সিআর ‘থার্টি’ সেভেন? স্যান্টোসকে ধিক্কার জানালেন রোনাল্ডো-বান্ধবী!


সুইৎজারল্যান্ডকে হাফডজন গোলে উড়িয়ে পর্তুগাল কোয়ার্টার ফাইনালে গেল? নাকি, ২০ বছর পর রোনাল্ডোর ছায়া থেকে বেরিয়ে এল ফার্নান্দো স্যান্টোসের টিম? এত প্রশ্ন, এত জটিলতা, এত চাপানউতোর, এত দীর্ঘশ্বাস কোনও ফুটবলারকে নিয়ে গত ২০ বছরে কি দেখা গিয়েছে?

Image Credit source: Twitter

অভিষেক সেনগুপ্ত

সিআর সেভেন কি তাঁকে বলা উচিত? নাকি এ বার সময় এসেছে, সিআর থার্টি সেভেন বলার? ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo) গনগনে সূর্য কি কাতারেই অস্ত গেল? এ বার কি বুট জোড়া তুলে রাখার সময় এসেছে? ৩৭-এর ফুটবলার আর কতদিনই বা খেলবেন? হয়তো আরও দুটো মরসুম! হয়তো ফিটনেস ম্যানিয়াক বলে আরও চারটে মরসুম! যতই নিজের কেরিয়ার টেনে বাড়ানোর চেষ্টা করুন, রোনাল্ডোও জানেন খুব ভালো করে, থামতে তাঁকেও হবে। ‘এ বার থামো ক্রিশ্চিয়ানো’ এই ইঙ্গিত যে তাঁর সাধের পর্তুগাল দিয়ে বসবে, ভেবেছিলেন কি? সুইৎজারল্যান্ডকে হাফডজন গোলে উড়িয়ে পর্তুগাল কোয়ার্টার ফাইনালে গেল? নাকি, ২০ বছর পর রোনাল্ডোর ছায়া থেকে বেরিয়ে এল ফার্নান্দো স্যান্টোসের টিম? এত প্রশ্ন, এত জটিলতা, এত চাপানউতোর, এত দীর্ঘশ্বাস কোনও ফুটবলারকে নিয়ে গত ২০ বছরে কি দেখা গিয়েছে? না। হওয়ার কথাও নয়। রোনাল্ডোর মতো সাম্রাজ্য লিওনেল মেসি ছাড়া আর কেই বা তৈরি করতে পেরেছেন! ২১ বছরের গন্সালো রামোস (Gonçalo Ramos) ছটফটে হ্যাটট্রিক, রাফায়েল গুয়েরিরো, রাফায়েল লিওদের তারুণ্যের ছটায় যে সাতের মহিমা মুছে গিয়েছে, মেনে নেওয়ার সময় এসে গিয়েছে কি?

ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড থেকে উত্থানের পর জাতীয় দলে পা রাখা রোনাল্ডোর জীবনে এমন আর কখনও হয়নি। চোট পেয়েছেন। অনিশ্চয়তা থেকেছে। স্ট্র্যাটেজির সঙ্গে হয়তো খাপ খাচ্ছেন না। তবু, রোনাল্ডোকে বাদ দিয়ে পর্তুগালের প্রথম একাদশ তৈরি হয়নি কখনও। মঙ্গলবারের লুসেল সেই ছবিও দেখে ফেলল। জেনে গেল, রোনাল্ডোকে ছাড়াও বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে কাপ জেতার স্বপ্ন দেখা যায়। ২০১৬ সালে যিনি ইউরো কাপ দিয়েছিলেন, ফাইনালে চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর শেষ ১৫ মিনিট কোচিং করিয়েছিলেন, সেই রোনাল্ডোও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যেতে পারেন পর্তুগালের জয়ের গল্পে।

কতটা জাস্টিফাই করা যায় জোয়াও ফেলিক্সের বদলি হিসেবে ৭৩ মিনিটে রোনাল্ডোর নামা? আলবিদা পার্ক, কর্নিশ, আল ওয়াকরা, দোহার হৃদপিণ্ডে মঙ্গলবার দুপুর থেকেই অসংখ্য রোনাল্ডোকে দেখেছে কাতার। চোখে-মুখে স্বপ্ন, আত্মবিশ্বাস, ভরসা— আমাদের একটা রোনাল্ডো আছে! লাল-নীল-হলুদ লাইন ধরে অনবরত লাখো লাখো মানুষকে লুসেলে নামিয়ে যাওয়া মেট্রোও হয়তো পর্তুগাল সমর্থকদের বলেছে— ৩৭-এও ক্যারিশমা দেখাতে পারে তোমাদের রোনাল্ডো। বিশ্বাস আর আস্থায় আশ্চর্য আগুন রয়েছে। ওই তাপে অনেক কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কিন্তু কেউ যদি সেটুকু হারিয়ে ফেলেন? ফের্নান্দো সান্তোসের মতো? ভারতীয় ক্রিকেটে কোচ ঠিক করতে হলে সচিন তেন্ডুলকরের প্রচ্ছন্ন অনুমতি নিতে হত একসময়। কখনও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সেই কন্ট্রোলরুমে বসেছেন। কখনও মহেন্দ্র সিং ধোনি, বিরাট কোহলিরা। আর্জেন্টিনায় যেমন লিওনেল মেসি। পর্তুগালে তেমন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। সিআর সেভেনকে তুষ্ট রেখেই এতদিন কোচের পদ টিকিয়ে রেখেছেন ফার্নান্দো স্যান্টোস। সেই তিনিই কিনা এরিক টেন হ্যাগের পথে হাঁটলেন! সময় সত্যিই বড় ধারালো। কখন যে কাকে কাটবে!

ম্যাচ চলাকলীন ডাগআউটে বসে থাকা রোনাল্ডোর ওই ছবিটা ভাইরাল হয়েছে। শূন্য দৃষ্টি। যন্ত্রণা উপচে পড়া দুটো চোখ। অনেক বিস্ময় মিশে ছিল তাতে। পর্তুগাল বিশ্বকাপ জিতলেও বোধহয় থাকবে। রোনাল্ডো ফর্মে নেই বিশ্বকাপে। একটাই মাত্র গোল করেছেন। কিন্তু গ্রুপ লিগের শেষ বাকি দুটো ম্যাচে সে ভাবে ছাপই রাখতে পারেননি। বয়স বেড়েছে তাঁর। তাই বলে কি ক্যারিশমা কমে গেল? একটা-আধটা ম্যাচ তো এমন যেতেই পারে! নাকি, কোচের সঙ্গে ঝামেলার জেরই নিতে হল? কেরিয়ারের প্রান্তে পৌঁছনো প্লেয়ারের সঙ্গে এমন হয়। চল্লিশের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা কেউ ফিরে আসবেন, ভেঙেচুরে দেবেন নিয়ম, স্যান্টোসরা যে বিশ্বাসই করতে চান না!

রোনাল্ডোর অগণিত ভক্তের মতো তাঁর বান্ধবীও বিস্মিত। জর্জিনা রড্রিগেজ ধিক্কার জানিয়ে গেলেন স্যান্টোসেকে। বলে দিলেন, ‘মাঠে দাঁড়িয়ে ১১জন ফুটবলার যখন জাতীয় সঙ্গীত গাইছে, তখন সব ক্যামেরা শুধু তোমাকেই প্যান করেছে। বিশ্বের সেরা প্লেয়ারকে শুরু থেকে মাঠে না নামানোর জন্য ধিক্কার জানাই। ম্যাচ চলাকালীন যেমন, তোমার নাম ধরে চিৎকার করে কিন্তু আগামী দিনেও উত্তর খুঁজবে সমর্থকরা।’ জর্জিনা আর রোনাল্ডোর ভক্তদের কী জবাব দেবেন স্যান্টোস?

বিতর্কেই বাস রোনাল্ডোর। সে জুভেন্তাস হোক, আর ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড হোক। সে সব হেলায় মিটিয়েছেন গোল করে। জয় ছিনিয়ে এনে। এতদিন বলা হত, সব হারাতে হারাতে শুধু পর্তুগালই একমাত্র সুখের ঠিকানা রোনাল্ডোর। অন্তত জীবনের শেষ বিশ্বকাপটুকু শান্তিতেই খেলতে পারবেন। মরুভূমির দেশে বালির ঝড় উঠবে, রোনাল্ডো জানতেন না! যা অগ্রাহ্য করেছেন এতদিন, তাই কি এ বার মানতে হবে? ক্রিশ্চিয়ানো, তুমি বুড়ো হয়েছ!



Leave a Reply