ছেলেবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি একটা আলাদা ভালোবাসা ছিল রেনুকার। তবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে যে সাফল্য ধরা দিয়েছে রেনুকার হাতে, তা সম্ভব হয়েছে তিনি তাঁর মা ও দাদাকে পাশে পেয়েছিলেন বলে।
রেনুকার সাফল্যের নেপথ্যে বাবার ক্রিকেট প্রেম-মায়ের সমর্থন
নয়াদিল্লি: ক্রিকেটের (Cricket) প্রতি অগাধ ভালোবাসা ছিল বাবার। কিন্তু বাবার সান্নিধ্য বুঝে ওঠার বয়স হওয়ার আগেই রেনুকা সিং ঠাকুর (Renuka Singh Thakur) হারিয়ে ফেলেন তাঁর বাবাকে। রেনুকার যখন তিন বছর বয়স সেই সময় তাঁর বাবা কেহর সিং ঠাকুর মারা যান। বাবার মুখটা নিশ্চিতভাবে রেনুকার কাছে ঝাপসা। কিন্তু তিনি বাবার জন্য খোদাই করেছেন একখানা ট্যাটু। যেখানে রয়েছে তাঁর বাবার জন্ম ও মৃত্যু তারিখ। এবং বাবার কোলে রয়েছে একটি বাচ্চা মেয়ে। রেনুকার বাবা হিমাচলপ্রদেশের সেচ ও জনস্বাস্থ্য বিভাগে কাজ করতেন। তিনি মারা যাওয়ার পর রেনুকার মা সুনীতা দেবী চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে সেচ ও জনস্বাস্থ্য বিভাগে যোগ দেন। ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা থেকেই রেনুকার বাবা তাঁর দাদার নাম রাখেন বিনোদ। দাদার হাত ধরেই ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ রেনুকার। ছেলেবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি একটা আলাদা ভালোবাসা ছিল রেনুকার। তবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে যে সাফল্য ধরা দিয়েছে রেনুকার হাতে, তা সম্ভব হয়েছে তিনি তাঁর মা ও দাদাকে পাশে পেয়েছিলেন বলে।
রেনুকার কোচ পবন সেন বার্মিংহ্যাম কমনওয়েলথের আগে তাঁর ছাত্রীকে বলেছিলেন, “প্রথম ম্যাচেই এমন পারফর্ম করে দেখাবে, যাতে প্রতিটা ম্যাচে খেলার সুযোগ পাও।” কমনওয়েলথে প্রথম ম্যাচ থেকেই নজর কেড়েছিলেন রেনুকা। এ বারের কমনওয়েলথ গেমসে সর্বাধিক উইকেটও রয়েছে রেনুকার নামের পাশে। মোট ১১টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। কোচ পবনের কথায় রেনুকার আসল অস্ত্র ইনসুইং। ইনসুইং ইয়র্কার দিয়ে তিনি প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের কাত করতে পারেন।
রেনুকার মা বলেন, “আমার স্বামী ক্রিকেট পছন্দ করতেন এবং আমাদের বড় ছেলে বিনোদের নাম রেখেছিলেন তার প্রিয় ক্রিকেটার বিনোদ কাম্বলির নামে। যখন তিনি অসুস্থতার জন্য মারা যান, তখন আমাদের পরিবারের কাছে একটি কঠিন সময় ছিল কারণ রেণুকার বয়স ছিল মাত্র তিন বছর। যখন আমি আমার স্বামীর জায়গায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসাবে কাজ পেয়েছিলাম, তার মানে আমি জানতাম যে আমাকে রোহরুতে দিন কাটাতে হবে।”
মাত্র ১৪ বছর বয়সেই বাড়ি থেকে দূরে চলে যেতে হয় রেনুকাকে। রোহরু থেকে তিনি যান হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অ্যাকাডেমিতে। তবে রেনুকার পাশে দাঁড়ানোর জন্য ছেলের স্বপ্ন পূরণ করাতে পারেননি সুনীতা দেবী। রেনুকার দাদা বিনোদও ভালো ক্রিকেট খেলতেন। কিন্তু তাঁর মায়ের সামর্থ্য ছিল না দুই ভাইবোনকে ক্রিকেট খেলার জন্য সমর্থন করার। রেনুকার কোচ পবন বলেন, “বিনোদও ভালো ক্রিকেট খেলত। তবে তার মায়ের সামর্থ্য ছিল না দু’জনকে খেলার জন্য সমর্থন করার মতো। ক্রিকেট যথেষ্ট ব্যয়বহুল। তাই তিনি রেনুকাকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে তার এই সিদ্ধান্ত কিন্তু সত্যিই কাজে লেগেছে।”