ক্রিকেট থেকে অবসরের পর ঝুলনকে কোন ভূমিকায় দেখতে চাইছে তাঁর পরিবার? বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটাররাই বা কি বলছেন?
Image Credit source: Twitter
কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা: কুড়ি বছর। দীর্ঘ ২০ বছর পর ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছেন ঝুলন গোস্বামী (Jhulan Goswami)। ঐতিহাসিক লর্ডসে খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন ‘চাকদা এক্সপ্রেস’। এই কুড়ি বছরের দীর্ঘ ক্রিকেট জীবনে রয়েছে অনেক সাফল্য, অনেক ব্যর্থতা। আর এই সব কিছু নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছেন বাংলার মেয়ে। ২০৩ একদিনের ক্রিকেটে আড়াইশোর বেশি উইকেট রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। শুধু বোলিং নয়, ব্যাট হাতেও দলকে নির্ভরতা দিয়েছেন। তাই তো একজন প্রকৃত অলরাউন্ডার হয়ে উঠেছিলেন ঝুলন গোস্বামী। বিশ্ব ক্রিকেটে এক উদাহরণ হয়ে থাকবেন ৫ ফুট ১১ ইঞ্চির বঙ্গতনয়া। ঝুলনের অবসর মানে ভারতীয় ক্রিকেটের এক অধ্যায় শেষ হতে চলেছে। ক্রিকেট থেকে অবসরের পর ঝুলনকে কোন ভূমিকায় দেখতে চাইছে তাঁর পরিবার? বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটাররাই বা কি বলছেন?
ঝুম্পা গোস্বামী (ঝুলনের বোন)- দিদিকে নিয়ে নতুন করে আর কী বলব। ছোট থেকেই ক্রিকেট নিয়ে পাগলামী ছিল। অনেক পরিশ্রম করতে দেখেছি ওকে। চাইব, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ওকে ব্যবহার করুক। মেয়েদের ক্রিকেটের উন্নতিতে কাজে লাগবে। তবে যে কাজেই ওকে ব্যবহার করবে, সেখানেও নিজের একশো শতাংশ দেবে। কাতলা মাছের পেটি খেতে দিদি খুব ভালোবাসে। বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে তৈরি ভাত, ডাল, আলুভাজা আর কাতলা মাছ খেতে চেয়েছে। দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জেতার আক্ষেপ ওর থেকে যাবে।
গার্গী বন্দ্যোপাধ্যায়- ওর এই দীর্ঘ যাত্রাটা আমরা সকলেই জানি। কি ভাবে ভিড় ট্রেনে করে এখানে এসে দিনের পর দিন প্র্যাক্টিস করত। প্রত্যেক সফল মানুষের পিছনেই থাকে কঠোর পরিশ্রম আর নিষ্ঠা। ঝুলনের সাফল্যের পিছনেও রয়েছে তেমনই অনেক কাহিনি। ২০০০ সালের দিকের গোড়ায় ঝুলনকে আমি প্রথম দেখি, তখন ও অনেক ছোট। ২০০৬ সালে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট বোর্ডের অনুমোদন পাওয়ার পর ঝুলন আরও নিজেকে মেলে ধরে। তখন থেকেই ওর উত্থানের পথ শুরু। ২০০৯ সালে নির্বাচক থাকার সময় ঝুলনকে কাজ থেকে দেখেছি। আমি চাই, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ওকে কাজে লাগাক। পেস বোলিং বিভাগটা ওর হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। শুধু বোলিং নয়, ঝুলন ভালো ব্যাটিংও করত। একেবারে প্রকৃত অলরাউন্ডার। উঠতি ক্রিকেটারদের কাছে ও উদাহরণ হয়ে থাকবে। সিএবি আগেই ওকে মেন্টর হিসেবে নিয়োগ করেছে। এ বার ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড যদি ওকে কাজে লাগায়, নিশ্চয়ই মেয়েদের ক্রিকেট অনেক উপকৃত হবে।
প্রিয়াঙ্কা রায়- ঝুলদি আমাদের সবার অনুপ্রেরণা। ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট আজ যে জায়গায় এসেছে, তার কৃতিত্ব প্রাপ্য দু’জনের। ঝুলন গোস্বামী আর মিতালি রাজ। এদের জায়গা কেউ নিতে পারবে না। কারণ, এরা ভারতীয় ক্রিকেটের লেজেন্ড। মাঠে, মাঠের বাইরে বরাবর আমাদের গাইড করেছে। এখনও কোনও কিছু সমস্যা হলে ঝুলদির পরামর্শ নিই। সেটা ক্রিকেট হোক কিংবা ক্রিকেটের বাইরে। ওই ব্যস্ত শিডিউলেও ঠিক সময় দেয়। এটাই ঝুলদি। জাতীয় দলে একসঙ্গে খেলার আগে বাংলা আর এয়ার ইন্ডিয়াতেও আমরা একসঙ্গে খেলেছি। ক্রিকেটই ঝুলদির ধ্যান জ্ঞান। এত বছর জাতীয় দলে খেলার পর যখন অবসর নিচ্ছে, অবশ্যই আবেগতাড়িত হয়ে পড়বে।
মিঠু মুখোপাধ্যায়- নির্বাচক কমিটিতে রয়েছি। বোর্ডের প্রোটোকল অনুযায়ী, কোনও বিষয়েই এখন কথা বলতে পারব না। শুধু বলব, ওর সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনায় শুভেচ্ছা রইল। আরও অনেক সফল হোক।