ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যপক উত্তেজনা ছড়ায় হাওড়ার দাশনগরের আলামোহন দাস স্টেডিয়ামে। আয়োজকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকরা। চূড়ান্ত অব্যবস্থার জন্য অভিভাবকদের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের রীতিমতো বচসা বেঁধে যায়।
Image Credit source: নিজস্ব চিত্র
হাওড়া: শো করতে এসে নজরুল মঞ্চে প্রচণ্ড ভিড়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল জনপ্রিয় গায়ক কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকে-র। রাজ্যে ফের একবার তেমনই পরিস্থিতি দেখা গেল। এবার ক্যারাটে প্রতিযোগিতার মঞ্চ। আয়োজকদের গাফিলতিতে ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এসে প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ল প্রতিযোগীরা। হলে অতিরিক্ত মানুষের ভিড়, খারাপ এসি, জলের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে কিশোর কিশোরীরা। অসুস্থদের মধ্যে ৯ ও ১২ বছরের দু’জন ছেলেও রয়েছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যপক উত্তেজনা ছড়ায় হাওড়ার দাশনগরের আলামোহন দাস স্টেডিয়ামে। আয়োজকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকরা। চূড়ান্ত অব্যবস্থার জন্য অভিভাবকদের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের রীতিমতো বচসা বেঁধে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসা করে প্রতিযোগিতায় অংশ না নিয়েই ছেলেমেয়েদের বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান অভিভাবকরা।
অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রতিযোগিতার জন্য দেড় থেকে দু হাজার টাকা এন্ট্রি ফি নেয় উদ্যোক্তারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্টেডিয়ামে উপস্থিত হয় দাশনগর থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, এই প্রতিযোগিতার আয়োজক ‘‘শতকান ক্যারাটে ডু জাপান অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া’’ নামে বেলুড়ের একটি বেসরকারি সংস্থা। প্রতিযোগিতা জন্য দাশনগর থানা থেকে আগাম কোনও অনুমোদন নেওয়া হয়নি। তবে হাওড়া পুরসভা থেকে প্রতিযোগিতা করার অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল।
পুলিশ ও পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার ‘‘ফোর্থ ওপেন ন্যাশনাল শতকান ক্যারাটে ডু চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২’’ প্রতিযোগিতার প্রথমদিন ছিল। কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী মিলিয়ে প্রায় ৭০০ প্রতিযোগী এই ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেয়। এদিন সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগী ও তাদের অভিভাবক মিলিয়ে প্রায় ২২০০ লোক আলামোহন দাস স্টেডিয়ামের হলের ভিতর চলে আসেন। আর তখনই প্রচণ্ড গরমে, জলের অভাবে দমবন্ধ হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। পুলিশ জানায়, হলের ভিতর যেখানে ১৫০০ লোক প্রবেশ করার কথা সেখানে ২২০০ লোক ঢুকে পড়ায় দমবন্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়। অন্যদিকে আমফানের ঝড়ে স্টেডিয়ামের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র খারাপ হয়ে যাওয়ায় প্রচন্ড গরমে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। অনেক বালক, কিশোর-কিশোরী, যুবক অসুস্থ হয়ে পড়ে। অভিভাবকরা তাদের বাড়ি নিয়ে চলে যান। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের কাছে এন্ট্রি ফি হিসেবে নেওয়া টাকা ফেরতের দাবি করেন।
সৌমেন দাস নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘‘ আমার মেয়ে এই চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু প্রচন্ড ভিড়ে, গরমে জল না পেয়ে অসুস্থবোধ করে। ওকে নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছি। আর উদ্যোক্তারা যে ২ হাজার টাকা এন্ট্রি ফি নিয়েছিল তা ফেরত চেয়েছি। এরকম চূড়ান্ত অব্যবস্থায় প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া যায় না।’’ পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে উদ্যোক্তাদের জানায়, কয়েকটি দলে ভাগ করে প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। সেইমতো রবিবার একদল প্রতিযোগীকে নিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ হয়।
উদ্যোক্তাদের তরফে জানানো হয়, গরমের জন্যই এমনটা হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। হাওড়া পুরসভার মুখ্য প্রশাসক সুজয় চক্রবর্তী জানান, সবদিক বিবেচনা করেই ওই সংস্থাকে স্টেডিয়ামে প্রতিযোগিতা করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। অতিরিক্ত লোক চলে আসাতেই সমস্যা হয়। পাশাপাশি উদ্যোক্তারা থানা থেকেও কোনও অনুমতি না নেওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ দিকে গড়িয়েছে। বিষয়টি পুরসভার তরফেও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।