Image Credit source: Twitter
সোমালিয়ার মতো গরীব দেশ থেকে মো-র মতো লক্ষ লক্ষ শিশু যে পাচার হয়ে যাচ্ছে, তার খোঁজ কেই বা রাখে। শিশু শ্রমিক বানিয়ে তাদের শৈশব চুরি করে নেওয়া হচ্ছে। মো না হয় যাবতীয় প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন। কিন্তু যাঁরা অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছে, তাঁদের কী হবে?
লন্ডন: মাত্র ৯ বছর বয়সে বেআইনি ভাবে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, শিশু শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা। এমন বিস্ফোরণ এই পর্যন্ত হলেও না হয় ধাক্কাটা সামলে পারত ক্রীড়া দুনিয়া। যে নামে তাঁকে সারা বিশ্ব চেনে, তাও আসল নয়! হুসেইন আব্দি কাহিন ছিল তাঁর নাম! এক মহিলা তাঁকে সোমালিয়া থেকে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসার সময় নাম পাল্টে দিয়েছিলেন। স্পোর্টস ওয়ার্ল্ড রীতিমতো স্তম্ভিত এই তথ্য়ে। হবে নাই বা কেন? তাঁর নাম যদি মো ফারাহ (Mo Farah) হয়, তা হলে নড়েচড়ে বসতেই হবে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অলিম্পিকের (Olympics) ৫ ও ১০ হাজার মিটারে জোড়া সোনা জেতার অ্যাথলিট এই তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন। যাঁর সাফল্যের সঙ্গে তুলনা হয় উসেইন বোল্টের (Usain BOlt), তাঁর এই দাবি নিয়ে রীতিমতো চাঞ্চল্য পড়ে গিয়েছে। সোমালিয়ার মতো গরীব দেশ থেকে মো-র মতো লক্ষ লক্ষ শিশু যে পাচার হয়ে যাচ্ছে, তার খোঁজ কেই বা রাখে। শিশু শ্রমিক বানিয়ে তাদের শৈশব চুরি করে নেওয়া হচ্ছে। মো না হয় যাবতীয় প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন। কিন্তু যাঁরা অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছে, তাঁদের কী হবে, মো-র সাক্ষাৎকারের পর এই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
২০১২ ও ২০১৬ সালের লন্ডন এবং রিও অলিম্পিকে ৫ ও ১০ হাজার মিটারে জোড়া সোনা জিতেছিলেন। ধারাবাহিকতার জন্য তাঁকে এই দুটো ইভেন্টের উসেইন বোল্ট বলা হয়। রিফিউজি হিসেবে সোমালিয়া থেকে ৯ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে পা দিয়েছিলেন মো। সেই তিনিই দাবি করেছেন, মো এলেও তাঁর বাবা-মা কখনওই ইংল্যান্ডে আসেননি। ঘটনা হল, দেশের অস্থির পরিস্থিতির সময় মোর বাবা মারা যান। তখন মাত্র ৪ বছর বয়স তাঁর। মা আয়েশার সঙ্গে সোমালিল্যান্ড নামে এক জায়গায় থাকতেন মো এবং তাঁর আর এক ভাই।
মো বলেছেন, ‘আসল ঘটনা হল, সবাই আমাকে যা মনে করে, আমি তা নই। সবাই ভাবে আমার নাম বোধহয় মো ফারাহ। কিন্তু এটা আমার নামই নয়।’
যে মহিলা সোমালিয়া থেকে মো-কে নিয়ে এসেছিলেন ইংল্যান্ডে, তিনিই বলেছিলেন, আত্মীয়দের সঙ্গে রাখা হবে তাঁকে। যে কারণে মো-র নাম বদলানো দরকার। সেই অনুযায়ীই ইংল্যান্ডে আসার যে জাল নথিপত্র বানানো হয়েছিল, তাতেই ছিল তাঁর মহম্মদ ফারাহ। আর তা নিয়ে মো বলছেন, ‘আমার গল্প সবাইকে বলার পিছনে একটাই কারণ, আমি ‘আমি’ হয়েই থাকতে চাই। কোনও কিছু গোপন করে বাঁচতে চাই না।’
২০১০ সালে স্ত্রী তানিয়াকে বিয়ে করেছিলেন মো। সেই সময়ই সব খুলে বলেছিলেন তিনি। ছেলেবেলায় ফিরে গিয়ে মো বলছেন, ‘ইংল্যান্ডে পা দেওয়ার পরই আমার আত্মীয়দের যে ঠিকানা ছিল, তা ওই মহিলা আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দেন। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম, আমি ঘোরতর বিপদে পড়েছি। একটা বাড়িতে কাজে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় আমাকে। খাবার চাইলে বলা হত, যদি নিজের পরিবারকে দেখতে চাও, তা হলে মুখ বন্ধ করে রেখো। বাথরুমে ঢুকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দিনের পর দিন কাঁদতাম আমি।’
কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার দরুণ সারা বিশ্বেই কখনও না কখনও কাউকে না কাউকে যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে। তারই বিরুদ্ধে এখন মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গরা। ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার সেই বিপ্লবেরই অঙ্গ। মো ফারার এই বিস্ফোরণ অসংখ্য কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরের জীবন যে খানিকটা পাল্টাতে সাহায্য করবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।