Asia Cup 2022: যে ফর্ম্যাটে তাঁর জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল, সেই টি-টোয়েন্টিতে ক্রিকেটেই জানান দিলেন বিরাট, সময় খারাপ গেলেও তিনি আজও রাজা!
Image Credit source: TWITTER
অভিষেক সেনগুপ্ত
সমালোচনার জবাব যদি দিতে হয়, এ ভাবেই দিতে হয়! সেই তিন বছর আগে শেষ সেঞ্চুরি এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। দিনক্ষণ ধরলে, ২৩ নভেম্বর ২০১৯ সাল। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গোলাপি টেস্টে কলকাতায় শতরানের ঝলক ছিল তাঁর ব্যাটে। তার পর? ব্যর্থতার নানা কাহিনি। সমালোচনায় ফালাফালা হয়ে যাওয়া। বিতর্কে জেরবার হওয়া। এমনকি, টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটে ভারতীয় টিমে তাঁর জায়গা নিয়েও প্রশ্ন উঠে যাওয়া। আবার মসনদে ফিরলেন বিরাট কোহলি। আবার ফিরে পেলেন তাঁর তাজ। ১০২১ দিন পর সেঞ্চুরি করলেন বিরাট। যে ফর্ম্যাটে তাঁর জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল, সেই টি-টোয়েন্টিতে ক্রিকেটেই জানান দিলেন বিরাট, সময় খারাপ গেলেও তিনি আজও রাজা! এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ৫৩ বলে ১০০ করলেন। ৪ ও ৬ মেরে শতরান করলেন। টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথম।
পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে পর পর হেরে এশিয়া কাপ থেকে আগেই ছিটকে গিয়েছিল ভারত। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে নিয়মরক্ষার ম্যাচ খেলতে নেমেছিল রাহুল দ্রাবিড়ের টিম। সেঞ্চুরির মঞ্চ হিসেবে আর সেই ম্যাচই বেছে নিলেন ভিকে। যতই নিয়মরক্ষার ম্যাচ হোক, এই সেঞ্চুরির গুরুত্ব অনেকখানি। টিমের দিক থেকে যেমন, বিরাটের দিক থেকেও। আগামী মাসে অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তার আগে বিরাটকে ফর্মে দেখতে চেয়েছিলেন নির্বাচকরাও। সেই কাজটাই এশিয়া কাপে করে রাখলেন বিরাট। এশিয়া কাপের শুরু থেকেই অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল তাঁকে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ৩৫ করেছিলেন। হংকংয়ের বিরুদ্ধে নট আউট ৫৯ রানটা আরও বেশি ছন্দ ফিরে পেয়েছিলেন। সুপার ফোরের ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হারলেও বিরাট করে গিয়েছিলেন চমৎকার ৬০ রান। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ০ করে ফিরেছিলেন। এই ম্যাচে আবার বিরাট স্বমহিমায়। ৬১ বলে নট আউট ১২২ করলেন তিনি। মেরেছেন ১২টা চার ও ৬টা ছয়।
৩৩ বছরের বিরাটকে যে ভাবে অভ্যস্ত ক্রিকেট দুনিয়া, সেই ছন্দেই দেখা গেল তাঁকে। শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাট করছিলেন। উইকেটের দু’দিকে রান করেছেন। সেই চোখধাঁধানো কভার ড্রাইভ। স্পিনারকে স্টেপ আউট করে দুরন্ত ছয়। কাট, পুলের ফুলঝুরি। হাফসেঞ্চুরির পর যেন আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন। তখন থেকেই মনে হচ্ছিল, যে কোনও সময় আসতে পারে সেঞ্চুরি। করলেনও তাই। পর পর চার ও ছয় মেয়ে সেঞ্চুরি করে ফেললেন। সব মিলিয়ে কেরিয়ারে ৭১টা সেঞ্চুরি হয়ে গেল তাঁর। বিরাটের এই শতরানের সঙ্গে সঙ্গে আবার সেই অপেক্ষাও শুরু হয়ে গেল। কবে কেরিয়ারের ১০০তম সেঞ্চুরিটা আসবে তাঁর ব্য়াট থেকে? তার আগে অবশ্য অন্য এক রেকর্ড ছুঁয়ে ফেললেন বিরাট। ক্রিকেট ইতিহাসে ১০০টা সেঞ্চুরির মালিক সচিন তেন্ডুলকর। তার পরেই রয়েছেন রিকি পন্টিং। অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তির ৭১টা সেঞ্চুরির রেকর্ড ছুঁয়ে ফেললেন বিরাট।
নায়করা এমনই হন। কখন যে সাফল্যের সরণিতে উঠে আসবেন, কখন যে সমালোচনার ঝড় থামিয়ে দেবেন, কখন যে ছিনিয়ে নেবেন তাঁর তাজ, কেউ জানে না! সেঞ্চুরির পর বিরাটের তৃপ্ত মুখটা আবার ভারতীয় ক্রিকেটের বিজ্ঞাপনের শিরোনামে উঠে আসবে। তিনিই তো সেরা বিজ্ঞাপন। ভারতের। ক্রিকেটেরও!