Qatar 2022: ফুটবল মহাকাব্যে তিনি অনেকটা একলব্যের মতো। তাঁর গুরু কিংবা দ্রোণাচার্য স্বয়ং রোনাল্ডিনহো। ব্রাজিলিয়ান তারকাকে দেখেই খেলার প্রতি টান।
Image Credit source: twitter
স্বরূপ মুখোপাধ্যায়
ব্রাজিলে জন্ম। ১২ বছর বয়সে চলে যান পর্তুগালে। ছেলেবেলা থেকেই তাঁর স্বপ্নের ফুটবল তারকা রোনাল্ডিনহো। সংসারের হাল ধরতে ফুটবল খেলার পাশাপাশি কাজ করেছেন বেকারিতে। সেই তিনিই কিনা আজ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সতীর্থ। কে এই তিনি? ম্যাথুস নুনেজ। স্রোতের উল্টো দিকে হেঁটে তাঁর সাফল্যের এভারেস্টে উঠে পড়ার অবিশ্বাস্য গল্প তুলে ধরল TV9BANGLA।
জন্মের পর থেকেই তাঁর জীবনে বাবার কোনও ভূমিকাই ছিল না। মা-ই ছিলেন তাঁর জগৎ। নানা কাজ করে দুই সন্তানকে মানুষ করেছেন তাঁর মা। ফুটবল খেলার সাহসও জুগিয়েছেন মা-ই। পিতৃছায়া থেকে সহস্র যোজন দূরে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বেড়ে ওঠা, সমাজের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের মতোই হতে পারত তাঁর গল্প। ওই ছেলে মিশে যেতে পারতেন অন্ধকার দুনিয়ায়। এমন আশঙ্কা তো তাঁর মায়েরও ছিল। মায়ের জন্যই চোরাগলির বদলে আলোকোজ্জ্বল রাজপথে উঠে আসা নুনেজের।
সঠিক সময়ে ফুটবল খেলা বা শেখার সুযোগ পাননি নুনেজ। ফুটবল মহাকাব্যে তিনি অনেকটা একলব্যের মতো। তাঁর গুরু কিংবা দ্রোণাচার্য স্বয়ং রোনাল্ডিনহো। ব্রাজিলিয়ান তারকাকে দেখেই খেলার প্রতি টান। এক ইন্টারভিউতে নুনেজ বলেছেন, “আমি ছেলেবেলা থেকেই রোনাল্ডিনহোকে অনুকরণ করার চেষ্টা করতাম। ওর মতো খেলার স্বপ্ন দেখতাম।”
রোনাল্ডিনহোর ভক্ত নুনেজের বক্তব্য, “রোনাল্ডিনহো যখন যে ক্লাবে খেলেছে, আমি সেই ক্লাবের সাপোর্টার হয়ে গিয়েছি। বার্সেলোনা, এসি মিলান, ফ্লামেঙ্গোতে খেলার সময় কিন্তু আমিও ওই ক্লাবগুলোকে সাপোর্ট করেছি। আর এমনিতেই আমি ফ্লামেঙ্গো ভক্ত। রোনাল্ডিনহো আমার আইডল।”
এই বছরের শুরুর দিকে এক সাক্ষাৎকারে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা বলেন, “আমার মতে ম্যাথুস নুনেজ এই মুহূর্তে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফুটবলারদের একজন।” ইংলিশ প্রিমিয়র লিগের উলভারহ্যাম্পটনে খেলেন তিনি। ক্লাবের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় তিনি। তাঁর মূল্য প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ইউরো। তবে তাঁর জীবনের পথ এতটা মসৃণ ছিল না। ভোর ৫টায় উঠে অর্থ উপার্জনের তাড়নায় ছুটেছেন বেকারিতে। সেখানে কাজ সেরে স্পোর্টিং লিসবনের মাঠে। ফুটবলের জগতে পায়ের তলায় শক্ত মাটি পাওয়ার আগে বেকারির কাজ ছাড়তে পারেননি নুনেজ।
লিসবনের হয়েই উত্থান। জিতেছেন জাতীয় লিগ ও কাপ। নজর কেড়েছেন অনেকের। ম্যাথুস নুনেজের জন্ম ব্রাজিলের রিও দে জেনেইরোতে। বিশ্বকাপের আগে তাঁকে দলে নিতে চেয়েছিল ব্রাজিল। তবে পর্তুগালও দেরি করেনি। নেইমারের বদলে রোনাল্ডোকেই সতীর্থ বেছে নিয়েছিলেন নুনেজ। আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক ম্যাচে কাতারের বিরুদ্ধে ৩-০ গোলে জয়লাভ। প্রথমবার রোনাল্ডোর সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগ করে নেওয়া। দুই উত্তেজনাই রোমহর্ষক। কাতারে এখন বিশ্বকাপ খেলতে ব্যস্ত নুনেজ। প্রথম দু’ম্যাচ জিতে নকআউট নিশ্চিত করলেও গ্রুপের শেষ ম্যাচে হেরেছে পর্তুগাল। আরও বেশি করে নিজেকে প্রমাণ করতে মরিয়া তিনি।
একসময় দুবেলা খাবারের জোটেনি, তবুও থামেনি লড়াই। আজ বিশ্ব ফুটবলে নজরকাড়া নাম। শোনা যাচ্ছে তাঁকে দলে নিতে ইচ্ছুক চেলসি। অর্থাৎ বিশ্বকাপ শেষ হলেই আবারও হেডলাইন হতে পারেন ম্যাথুস নুনেজ।