Controversial Cricket Story: কিংবদন্তি আম্পায়ার এবং তাঁর ভুলে ভরা সিদ্ধান্ত!


আম্পায়াররা হলেন ক্রিকেট জগতের সেই এক শ্রেণির মানুষ যাঁরা তাঁদের নির্ভুল সিদ্ধান্তের জন্য কতটা প্রশংসিত হন জানা নেই। বরং ভুল সিদ্ধান্তে একটা গোটা দেশের মানুষের কাছে ভিলেন বনে যেতে পারেন। সেই জগতেরই একজন বাসিন্দা ছিলেন স্টিভ বাকনর।

বিতর্কের ক্রিকেট : ক্রিকেটের বিতর্ক

আলো আর অন্ধকার, দুই-ই পা মেলায় ইতিহাসের মিছিলে। উজ্জ্বলতম অতীত যেমন ফিরে আসে স্মৃতিতে, তেমনই চুপিসারে হানা দেয় কলঙ্কও। ক্রিকেট ইতিহাস যেমন রেকর্ড, সাফল্য, নায়কদের খোঁজ দেয়, তুলে ধরে বিতর্কিত ঘটনাও। ক্রিকেট ইতিহাসের মহাবিতর্কিত নানা গল্পের খোঁজ দিল TV9 Bangla। তিথিমালা মাজী তুলে ধরলেন আজ দ্বাদশ কিস্তি

আম্পায়ার কে? সোজা কথায় বলতে গেলে, ক্রিকেট নিয়মের যথাযোগ্য ব্যবহার করে ম্যাচ পরিচালনা যিনি করেন, তিনিই হলেন আম্পায়ার। ম্যাচের নিয়ন্ত্রক। যাঁকে হতে হবে নিরপেক্ষ। ব্যক্তিগত পছন্দ, অপছন্দের চোখে ‘ঠুলি’ পরিয়ে, অনুভূতিহীন হয়ে শুধুমাত্র পরিস্থিতি বিচার করে বিচক্ষণ, তাৎক্ষণিক ও নির্ভুল সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখানে ভুলের কোনও ক্ষমা নেই। আম্পায়ারদের কাছে নেই কোনও UNDO বাটন। প্রযুক্তির রমরমার আগে পর্যন্ত তাঁদের এক ইশারাতেই বদলে যেত ম্যাচের গতিপ্রকৃতি। ক্রিকেটাররা সেঞ্চুরি করলে ব্যাট উঁচিয়ে ধরেন। আগুন ঝরা স্পেলের জন্য প্রশংসা পান বোলাররা। কিন্তু আম্পায়াররা ক্রিকেট জগতের সেই এক শ্রেণির মানুষ, যাঁরা তাঁদের নির্ভুল সিদ্ধান্তের জন্য কখনওই প্রশংসিত হন না। কোনও আউট দেওয়ার পর কেউ বলেন না, আম্পায়ার কিন্তু দারুণ আউট দিয়েছেন। ভুল সিদ্ধান্তে একটা গোটা দেশের মানুষের কাছে ভিলেন বনে যেতে পারেন। সেই জগতেরই একজন বাসিন্দা ছিলেন স্টিভ বাকনর। ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকদের দু চক্ষের বিষ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ-জাত এই বিখ্যাত আম্পায়ারের কেরিয়ারের শেষটা বিতর্কে মোড়া। বহুদিন আগে অবসর নিলেও স্টিভ বাকনরের কথা উঠলে এখনও দাঁড় কিড়মিড় করে ওঠেন বহু সমর্থক।

বাকনারের ভুলের খতিয়ান

  • ২০০৩ সালের অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গাব্বা টেস্ট। জেসন গিলেসপির বলে সচিনকে এলবিডব্লিউ দেন বাকনর। ভেবেছিলেন বল সচিনের পায়ে লেগেছে। পরে দেখেন বল উইকেটের উপর দিয়ে গিয়েছিল!
  • ২০০৫ সালে ইডেন গার্ডেন্সে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ। ভরা স্বর্গোদ্যানে অর্ধশতরান করে এগোচ্ছিলেন সচিন। ৫২ রানে স্টিভ বাকনারের ভুল ক্যাচ আউটের সিদ্ধান্তে মাঠ ছাড়তে হয়। আব্দুর রাজ্জাকের বলে সচিনকে আউট দেন তিনি। ভেবেছিলেন বল সচিনের ব্যাট ছুঁয়েছে। পরে রিপ্লেতে দেখা যায় ব্যাটে লাগেনি বল। পরে সাফাই দিয়ে ইডেন গার্ডেন্সের দর্শকদের উপরই দোষ চাপান বাকনর। ইডেনের মতো বড় স্টেডিয়ামে খেলা হলে কিচ্ছু শোনা যায় না। সে দিনও নাকি তাই হয়েছিল!
  • এরপর ইডেন থেকে সোজা সিডনির মাঠ। মাঙ্কিগেট বিতর্কে যেবার তোলপাড় হয়েছিল ক্রিকেট বিশ্ব। ক্যারিবিয়ান আম্পায়ারের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তে ভারতীয় শিবিরে পুঞ্জীভূত হচ্ছিল ক্ষোভ। যা লাভার আকারে ফেটে পড়ে ক্রিকেট ইতিহাসের জঘন্যতম বিতর্কের জন্ম দেয়। টেস্টে দুটো ভুল করেছিলেন তিনি। টেস্টের প্রথমদিন বাকনরের দয়ায় জীবন ফিরে পেয়েছিলেন অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর তখন ছয় উইকেট খুইয়ে ১৩৫। সাইমন্ডস ব্র্যাড হগ মিলে সামলানোর চেষ্টা করছেন। ইশান্ত শর্মার বলে মাত্র ৩০ রানে পরিষ্কার আউট হন সাইমন্ডস। কিন্তু মাথা নাড়িয়ে আউট দেওয়ার জন্য বিখ্যাত বাকনরের আঙুল ওঠেনি। জীবনদান পেয়ে ১৬০ রানের ইনিংস খেলেন সাইমন্ডস।
  • এরপরের ঘটনাটি পঞ্চম দিনের। জয়ের জন্য ৩৩৩ রানের লক্ষ্য ছিল ভারতের সামনে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও রাহুল দ্রাবিড় মিলে রান তোলার কাজ করছিলেন। সাইমন্ডসের বলে রাহুল দ্রাবিড়কে ক্যাচ আউট দিয়ে দেন বাকনার। অথচ বলটি তাঁর প্যাডে লেগেছিল। এমন গোটা দুই ভুলে ভরা সিদ্ধান্তে ভারতের হাত থেকে ছিটকে গিয়েছিল সিডনি টেস্ট।

৬ ফুট ৩ ইঞ্চির দীর্ঘদেহী বাকনার সাদা পোশাক ও হ্যাট পরে মাঠে প্রবেশ করলেই যেন দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন ভারতীয় দর্শকরা। এই মানুষটি তাঁর কেরিয়ারের যা যা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রায় সবকটিই ভারতের বিরুদ্ধে। সচিন তেন্ডুলকর বহুবার শতরানের ঘর থেকে ফিরেছেন তাঁর ভুল আম্পায়ারিংয়ে। স্টিভ বাকনার নামের মানুষটি না থাকলে মাস্টার ব্লাস্টারের শতরানের সংখ্যাটা আজ একশো ছাড়িয়ে যেতে পারত। পরে তা নিয়ে নিজেও আফশোস করেছিলেন। চেয়ে নিয়েছিলেন ক্ষমা। কিন্তু তাতে আর কি হবে? সচিনের শতরানের সংখ্যা ১০০-র বেশি যেমন হবে না তেমনই ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে স্টিভ বাকনার কতটা সহানুভূতি পাবেন তাতে সন্দেহ রয়েছে।

Leave a Reply