মাত্র ৩১ বছরেই বিশ্বজয়ী কোচ ‘এল প্রফেসর’


FIFA World Cup: দলের প্রধান গোলকিপার আন্দ্রেস মাজালি নির্দেশ মানেননি। ১৯২৪, ১৯২৮ উরুগুয়ের অলিম্পিক জয়ের নায়ক মাজালি। নিয়ম ভাঙায় তাঁকেও দল থেকে ছেটে ফেলতে দ্বিধা করেননি ‘এল প্রফেসর’।

Image Credit source: OWN Photograph

দীপঙ্কর ঘোষাল

নতুন তারকা কে? এই প্রশ্ন চার বছর অন্তত ঠিক ঘোরাফেরা করে মাথায়। বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরে এ বারও আমরা বসব মেসি-রোনাল্ডো-নেইমারের পরবর্তী প্রজন্মের খোঁজে। বিশ্ব এমনই। তার পথচলার প্রথম দিন থেকেই জন্ম দিয়ে চলেছে একের পর নায়ক। অসংখ্য ঘটনা। আর একদল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। সেই সব নায়ক আর না-ভোলা ঘটনা তুলে আনল টিভি নাইন। পর্ব-২

‘এল প্রফেসর।’ ফুটবল বিশ্বে এখন এই নামে ডাকা হয় যুর্গেন ক্লপের ক্ষেত্রে। বহু বছর আগেই এই উপাধি ছিল এক জনের। যিনি সব দিক থেকেই সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন অনেকখানি। মাত্র ৩১ বছরেই বিশ্বজয়ী কোচ। সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্বকাপ জয়ের নজির, কোচ হিসেবে। ফুটবলে এখনও অবধি ২৯টি বিশ্বকাপ (পুরুষ ও মহিলাদের মিলিয়ে) হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র দু’জন কোচের আরও এক অনন্য কীর্তি রয়েছে। ইতালির ভিত্তোরিও পোজো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিল এলিস। এরা দু’জনই কোচ হিসেবে জোড়া বিশ্বকাপ জিতেছেন। ইতালির ভিত্তোরিও ১৯৩৪ এবং ১৯৩৮, কোচ হিসেবে পরপর দুটি বিশ্বকাপ জেতেন। জিল এলিস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোচ হিসেবে (মহিলা দলের) ২০১৫, ২০১৯ পরপর বিশ্বকাপ জিতেছেন। ফুটবলের প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছিল উরুগুয়ে। সেই ১৯৩০ সালে। প্রথম বিশ্বকার জয়ী উরুগুয়ের কোচ ছিলেন আলবের্তো সুপিসি। যিনি ‘এল প্রফেসর’ নামেই পরিচিত বিশ্ব ফুটবলে। মাত্র ৩১ বছর বয়সে কোচ হিসেবে ফুটবল বিশ্বকাপ জয়। গল্প নয়, সবটাই সত্যি। সব দিক থেকেই সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন সুপিসি।

ফিফা মিউজিয়ামে বিশ্বকাপ গ্যালারিতে একটি পদক রয়েছে। সঙ্গে উরুগুয়ের ১৯৩০ বিশ্বকাপ জয়ের একটি পোস্টার। উরুগুয়ে ফুটবল সংস্থা পদকটি দিয়েছিল সুপিসিকে। কেন না, সে সময় কোচ কিংবা ফুটবলারদের পদক দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছিল উরুগুয়ে ফুটবল সংস্থাকে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব ফুটবলার কিংবা কোচের নয়, স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল সংস্থাকেই। ফিফার এমনটাই বিশ্বাস ছিল।

উরুগুয়ের বিশ্বকাপ জয়ের নেপথ্যে সুপিসির ভূমিকা পর্দার আড়ালেই থেকে গিয়েছিল। বিশ্বকাপ নিয়ে যাবতীয় তথ্যে ব্রাত্যই দেখে গিয়েছিলেন ‘এল প্রফেসর’। উরুগুয়ের একটি লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন মুন্দো উরুগায়োতে সাক্ষাৎকারে অনেক তথ্যই প্রকাশ পায়। বিশ্বকাপ জয়ে সুপিসির কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাও প্রকাশ্যে আসে। সুপিসি ছিলেন এই দলের প্রাণভোমরা। তাঁর পরিচিতি শুধুমাত্র প্রথম বিশ্বজয়ী জয় কোচ নয়। এমন একটা যুগ, যেখানে অনুশীলন এবং ম্যাচের প্রস্তুতি মানে ধারণা ছিল, হাঁটাহাঁটি, স্কিপিং কিংবা একটু লাফালাফি করা। এই ধারণার বাইরে গিয়ে ফুটবলারদের ট্রেনিং দিয়েছিলেন সুপিসি।

বিশ্বকাপের আগে ফুটবলারদের নিয়ে বিশেষ অনুশীলন শিবির করেন ‘এল প্রফেসর’। জন অরণ্য থেকে অনেকটা দূরে। অনেক ফুটবলারের মনে হয়েছিল, ছুটি কাটাতে যাচ্ছেন। শিবিরে পৌঁছে অবশ্য তাঁদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েন। কড়া অনুশীলনই শুধু নয়, শৃঙ্খলার দিক থেকেও কাউকে রেয়াত করতেন না। তার জলজ্যান্ত উদাহরণও রয়েছে। দলের সকলের জন্য পরিষ্কার নির্দেশ ছিল, রাত ১০.৩০ থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত কেউ শিবির ছেড়ে বেরোতে পারবে না। দলের প্রধান গোলকিপার আন্দ্রেস মাজালি নির্দেশ মানেননি। ১৯২৪, ১৯২৮ উরুগুয়ের অলিম্পিক জয়ের নায়ক মাজালি। নিয়ম ভাঙায় তাঁকেও দল থেকে ছেটে ফেলতে দ্বিধা করেননি ‘এল প্রফেসর’। তরুণ গোলরক্ষক এনরিকে বালেস্ত্রেরোকে খেলান সুপিসি। অনুশীলনের পাশাপাশি ফুটবলারদেরও ডায়েটেও খেয়াল রাখতেন। সে সময় যা অকল্পনীয়।

ফুটবলে কোচের গুরুত্ব কতটা? বিশ্ব ফুটবলের দিকে যদি তাকানো হয়, দেখা যাবে, কোচ শুধু একটা টিমকে চালান না, মাঠ ও মাঠের বাইরে টিমের দেখভালের দায়িত্বটাও নেন তিনি। যে কারণে কোচকে বলা হয় ম্যানেজার হিসেবে। আবার সেই তিনি প্রফেসর। যেমন ছিলেন উরুগুয়ের আলবের্তো সুপিসি।

Leave a Reply