FIFA World Cup: মরক্কো নিজেদের পরিকল্পনায় কতটা সফল হল, সেটা দেখব যেমন, তেমনই আজ রাতে আমি অবশ্য তাকিয়ে থাকব ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর দিকে। নেইমারের বিদায় হয়েছে। মেসি এখনও টিকে রয়েছে। ওদের মতোই এই বিশ্বকাপটা রোনাল্ডোরও তো!
Image Credit source: OWN Photograph
বাইচুং ভুটিয়া
কাতার বিশ্বকাপের প্রায় শেষ লগ্নে এসে দাঁড়িয়েছি আমরা। ব্রাজিলের বিদায়, আর্জেন্টিনার সেমিফাইনালে পা দেওয়া নিয়ে প্রচুর কাটাছেঁড়া চলছে। নেইমারের জন্য অনেকের মন খারাপ। লিওনেল মেসির দুরন্ত ফুটবল দেখে তৃপ্ত কিন্তু বিশ্বকাপের সেই শুরু থেকে যে বিতর্কে পা দিয়েছে, সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারেনি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ওর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে। এ বার পর্তুগাল টিমের প্রথম একাদশেও ও সুযোগ পাচ্ছে না। সময়টা খারাপ যাচ্ছে সিআর সেভেনের। কিন্তু একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, বয়স একটা এমন জিনিস, তাকে অস্বীকার করা যায় না। প্লেয়ারদের বয়স বাড়লে তার প্রভাব পড়েই। রোনাল্ডোতে দেখে মনে হচ্ছে, ও যে ৩৭-এ পা দিয়েছে, সেটা মেনে নিতে পারছে না। সেই কারণেই সমস্যায় পড়ছে।
নিজে দীর্ঘদিন ফুটবল খেলেছি বলেই জানি, যে কোনও ফুটবলারের শুরু ও শেষটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মানে টেকঅফ আর ল্যান্ডিং যদি ঠিকঠাক না হয়, তা হলে সমস্যা হয়ই। হয়তো সারা কেরিয়ার জুড়ে যে ছাপ রেখে গেল, সেটাই হয়তো ইতিহাস মনে রাখল না। রোনাল্ডোর কেরিয়ারের শুরুটা যে ভাবে হয়েছিল, শেষটা সে ভাবে হচ্ছে না। দিয়েগো মারাদোনার মতো কিংবদন্তি ফুটবলারের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছিল। মারাদোনা কেরিয়ারের শুরুতে যে সোনালি ঝলক দেখিয়েছিল, কেরিয়ারের শেষে এসে সেটা দেখাতে পারেনি। নানা বিতর্কে জেরবার হয়েছে। বিতর্কিত ভাবেই শেষ করেছে কেরিয়ার। রোনাল্ডোকে মনে রাখতে হবে, ও আর ২০ বছরের তরুণ নয়। এই বয়সে আর আগের মতো স্পিড থাকে না। গোল আসে না নিয়মিত। রোনাল্ডো এই বিশ্বকাপে পর্তুগালের অধিনায়ক। টিম প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল পেরিয়ে শেষ আটে ঢুকেছে। মরক্কোকে হারাতে পারলে হয়তো সেমিফাইনালেও যাবে। এ সবের মধ্যেই আবার রোনাল্ডোর সঙ্গে কোচের ঝামেলাও হয়েছে। এইসব কারণগুলো কিন্তু ওর খেলায় প্রভাব ফেলেছে। এই সময় কিন্তু ওকে পরিণতবোধ দেখাতে হবে। পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নামাটা স্বীকার করে নিতে হবে। এটা মেনে নিতে হবে, ওকে এখনও পর্তুগালের দরকার। মরক্কোর বিরুদ্ধে প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকলে কিন্তু রোনাল্ডোর মতো ম্যাচ উইনারকে দরকার।
এ বারের বিশ্বকাপে কয়েকটা টিম সত্যিই চমকে দেওয়ার মতো ফুটবল খেলেছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো মরক্কোর নামও করতে হবে। এইরকম ছোট টিমগুলোই একটা টুর্নামেন্টকে জমিয়ে দেয়। কাতার বিশ্বকাপে সেটাই করছে মরক্কো। টিমটার ডিফেন্স দারুণ। ওদের গোলকিপার অসাধারণ। যখন একটা ডিফেন্স সমবেত ভাবে ভালো খেলে, তখন পুরো ইউনিটটাই শক্তিশালী হয়ে যায়। মরক্কো সেই কারণে টাইব্রেকারে ম্যাচটাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পর্তুগালের বিরুদ্ধেও যে তাই করবে, সন্দেহ নেই। আফ্রিকান দলগুলির মধ্যে সেনেগালের পর মরক্কোকে রাখতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হল, মরক্কো একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনাকে কাজে লাগিয়ে এই বিশ্বকাপে ভালো পারফর্ম করছে। ডিফেন্সিভ পরিকল্পনাকে মরক্কো যেভাবে কাজে লাগিয়েছে, সেটাই মরক্কোর কাছে বড় অ্যাডভান্টেজ। প্ল্যান,ট্যাক্টিসটাই আসল।
মরক্কো নিজেদের পরিকল্পনায় কতটা সফল হল, সেটা দেখব যেমন, তেমনই আজ রাতে আমি অবশ্য তাকিয়ে থাকব ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর দিকে। নেইমারের বিদায় হয়েছে। মেসি এখনও টিকে রয়েছে। ওদের মতোই এই বিশ্বকাপটা রোনাল্ডোরও তো!