Bengal vs Saurashtra, Ranji Trophy Final: এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে ইডেনের গ্য়ালারিতে ছিলেন। সচিনের বিতর্কিত রান আউটে গ্যালারিতে রীতিমতো আগুন জ্বলে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না। উত্তপ্ত পরিস্থিতি ঠান্ডা করেন ভারতীয় ক্রীকেটের দক্ষ প্রশাসক জগমোহন ডালমিয়া এবং সচিন। তাদের আবেদনে জনতা শান্ত হন, খেলা ফের শুরু হয়।
Image Credit source: OWN Photograph
দীপঙ্কর ঘোষাল
ওই বাজে শঙ্খধ্বনি…। অর্পিত ভাসাভরার ব্যাটে অল্পের জন্য চুম্বন দিতে পারল না আকাশদীপের ডেলিভারি। মুকেশ কুমারের বিষমাখানো আউট সুইংয়ের ছোবল কোনও রকমে বাঁচলেন প্রতিপক্ষ ব্যাটার। সঙ্গে সঙ্গে ভেসে এল শঙ্খধ্বনি। প্রতিটা ডেলিভারিতে। দ্বিতীয় দিনের ঘটনা শুধু নয়। ম্যাচের পয়লা বল থেকে এ ভাবেই বাংলাকে তাতিয়ে গেলে শঙ্খনাদ। গমগমে, সুতীক্ষ্ণ, সুরেলা। নবদ্বীপ থেকে ক্রিকেটের নন্দনকাননে নিয়মিত আসেন অশোক চক্রবর্তী। অন্য় বার শরীরে আঁকা থাকত জার্সি, মাথায় মুকুট। এ বার কেকেআরের এক জার্সি পরে। মাথায় জাতীয় পতাকার রঙের উইগ। আর হাতে শঙ্খ। রঞ্জি ফাইনালের প্রথম দিনের প্রথম সেশনের কথা ভাবলে বাংলার ক্রিকেট প্রেমীরা অস্বস্তিতে পড়তে পারেন। শাহবাজ আহমেদ ও অভিষেক পোড়েল শতরানের জুটি না গড়লে প্রথম সেশনেই হয়তো অলআউট হয়ে যেত বাংলা। মনোজ তিওয়ারির টিম কুঁকড়ে থাকুক আর আগ্রাসী হোক, ইডেন মাতিয়ে অশোকের শঙ্খধ্বনি শোনা গিয়েছে ঠিক। বিস্তারিত TV9Bangla-য়।
ইডেনের যে প্রান্তেই আপনি বসে থাকুন, প্রতিটা ডেলিভারিতে শঙ্খধ্বনি কানে আসবেই। তবে ওঁর পাশে বসলে শোনা যাবে, শুধুমাত্র শঙ্খধ্বনিই নয়, বাংলাকে তাতানোর জন্য নানা কথাও বলছেন। বোলার-ফিল্ডারদের সাবাশি দিচ্ছেন। ভালো বোলিং করার উৎসাহও…। ইডেনে নতুন নয় অশোক। তবে এ বছর স্পেশাল ঘটনা ঘটেছে নবদ্বীপের বাসিন্দার জীবনে। একটা সময় নিজেও ক্রিকেট খেলতেন। জেলাস্তর অবধি খেলেছেন। কিন্তু কোনও দিনই ইডেনে খেলার সুযোগ হয়নি। সেই ছেলেবেলা থেকে ইডেন তাঁর কাছে চন্দ্রাভিযানের মতো! অলীক কোনও স্বপ্ন। এ বার প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়ার জন্মবার্ষিকীতে তাঁকে মাঠ অবধি ঢোকার সুযোগ করে দিয়েছিলেন বাংলা ক্রিকেট সংস্থার প্রাক্তন সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া। তারপর থেকে অশোকের জন্য ঠিক কিছু না কিছু ব্যবস্থা করে রাখেন অভিষেকই। করবেন নাই বা কেন, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের সুপার ফ্যান আছে। আইপিএল টিম, ভারতীয় টিমের সুপার ফ্যান আছে। কিন্তু বাংলার রঞ্জি টিমের সুপার ফ্যান? এতদিন ছিল না। অশোক সেই অভাব মিটিয়ে দিয়েছেন!
টিভি নাইন বাংলাকে অশোক বললেন, ‘সেই ১৯৯৯ সাল থেকে ইডেনে আসি। তখন অবশ্য টিকিট কেটেই ঢুকতাম। জার্সির তো অনেক দাম। তাই বডি পেইন্ট করতাম। কম খরচে হয়ে যেত’ এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে ইডেনের গ্য়ালারিতে ছিলেন। সচিন তেন্ডুলকরের বিতর্কিত রান আউটে গ্যালারিতে রীতিমতো আগুন জ্বলে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না। উত্তপ্ত পরিস্থিতি ঠান্ডা করেন ভারতীয় ক্রিকেটের দক্ষ প্রশাসক জগমোহন ডালমিয়া এবং সচিন। তাঁদের আবেদনে জনতা শান্ত হন, খেলা ফের শুরু হয়।
অশোকের কথায়, ‘সেই ম্যাচ থেকেই জগমোহন ডালমিয়া এবং সচিন স্য়ারের প্রতি শ্রদ্ধা জন্মায়। নিয়মিত মাঠে আসা শুরু করি। দেখতে দেখতে এতগুলো বছর পেরিয়ে গেল।’ ইডেনে কোনও ম্যাচ থাকলে সহজে মিস করেন না। দামের চেয়ে অনেক বেশি দিয়েও টিকিট কেটে উপস্থিত থেকেছেন। কিন্তু গত বছর এক ম্যাচে মাঠেই ঢুকতে পারেননি। বিষয়টি নজরে পড়ে অভিষেক ডালমিয়ার। এরপর থেকে আর ইডেনে ম্যাচ থাকলে টিকিট নিয়ে ভাবতে হয় না। ক্লান্তিহীন ভাবে শঙ্খ বাজিয়ে দলকে উৎসাহ দিয়ে যান। এ বার রঞ্জি ফাইনাল। স্কোর বোর্ড তাঁকে হতাশায় রাখলেও চেষ্টা থামাননি অশোক।
খেলায় কী না হয়! হেরে যেতে যেতেও একটা টিম অবিশ্বাস্য ভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। ম্যাচ জিতে নেয়। রঞ্জি ফাইনালে তেমন কিছু হলে মনোজের টিমের মতো অশোককেও কৃতিত্ব দিতে হবে। গ্যালারিতে বসে তাঁর দুরন্ত পারফরম্যান্স ভুললে চলবে কেন!