Hockey World Cup 2023: ওড়িশায় চলছে হকি বিশ্বকাপ। সমস্ত বিশ্বের নজর এখন ভুবনেশ্বরে। বিশ্বকাপ চলাকালীনই ভুবনেশ্বরে খোঁজ মিলল এক হকিপাগল প্রৌঢ়ের।
সচিনের ‘পাগল’ স্যর আচরেকরকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন ৭১ বছরের বৃদ্ধ হকি কোচ!
ভুবনেশ্বর: সচিন তেন্ডুলকরের (Sachin Tendulkar) কোচকে মনে আছে? শিবাজী পার্কে আটের দশক থেকে দেখা যেত ছিপছিপে এক ক্রিকেট কোচকে। সকাল থেকে সন্ধে যিনি ছাত্রদের নিয়ে পড়ে থাকতেন নেটে। মুম্বইয়ের এ মাঠ, ও মাঠ ঘুরে বেড়াতেন। কোথাও ম্যাচ হচ্ছে দেখলেই নামিয়ে দিতেন ছাত্রদের। রমাকান্ত আচরেকর নামের সেই পাগল ক্রিকেট কোচ ছিলেন বলেই সচিন তেন্ডুলকরের জন্ম হয়েছিল। বিনোদ কাম্বলি উঠে এসেছিলেন। সেই আচরেকরকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন ৭১ বছরের এক হকি (Hockey) কোচ! বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla-র এই প্রতিবেদনে।
ওড়িশায় চলছে হকি বিশ্বকাপ। সমস্ত বিশ্বের নজর এখন ভুবনেশ্বরে। বিশ্বকাপ চলাকালীনই ভুবনেশ্বরে খোঁজ মিলল এক হকিপাগল প্রৌঢ়ের। ওড়িশার এক প্রত্যন্ত গ্রামে থাকেন ৭১ বছরের ডমিনিক টোপ্পো। যদিও বয়সকে হার মানিয়েছেন তিনি। সত্তরোর্ধ্ব প্রৌঢ় হকি স্টিক হাতে সকাল থেকে বিকেল দৌড়ে বেড়ান। সকাল সাড়ে ৬টায় হকি মাঠে পৌঁছে যান। আর মাঠ ছাড়েন বিকেল সাড়ে ৫টায়। এটাই তাঁর রোজের রুটিন। হকির প্রতি ভালোবাসা। আর সেই ভালোবাসার জন্যই যেন তাঁর বেঁচে থাকা। ওড়িশার রৌরকেল্লার এক প্রত্যন্ত গ্রামে থাকেন ডমিনিক। সেখানে গড়ে তুলেছেন হকি খেলোয়াড় তৈরি কারখানা। সকাল থেকে বিকেল বিভিন্ন বয়সীর ছেলেমেয়েদের ট্রেনিং দিয়ে যান। সবাই-ই তাঁর নাতি নাতনির বয়সী। অথচ তাদের সঙ্গেও পাল্লা দিয়ে দৌড়ে যান ডমিনিক টোপ্পো।
ভবিষ্যতের হকি খেলোয়াড়দের তুলে আনতেই ডমিনিকের এই যজ্ঞ। শেষ ২২ বছর ধরে এই কাজ করে চলেছেন তিনি। বৃদ্ধের চোখে এখনও বেঁচে থাকে আশা, স্বপ্ন। আর একনাগাড়ে বলে যান, ‘শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমি এই কাজ করে যাব। এই কাজ করতে করতেই যেন আমার মৃত্যু হয়।’
গ্রামে গ্রামে সাইকেল চালিয়ে খেলোয়াড় তুলে আনতেন ডমিনিক। ৪০ থেকে ৫০ কিমি সাইকেল নিয়ে ছুটতেন খেলোয়াড় তুলে আনার জন্য। হকির নেশায় নিজের ব্যবসা থেকে সরে দাঁড়ান। পৈতৃক সম্পত্তি বন্ধক রাখেন ডমিনিক। আর সেই অর্থ দিয়েই ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের হকি শেখান তিনি। রৌরকেল্লায় একশোরও বেশি রাজ্যস্তরের খেলোয়াড় তৈরি করেছেন ডমিনিক। ১৩ জন জাতীয় দলের সিনিয়র আর জুনিয়র স্তরে খেলেছেন। মিডফিল্ডার লিলিমা মিন্জ, জীবন কিশোরী টোপ্পোরা পরিচিত নাম।
হকি ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট দিলীপ তিরকে বলেন, ‘ডমিনিকের মতো কোচেরা আমাদের সম্পদ। খেলাধূলাকে ওরাই বাঁচিয়ে রেখেছে। ওদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় ভবিষ্যতের প্রজন্মরা উপকৃত হয়। যখন কোনও ছোট কেউ হকি স্টিক হাতে তুলে নেয়, তখন গ্রাসরুট কোচেরই প্রথম দায়িত্ব থাকে কি ভাবে তাকে পরিচালিত করবে। বছরের পর বছর ডমিনিক সাফল্যের সঙ্গে সেই কাজ করে চলেছে।’
টোপ্পোর স্ত্রী মারা গিয়েছেন বেশ কয়েকবছর আগে। তবে তাঁর স্ত্রীও তাঁকে এই কাজে সাহায্য করতেন। ডমিনিকের বাবা হকি খেলতেন। ছেলেবেলায় বাবাকে সাহায্য করতেই মাঠে যাওয়া। আর সেখান থেকেই হকির জন্য ভালোবাসা জন্ম নেয় ডমিনিকের মনে।
আচরেকর, ডমিনিকরা না থাকলে কি আর ক্রিকেট, হকি এতটা সমৃদ্ধ হত!