনুশীলন। হাতে আর মাত্র একমাস। তারপরই বিশ্ব মঞ্চের অগ্নিপরীক্ষায় নেমে পড়তে হবে যে।