Image Credit source: Twitter
আমাদের আশেপাশে এমন অনেক কিছুই ঘটে সাদা চোখে যার ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অস্বাভাবিক কোনও অভিজ্ঞতাকেই আমরা অলৌকিক বা ভৌতিক ঘটনা বলি। আমার, আপনার মতো সাধারণ মানুষ বললে লোকে হয়তো হেসে উড়িয়ে দেবে। যদি বলি স্বয়ং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ভৌতিক ঘটনার সাক্ষী! তাহলে মানবেন তো?
লন্ডন: ইংল্যান্ডের উত্তর পূর্বের শহর ডারহাম। পুরনো স্থাপত্যে মোড়া শহরটির আনাচে কানাচে লুকিয়ে আছে অনেক কাহিনী। পরতে পরতে ইতিহাস। পাথরের উঁচু দূর্গগুলিকে নবরূপ দিলেও এর সঙ্গে জড়িত কাহিনীকে মুছে ফেলা যায়নি। শহরের বুকে অবস্থিত তেমনই এক স্থান লুমলি ক্যাসেল(Lumley Castle)। চেস্টার লে স্ট্রিটে চতুর্দশ শতাব্দীর একটি চতুর্ভুজাকার দুর্গ। দূর থেকে দেখলেই কেমন যেন গা ছমছমে (Paranormal Activity) অনুভূতি। স্যার ব়্যাল্ফ লুমলির তৈরি এই দুর্গকে ঘিরে কাউন্টি ডারহামে নানা কথা ঘুরে বেড়ায়। ইংল্যান্ড সফরে যাওয়া ভারতীয় ক্রিকেট দলের এতকিছু জানার কথা তো নয়। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া লুমলি ক্যাসেল দেখে চোখ জুড়িয়ে গিয়েছিল সৌরভদের (Sourav Ganguly)। অধিনায়ক বলে সবচেয়ে বড় ঘরটা পেয়েছিলেন প্রিন্স অব ক্যালকাটা।
ইংল্যান্ডের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। ক্রিকেটের মক্কায় স্বপ্নের টেস্ট অভিষেক। ২০০২ ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি জয়। লর্ডসের ব্যালকনিতে জামা উড়িয়ে সেই বন্য উদযাপন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্রিকেট কেরিয়ার নিয়ে কথা উঠলে যেগুলিকে এড়িয়ে যাওয়া খুব মুশকিল। সৌরভের ইংল্যান্ড সফর মানেই অন্যরকম কিছু। সেই দেশেই অদ্ভুত পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। মেরুদন্ড দিয়ে হিমস্রোত বয়ে গিয়েছিল। গাছগাছালি, সবুজে ঘেরা অথচ অত্যাধুনিক লুমলি ক্যাসেল হোটেলের ভৌতিক অভিজ্ঞতা এখনও কাঁটা দেয় সৌরভকে।
ডারহামের চেস্টার লে স্ট্রিটে ছিল একটি ম্যাচ। ভারতীয় দলের জন্য স্টেডিয়ামের কাছাকাছি লুমলি ক্যাসেল বুক করা হয়। অনুশীলনে হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর সৌরভকে হোটেলের নরম বিছানা যেন ডাকছিল। পরদিন ছিল ম্যাচ। রাতের খাবার খেতে যাওয়ার আগে একবার ঘরে যান। ফিরে এসে রুমের মোটা পর্দা টেনে, সব আলো বন্ধ করে বিছানায় গা এলিয়ে দেন। চোখ বন্ধ করতেই ঘুম এসে যাওয়ার কথা। অদ্ভুতভাবে সেদিন কিছুতেই দু চোখের পাতা এক করতে পারছিলেন না সৌরভ। তার অবশ্য কারণও রয়েছে। নিস্তব্ধ ঘরের বাথরুমের কল থেকে অনবরত পড়ছিল জল। খানিক এপাশ ওপাশ করে ঘরের আলো জ্বালিয়ে কল বন্ধ করতে বাথরুমে গেলেন সৌরভ। কিন্তু কল তো বন্ধ! তাহলে কীসের শব্দ ছিল ওটা? পাশের রুম থেকে আসতে পারে শব্দটা। হতে পারে স্বপ্ন দেখছিলেন। এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘণ্টা দেড়েকও হয়নি, চকিতে ঘুম ভেঙে যায় কল থেকে জল পড়ার শব্দে। বাথরুমে গিয়ে সবকিছু ভালোভাবে খুঁটিয়ে দেখেন। নাহ্, কোনও সমস্যা নেই। তাহলে শব্দটা আসছে কোথা থেকে? আর আলো বন্ধ করার সাহস হল না। ঘুম উবে গিয়েছে। গোটা রাত ডারহামের নিস্তব্ধতা শুনে কাটাতে পারবেন না। তৃতীয়বারের জন্য শুরু হল কলে জল পড়া। আর থাকতে পারলেন না সৌরভ। বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নেমে আতঙ্কে দিলেন দৌড়। পাশের ঘরেই রবিন সিং। আতঙ্কের কথা জানালেন না। তবে রাতটা সেদিন সতীর্থর ঘরেই কাটালেন।
এরপর ইংল্যান্ডে বহুবার গিয়েছেন সৌরভ। কিন্তু লুমলি ক্যাসেলের আর ধার মাড়াননি। ২০০৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররাও ওই হোটেলে ভৌতিক কান্ডকারখানার সম্মুখীন হন। সেসব ঘটনা শুনে শিহরিত হয়েছিলেন। কথিত আছে, ব়্যাল্ফ লুমলির প্রথমা স্ত্রী লিলিকে এই দুর্গের কুয়োতে ছুড়ে ফেলে খুন করা হয়। যার বিন্দুবিসর্গ জানতেন না ব়্যাল্ফ। পরে ব়্যাল্ফ অন্য বিয়ে করলেও লিলি-র অশরীরী আত্মা দুর্গ ছেড়ে যায়নি। ক্যাপ্টেন হওয়ার সুবাদে সেদিন যে বড় ঘরটা পেয়েছিলেন সৌরভ, সেটাই কি তবে মালকিন লিলি লুমলির ঘর?