মনে পড়ে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের চক্করে প্রথম জেলের ঘানি টানা পাক অধিনায়ক সেলিম মালিককে?


যে ক্রিকেটাররা বুকিদের কাছ থেকে লোভনীয় টাকার টোপ লুফে নেন, তাঁরা কখনও ম্যাচ গড়াপেটা, তথ্য পাচার, ইচ্ছাকৃতভাবে বিপক্ষ দলকে বেশি রান দেওয়া এই রকম একাধিক অপকর্ম করে থাকেন। ম্যাচ ফিক্সিং করে জেলের ঘানি টানতে হয়েছে, এমন ক্রিকেটারও রয়েছেন।

বিতর্কের ক্রিকেট : ক্রিকেটের বিতর্ক

আলো আর অন্ধকার, দুই-ই পা মেলায় ইতিহাসের মিছিলে। উজ্জ্বলতম অতীত যেমন ফিরে আসে স্মৃতিতে, তেমনই চুপিসারে হানা দেয় কলঙ্কও। ক্রিকেট ইতিহাস যেমন রেকর্ড, সাফল্য, নায়কদের খোঁজ দেয়, তুলে ধরে বিতর্কিত ঘটনাও। ক্রিকেট ইতিহাসের মহাবিতর্কিত নানা গল্পের খোঁজ দিল TV9 Banglaসঙ্ঘমিত্রা চক্রবর্তী তুলে ধরলেন একাদশতম কিস্তি

ক্রিকেটকে বলা হয়ে থাকে ‘জেন্টলম্যানস গেম’। এই ‘জেন্টলম্যানস গেম’ বিভিন্ন সময় কালিমালিপ্ত হয়েছে। কোনও ক্রিকেটার কখনও নিজেকে বিকিয়ে দিয়েছেন মাত্র কয়েকটা টাকার জন্য। আবার কখনও বা তাঁরা মোটা অঙ্কের টাকার টোপ পেয়েছেন বুকিদের কাছ থেকে। যে ক্রিকেটাররা বুকিদের কাছ থেকে লোভনীয় টাকার টোপ লুফে নেন, তাঁরা কখনও ম্যাচ গড়াপেটা, তথ্য পাচার, ইচ্ছাকৃতভাবে বিপক্ষ দলকে বেশি রান দেওয়া এই রকম একাধিক অপকর্ম করে থাকেন। ম্যাচ ফিক্সিং করে জেলের ঘানি টানতে হয়েছে, এমন ক্রিকেটারও রয়েছেন। আজ ফিরে দেখা পাক অধিনায়ক সেলিম মালিকের (Saleem Malik) ম্যাচ ফিক্সিং কাণ্ড।

একজন অধিনায়কের দায়িত্ব দলকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা। দলকে জেতানোর দায়ভারটাও কিছুটা হলেও বেশি বর্তায় তাঁর ওপর। কিন্তু সেই অধিনায়কই যদি ম্যাচের আসল ‘ভিলেন’ হয়ে ওঠেন, তখন? বড় বড় সাফল্যও এক লহমায় চূর্ণ হয়ে যায়। বিশ্ব ক্রিকেটে তার অন্যতম উদাহরণ হিসেবে জ্বলজ্বল করছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক সেলিম মালিক। অভিষেকে সব চেয়ে কমবয়সী পাকিস্তানি ব্যাটার হিসেবে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড ছিল সেলিম মালিকের। সেই সেলিমই আবার ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজের হাতেই নিজের কেরিয়ার জলাঞ্জলি দেন।

এক বার নয়, দু’বার ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগের তির উঠেছিল সেলিমের দিকে। ১৯৯৩-৯৪ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে পাক দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পান সেলিম মালিক। তিনি নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে দলকে জেতান। কিন্তু ক্রাইস্টচার্চে হওয়া সিরিজের তৃতীয় টেস্টে হেরে যায় পাকিস্তান। সেই ম্যাচে ফিক্সিং নিয়ে অভিযোগ ওঠে সেলিমের দিকে। কিন্তু পরবর্তীতে সেই ম্যাচে ফিক্সিং নিয়ে খুব বেশি জলঘোলা হয়নি।

এরপর দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মুখোমুখি হয় পাকিস্তান। ১৯৯৪ সালে পাকিস্তান সফরে সে বার এসেছিল অজিরা। সেই সিরিজের করাচি টেস্টে পাকিস্তান অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচ জিতেছিল। অনেক তদন্তের পর উঠে এসেছিল, ওই ম্যাচের শেষ দিনে খারাপ বোলিং করার জন্য শেন ওয়ার্ন, মার্ক ওয়া এবং টিম মে-কে অর্থ দিতে চেয়েছিলেন সেলিম মালিক। কিন্তু তাঁরা সেলিম মালিকের এই টোপে পা দেননি। পরবর্তীকালে অ্যামাজন প্রাইমের ডকুমেন্টরি ‘শেন’ এ শেন ওয়ার্ন জানিয়েছিলেন এই তথ্য। তাঁকে সেলিম ২ লাখ ৭৬ হাজার ডলার অর্থের টোপ দিয়েছিলেন। ওয়ার্ন ওই তথ্য ক্যাপ্টেন মার্ক টেলর এবং তখনকার কোচ বব টেলরকে জানিয়েছিল। এবং ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়টি ম্যাচ রেফারির কাছেও পৌঁছেছিল।

উল্লেখ্য, ম্যাচ ফিক্সিংয়ের দায়ে নির্বাসিত হওয়ার পরও আবার ২২ গজে ফিরেছিলেন সেলিম। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের তদন্ত শেষ না হওয়ায় কারণে, ১৯৯৫ সালের অক্টোবরে বিচারপতি ফখরুদ্দিন জি ইবব্রাহিম তাঁকে খেলার অনুমতি দেন। এরপর ১৯৯৬ সালে ফের জাতীয় দলের হয়ে ইংল্যান্ড সফরে যান সেলিম। সেখানে ফের শতরান করেন সেলিম। এরপর ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপেও খেলেন সেলিম। তার ঠিক পরের বছরই ম্যাচ ফিক্সিং কাণ্ড দোষী প্রমাণিত হওয়ায় মালিককে আজীবন নির্বাসিত ঘোষণা করা হয়। এবং তিনিই প্রথম ক্রিকেটার যিনি, ম্যাচ ফিক্সিংয়ে অভিযুক্ত প্রমাণিত হয়ে জেলের ঘানিও টেনেছিলেন। ২০০৮ সালে তাঁর ওপর থেকে পাক ক্রিকেট বোর্ড নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু আর ক্রিকেটে ফেরা হয়নি তাঁর।

এই খবরটিও পড়ুন



পাকিস্তানের হয়ে ১০০টি টেস্ট খেলার নজির রয়েছে সেলিমের। কিন্তু তাঁর সাফল্যমণ্ডিত ক্রিকেট কেরিয়ারে অন্ধকারময় অধ্যায় সেই ম্যাচ ফিক্সিং। যার ফলে তিনি যে দেশের জার্সিতে ১০৩টি টেস্টে, ২৮৩টি ওয়ান ডে-তে খেলেছিলেন, তা নিয়ে চর্চা কমই হয়। বরং সেলিমের নাম এলেই উঠে আসে, ফিক্সিংয়ের দায়ে আজীবন নির্বাসিত হওয়া প্রথম ক্রিকেটার তিনি।

Leave a Reply