আগামী বিশ্বকাপ থেকে পুরো টুর্নামেন্টকে নতুন করে সাজিয়ে তুলতে চাইছে ফিফা। টিম বেড়ে যাওয়া মানে, আকর্ষণ বাড়বে। উন্মাদনা বাড়বে। কিন্তু তা যদি না হয়?
Image Credit source: Twitter
দোহা: কাতার বিশ্বকাপ (Qatar World Cup 2022) নিয়ে যেমন বিতর্কের শেষ নেই, তেমনই এই বিশ্বকাপ আবার অন্য চিন্তাও বাড়িয়ে দিচ্ছে। চার বছর পরের ফুটবল বিশ্বকাপের ফর্ম্যাট কী হবে? চলতি বিশ্বকাপে সেরা ৩২টা দেশ খেলেছে। আগামী বিশ্বকাপ থেকে যেটা বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে ৪৮। ঘটনা হল, এই বাড়তি ১৬টা দেশকে নিয়ে কী ভাবে সাজানো হবে লিগ, তা নিয়ে কিন্তু তীব্র জটিলতা তৈরি হয়েছে। তার কারণই হল কাতার বিশ্বকাপে। এ বারের ফুটবল-উৎসবে বিশ্বের সেরা টিমগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়াই করেছে তথাকথিত ছোট দেশগুলো। তার মধ্যে মরক্কোর প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলেছে। আর্জেন্টিনাকে প্রথম ম্যাচে হারিয়ে দিয়েছে সৌদি আরব। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো জার্মানি, স্পেনকে হারিয়ে চমকে দিয়েছে। পরের বিশ্বকাপে এই ধারা যদি বজায় থাকে, তা হলে কিন্তু সেরা দেশগুলোকে নকআউটে দেখা যাবে না। আর তা যদি হয়, বিশ্বকাপের আকর্ষণ কমে যাবে। পরের বিশ্বকাপ (World Cup) নিয়ে কেন ফিফা দুশ্চিন্তায়, তুলে ধরল TV9 Bangla।
আগামী বিশ্বকাপ থেকে পুরো টুর্নামেন্টকে নতুন করে সাজিয়ে তুলতে চাইছে ফিফা। টিম বেড়ে যাওয়া মানে, আকর্ষণ বাড়বে। উন্মাদনা বাড়বে। কিন্তু তা যদি না হয়? বিশ্বকাপের বহর বাড়াতে গিয়ে টুর্নামেন্টের আকর্ষণ কমে যাবে না তো, এই নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে খোদ ফিফার অন্দরমহলে। ৪৮টা টিমকে ১৬টা গ্রুপে ভাগ করার পরিকল্পনা রয়েছে ফিফার। যার অর্থ হল, তিনটে করে টিম নিয়ে হবে গ্রুপ লিগ। যে ভাবে কাতার বিশ্বকাপে অঘটন ঘটেছে, তাতে আগামী বিশ্বকাপে তিন টিমের গ্রুপ লিগে একটা ম্যাচ হারা মানে কার্যত বিদায় ঘণ্টা বেজে যাবে। এই ব্যাপারটাই ভাবিয়ে তুলেছে ইনফান্তিনোর কমিটিকে। ৪৮টা দেশকে ১৬টা গ্রুপ ভাগ করার মধ্যে যে ঝুঁকি থাকতে পারে, তা খানিকটা হলেও বুঝতে পারছেন তাঁরা।
কানাডা, মেক্সিকো এবং আমেরিকা যৌথ ভাবে আয়োজন করতে চলেছে পরের বিশ্বকাপ। সে দিক থেকে দেখলে, পরের বিশ্বকাপ হতে চলেছে উত্তর আমেরিকায়। নিয়ম অনুযায়ী, লটারির মাধ্যমে গ্রুপ লিগ ঠিক করা হয়। তিন টিমের গ্রুপ হওয়া মানে বেশ কিছু গ্রুপে সেরা টিমগুলো পড়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কা থেকে যাবে।
এর বিকল্প কী হতে পারে, তা নিয়ে ভাবনা শুরু হয়ে গিয়েছে ফিফা কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্যে।
এক, ৪৮টা টিমকে ১২টা গ্রুপে ভাগ করা যেতে পারে। সেরা দুটো টিম যেমন শেষ ষোলোয় যাবে। বাকি টিম যাবে বেস্ট থার্ড হিসেবে।
দুই, ৪৮টা টিমকে দুটো ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রতি পুলের ২৪টা টিমকে ৬টা গ্রুপে ভাগ করা হবে। সেখান থেকে নকআউট খেলে দুটো পুলের সেরা টিম সরাসরি খেলবে ফাইনালে।
এতেও সমস্যার শেষ নেই। ৪৮টা টিমকে নিয়ে বিশ্বকাপ করার জন্য ম্যাচের সংখ্যা নিশ্চিত ভাবেই বেড়ে যাবে। কাতার বিশ্বকাপে মোট ৬৪টা ম্যাচ আয়োজন করতে ২৯ দিন রাখা হয়েছে। ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে কিন্তু সেই ম্যাচ সংখ্যা এক ধাক্কায় বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে ৮০। ৩২ দিন সময় লাগবে পুরো বিশ্বকাপ শেষ করতে। কিন্তু্ চার টিমের গ্রুপ যদি হয়, ম্যাচ সংখ্যা হবে ১০৪। একটা সপ্তাহ মেয়াদ বেড়ে যাবে বিশ্বকাপের। অর্থাৎ, ৩২এর বদলে প্রায় ৪০ দিন লাগবে বিশ্বকাপ শেষ করতে। এত লম্বা সময়ের জন্য বিশ্বকাপ আয়োজন করা যে সমস্যার, তা ফিফা ভালোই বুঝতে পারছে।
ম্যাচের সংখ্যা যদি বাড়ে, আর্থিক দিক থেকে ফিফার লাভ অবশ্য বেড়ে যাবে অনেকখানি। যত বেশি ম্যাচ, তত বেশি টিভি রেভেনিউ। ফিফার আয়ের ৯০ শতাংশই আসে বিশ্বকাপের সম্প্রচার সত্ত্ব থেকেই। তার পরও ভাবতে হচ্ছে ফিফাকে। ৪৮ টিম নিয়েই হবে পরের বিশ্বকাপ। কিন্তু ২০২৬ সালের গ্রুপ বিন্যাসটাই হয়তো পাল্টে যাবে।