Heart Attack: বিশ্বকাপ এলেই পাড়ার মোড় থেকে সোশ্যাল মিডিয়া, সর্বত্র লক্ষ্য করা যায় ফুটবল নিয়ে উত্তেজনা। জানেন কি, এই অতিরিক্ত উত্তেজনা চাপ তৈরি করতে পারে আপনার হার্টের উপর।
গ্রাফিক্স: শুভ্রনীল দে
কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। সেমি-ফাইনালের আঁচে ফুটছে ‘সব খেলার সেরা… ফুটবল’প্রেমী বাঙালি। ফুটবলের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্ক গভীর। চার বছর ধরে বাঙালি মুখিয়ে থাকে আন্তর্জাতিক ফুটবলাদের পায়ের জাদু দেখার জন্য। সুতরাং বিশ্বকাপ এলেই পাড়ার মোড় থেকে সোশ্যাল মিডিয়া, সর্বত্র লক্ষ্য করা যায় ফুটবল নিয়ে উত্তেজনা। তাছাড়া এই বছরের বিশ্বকাপটা একটু অন্যরকম। এ বছর মেসি, রোনাল্ডো এবং লুকা মদ্রিচের শেষ বিশ্বকাপ। যদিও ইতিমধ্যেই রোনাল্ডো তাঁর শেষ বিশ্বকাপ খেলে নিয়েছেন। বুধবার প্রথম সেমি-ফাইনালে আর্জেন্টিনা বনাম ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ নিয়েও টানটান উত্তেজনা রয়েছে বাঙালির মধ্যে। কিন্তু এই উত্তেজনা আপনার হার্টের জন্য ‘টাইব্রেকার’ হয়ে দাঁড়াবে না তো? ক্রোয়েশিয়ার কাছে এ বারের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে টাইব্রেকারে হেরে গিয়েছে ব্রাজিল। সেলেকাওদের মন ভেঙে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু শেষ গোল মিস করায় আপনিও নিশ্চয়ই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন? জানেন কি, এই অতিরিক্ত উত্তেজনা চাপ তৈরি করতে পারে আপনার হার্টের উপর। এই প্রসঙ্গে TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের সঙ্গে।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক কুণাল সরকার বলেন, “যে কোনও সাময়িক ও অতিরিক্ত উত্তেজনা শরীরের পক্ষে ভাল নয়। খেলা দেখব, আনন্দ করব, উপভোগ করব, উদ্বিগ্নও হব… কিন্তু এটার সঙ্গে খুব বেশি জড়িয়ে গেলে সেই অতিরিক্ত উত্তেজনা সমস্যার।” কোনওকিছুই ‘অতিরিক্ত’ হওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়, এমনটাই ইঙ্গিত বিশেষজ্ঞদের। সরকার আরও বলেন, “অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে পড়লে আমাদের শরীরের মধ্যেও নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটে। সাময়িকভাবে হরমোনের ভারসাম্যে পরিবর্তন হয়। মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয়ে গেলে সে শরীরের বিভিন্ন প্রান্তে সিগন্যাল পাঠাতে থাকে। এতে শরীরের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। যেমন হঠাৎ করে পালস রেট, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া। এতে হার্টের স্বাভাবিক কাজকর্ম বিঘ্নিত হয়। হৃদপিণ্ডকে তখন বেশি কাজ করতে হয়। আর যদি কারও হাইপারটেনশন, হার্ট ফেলিওর অথবা অন্য কোনও হৃদরোগ থাকে তাহলে অতিরিক্ত উত্তেজনা এড়িয়ে চলা উচিত।”
অতিরিক্ত উত্তেজনা কীভাবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে? এই প্রসঙ্গে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী TV9 বাংলাকে বলেন, “অতিরিক্ত উত্তেজনায় হার্ট রেট স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। এতে হার্টও স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না। এর জেরে শরীরে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়।” তবে বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসকের দাবি, ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে বাঙালির মধ্যে যে টানটান উত্তেজনা রয়েছে, তা হার্টের উপর কোনও প্রভাব ফেলে না। তার কারণ এই ধরনের উত্তেজনা ক্ষণস্থায়ী। তাছাড়া খেলার ক্ষেত্রে এই ধরনের আকস্মিক ঘটনা ঘটেই থাকে।
ফুটবল বিশ্বকাপের যে উন্মাদনা, তা বাঙালির মনে দাগ কাটে। এমনটাই দাবি অ্যাডাল্ট অ্যান্ড চাইল্ড আমেরিকান বোর্ডের মনোরোগ চিকিৎসক রঞ্জন ঘোষের। TV9 বাংলাকে তিনি বলেন, “অনেকক্ষণ ধরে খেলা দেখছেন, আর গোল হতেই হঠাৎ করে উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন, এক্ষেত্রে মাথা ঘোরার উপসর্গ দেখা দেয়। এটা বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। ব্রাজিল হারায় বাঙালি দুঃখ পেয়েছে। এই ধরনের দুঃখ সহজেই চলে যায় না। এছাড়া রাত জেগে খেলা দেখায় শরীরের উপর প্রভাব পড়ে। এতে ঘুমের চক্রের অর্থাৎ স্লিপ সাইকেলে পরিবর্তন দেখা যায়। আর ঘুমে ব্যাঘাত হওয়ার অর্থ অবসাদকে ডেকে আনা।” রঞ্জনবাবু জানিয়েছেন, রাতে একা টিভির সামনে বসে খেলা দেখলে মানসিক চাপ বাড়ে। এই মানসিক চাপও কিন্তু হৃদরোগের সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
৪ বছর পর বিশ্বকাপ হচ্ছে। মেসি খেলছে সেমি-ফাইনালে। একমাস ধরে হয়তো না-ঘুমিয়ে খেলা দেখছেন আপনি। বেশিরভাগ মানুষই ভাবছেন, এক মাসের জন্য এটুকু এ দিক-ও দিক হয়তো করেই নেওয়া যায়। কিন্তু এই একমাসের অনিয়মই আপনাকে উপহার দিতে পারে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার। সুতরাং, স্বাস্থ্যের খেয়াল রেখেই বিশ্বকাপের শেষ পর্বে উৎসবে মাতুন।