২০০৭ সালেই টি-২০ বিশ্বকাপের সুবাদে খুশির হাওয়া বয়েছিল ভারতে।
ক্রিকেটের মহারণ : ফেলে আসা গল্পের খোঁজে TV9 বাংলা
২৮ অগাস্ট ফের ভারত-পাক মহারণ। এশিয়া কাপে ভারত-পাক (India vs Pakistan) মহারণের কথা মাথায় রেখে এই দুই দেশের ক্রিকেট ইতিহাস থেকে বাছাই করা কিছু ঘটনা তুলে ধরল TV9 Bangla। ২০০৭ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বোল আউটে জিতেছিল ভারত। কেমন ছিল ২০০৭ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ধোনিদের সেই বোল আউট জয়? সেই গল্প শোনালেন সঙ্ঘমিত্রা চক্রবর্তী। আজ তার সপ্তম কিস্তি।
১৯৮৬ সালের ১৮ এপ্রিল… দিনটা এখনও ভোলেননি ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীরা। সে বছর এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছিল ভারত-পাকিস্তান। শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সেই ম্যাচ গড়িয়েছিল শেষ বলে। আর গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে সেই ম্যাচে ভারতকে হারিয়েছিল পাকিস্তান। শেষ ওভারের শেষ বল অবধি উত্তেজনার পারদ উপচে পড়ছিল গ্যালারি জুড়ে। শেষ বলে চেতন শর্মাকে ছয় মেরে পাকিস্তানকে জিতিয়েছিলেন জাভেদ মিয়াঁদাদ। তারপর দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছিল ২১টা বছর… ততদিনে ক্রিকেট দুনিয়ায় পা রেখেছে ক্ষুদ্রতম ফর্ম্যাট, টি-২০। সেই সময় অনেকেই এই ফর্ম্যাটের পক্ষে ও বিপক্ষে গিয়েছিলেন। ২০০৭ সালে ফের মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-পাক। আর ম্যাচ গড়িয়েছিল শেষ বলে। শুধু ফর্ম্যাটটাই যা আলাদা।তারপর সেই ঐতিহাসিক বোল আউট।
২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে আয়োজিত একদিনের বিশ্বকাপে গ্রুপ লিগ থেকেই বিদায় নিয়েছিল রাহুল দ্রাবিড়ের ভারত। বিশ্বকাপ যাত্রায় অনাকাঙ্খিত হোঁচট খেয়ে ভেঙে পড়েছিল ভারতীয় দলের ক্রিকেটাররা। ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীরাও সেই হারটা ভুলতে পারেনি। আবার ২০০৭ সালেই টি-২০ বিশ্বকাপের সুবাদে খুশির হাওয়া বয়েছিল ভারতে। টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটের প্রথম বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়েছিল ভারত। ২০০৭ সালটা ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের একদিকে হতাশা ও অন্যদিকে সাফল্য দিয়েছে। ২২ গজে ভারত-পাক মহারণ মানেই চারদিকে উত্তাপ ছড়াবে সেটাই স্বাভাবিক। যুযুধান দুই প্রতিপক্ষের ব্যাট-বলের লড়াই দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
২০০৭ সালেই প্রথম বার টি-২০ বিশ্বকাপ হয়েছিল। সে বার বিশ্বকাপ বসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপের অভিষেকেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে তরুণ তুর্কিরা কামাল দেখিয়েছিলেন। সে বারের বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে ছিলেন না সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল দ্রাবিড়ের মতো সিনিয়র ক্রিকেটাররা। ধোনির হাত ধরে ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল। ২০০৭ সালের কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের মুখে নামার কথা ছিল ভারতের। কিন্তু বৃষ্টিতে সেই ম্যাচ ধুয়ে যায়। যার ফলে, দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল ভারত।
সেই বিশ্বকাপে দু’বার পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল ভারত। আর দু’বারই জিতেছিল ভারত। সেই ম্যাচে টসে জিতে শুরুতে ধোনিদের ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন পাক অধিনায়ক শোয়েব মালিক। মহম্মদ আসিফ ভারতের ওপেনিং জুটিকে শুরুতেই ফিরিয়ে দেন। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ জুটিও সেই অর্থে দাগ কাটতে পারেনি। পঞ্চম জুটিতে মহেন্দ্র সিং ধোনি ও রবীন উথাপ্পা কিছুটা টানেন দলকে। গৌতম (০), সেওয়াগ (৫), যুবরাজের (১) মতো ক্রিকেটারদের উইকেট খুইয়ে প্রাথমিক ধাক্কা খেয়েছিল ভারত। সব মিলিয়ে ১৪১ রান তুলেছিলেন ধোনিরা। রান তাড়া করতে গিয়ে পাকিস্তানের ওপেনিং জুটিও ভরসা দিতে পারেনি। শেষ অবধি সেই ম্যাচ টাই হয়েছিল। এরপরই বোল আউটে ৩-০ জিতেছিল মেন ইন ব্লু। মিসবা উল হক যদিও দুর্ঘটনা ঘটানোর জন্য তৈরি ছিলেন। তবে ভাগ্যদেবী সঙ্গ দিয়েছিল ভারতের। শেষ বলে রান আউট হয়ে যান মিশবা। এরপর ম্যাচের ফয়সলা হয় বোল আউটে। ২০০৭ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে সেই প্রথম বার বোল আউটে জয়ী দলকে বেছে নেওয়া হয়েছিল।
এক নজরে ভারত-পাকিস্তান ২০০৭ সালের টি-২০ বিশ্বকাপের বোল আউট…
প্রথম রাউন্ড:
ভারতের হয়ে প্রথমেই এগিয়ে আসেন বীরেন্দ্র সেওগায়। ধোনি স্টাম্পের পিছনে অপেক্ষা করছিলেন। সেওয়াগের মুখে ছিল চওড়া হাসি। তিনি এগিয়ে গিয়ে দ্রুত গতিতে বল করলেন। যা গিয়ে লাগল স্টাম্পে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের হয়ে প্রথমেই ইয়াসির আরাফাত এগিয়ে আসেন। তিনি ফুল টস বল দেন। যা স্টাম্পে লাগেনি।
দ্বিতীয় রাউন্ড:
১-০ এগিয়ে থেকে বল হাতে আসেন হরভজন সিং। তিনিও দ্রুত গতিতে নিখুঁত নিশানায় বল করেন। যা গিয়ে লাগে সোজা স্টাম্পে।
এ বার পাকিস্তানের হয়ে চেষ্টা করেন উমর গুল। তিনিও স্টাম্পে বল ছোঁয়াতে পারেননি।
তৃতীয় রাউন্ড:
পরপর দুটো রাউন্ডে সেওয়াগ ও হরভজন স্টাম্প নাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তৃতীয় বার বল হাতে এগিয়ে আসেন রবীন উথাপ্পা। তিনিও সফল ভাবে স্টাম্প উড়িয়ে দেন।
উল্টোদিকে থাকা পাকিস্তান প্রবল চাপে ছিল। তৃতীয় প্রয়াসের জন্য এগিয়ে আসেন শাহিদ আফ্রিদি। তিনিও পারেননি বল স্টাম্পে ছোঁয়াতে। বোল আউটে ৩-০ জিতে যায় ভারত।