সচিন তেন্ডুলকর থেকে শুরু করে বিশ্বের তাবড় তাবড় ব্য়াটার আতঙ্কে ভুগতেন। যাঁকে ক্রিকেট মহলে ‘স্লো ডেথ’ বলে ডাকা হত, সেই রুডি কোয়ের্টজেন মারা গেলেন পথ দুর্ঘটনায়।
Image Credit source: Twitter
কলকাতা: যেন মৃত্যু পরোয়ানা লেখা থাকত তাঁর বাঁ হাতের তর্জনীতে। উইকেটের পিছনে দাঁড়ানোর সময় দু’হাত জড়ো করে দাঁড়াতেন। কোনও আবেদন উঠলে, খুব ধীরে, মন্থর গতিতে উঠত তাঁর বাঁ হাতের তর্জনী। আবেদনে সাড়া দিতে আর কারও এতটা সময় লাগত না। সচিন তেন্ডুলকর (Sachin Tendulkar) থেকে শুরু করে বিশ্বের তাবড় তাবড় ব্য়াটার আতঙ্কে ভুগতেন। যাঁকে ক্রিকেট মহলে ‘স্লো ডেথ’ বলে ডাকা হত, সেই রুডি কোয়ের্টজেন (Rudi Koertzen) মারা গেলেন পথ দুর্ঘটনায় (Road Accident)। ৭৩ বছর বয়স হয়েছিল রুডির। অনেক বছর আম্পায়ারিং থেকে সরেছেন। কিন্তু ক্রিকেট বিশ্ব তাঁকে মনে রেখে দিয়েছে। নিখুঁত সিদ্ধান্ত নিতে পারার জন্য। আর খুব ধীরে তুলে ধরা তাঁর বাঁ হাতের তর্জনীর জন্য।
গত বৃহস্পতিবারের ঘটনা। দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা বে-র ডেসপ্যাচে থাকতেন। গল্ফ খেলার জন্য কেপ টাউনে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথেই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন রুডি। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া বিশ্ব ক্রিকেটে। তাঁর ছেলে বলেছেন, ‘কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে বাবা একটা গল্ফ টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়েছিলেন। সোমবার ফেরার কথা ছিল ওঁদের। কিন্তু ওঁরা অন্য কোথাও গল্ফ খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
মৃত্যু পরোয়ানা যতই লেখা থাক তাঁর আঙুলে, রুডি ছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা আম্পায়ার। ডেভিড শেফার্ড, স্টিভ বাকনার, বিলি বাউডেনদের মতো ক্লাসিক আম্পায়ার ধরা হত তাঁকে। যাঁর সিদ্ধান্ত ঘিরে বিতর্কের খুব একটা অবকাশ ছিল না। আম্পায়ার হিসেবে ব্যক্তিত্ব কতটা জরুরি, সেটাও তুলে ধরেছিলেন রুডি। ক্রিকেট প্রেমেই থেকে গিয়েছিলেন চিরকাল। দক্ষিণ আফ্রিকার রেলে চাকরি করার সময় লিগ ক্রিকেট খেলতেন। ১৯৮১ সাল নাগাদ ওই লিগ ক্রিকেটেই তাঁকে আম্পায়ার হিসেবে দেখা যায়। ৪৩ বছর বয়সে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে আম্পায়ারিং। বর্ণবিদ্বেষের জেরে লম্বা নির্বাসন কাটিয়ে আবার ক্রিকেটে ফিরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৯৯২-৯৩ সালে রান আউট বিতর্ক মেটাতে আইসিসি নিয়ে টিভি রিপ্লে। টিভি আম্পায়ার হিসেবেই উত্থান হয়েছিল তাঁর। ১৯৯৭ সালে আইসিসির আম্পায়ার্স এলিট প্যানেলে ঢুকে পড়েন।
রুডিকে নিয়ে গল্পের শেষ নেই। ক্রিকেটাররা তাঁকে রীতিমতো ভয় পেতেন। জাক কালিসের মতো বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার বলেছেন, ‘প্লেয়ারদের মতোই শীর্ষে থাকলে সেরা হতে হয় আম্পায়ারদেরও। রুডি সেটা দীর্ঘ সময় ধরে করে দেখাতে পেরেছিল। ওকে ক্রিজে আম্পায়ার হিসেবে দেখতে পেয়ে আশ্বস্ত হয়েছিলাম একবার।’
সচিনের সেই গল্পটা নিজের ক্রিকেট অভিজ্ঞতার বই ‘স্লো ডেথ’এ লিখে গিয়েছেন। কী ঘটেছিল সচিনের সঙ্গে? তাঁর কথায়, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার পেস বোলার ব্রেট স্কালটজ তখন বল করছিল। ওর বলেই উইকেটকিপার ডেভ রিচার্ডসনের হাতে খোঁচা দেয় তেন্ডুলকর। দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটাররা আবেদন করে। আমিও সচিনকে আউট দিয়েছিলাম। প্যাভিলিয়নে ফেরার ওর চোখে জল দেখেছিলাম। সচিন এগিয়ে এসে আমাকে বলেছিল, আমি আউট হইনি। তখন স্নিকোমিটার ছিল না। ফলে, জানা যায়নি সচিন আউট হয়েছিল কিনা।’
১৯৯২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আম্পায়ার হিসেবে দেখা গিয়েছে রুডিকে। ১০৮ টেস্ট, ২০৯ ওয়ান ডে, ১৪টা টি-টোয়েন্টি ম্য়াচে আম্পায়ারিং করেছেন। টিভি আম্পায়ার হিসেবে পরিচালনা করেছেন বেশ কিছু ম্যাচ। ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সিঙ্গাপুরে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোকাকোলা কাপের ফাইনালে ঘুষের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল রুডিকে। কিন্তু পত্রপাঠ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তবে মাঠে বিতর্কেও পড়েছেন বারবার। কিন্তু সে সবের উর্ধ্বে উঠে আম্পায়ার হিসেবে সেরা দেওয়ার চেষ্টাই করেছিলেন।