IPL 2023 Long Match: বাটলারের মতো একজন ক্রিকেটারও খেলার গতি বাড়ানোর কথা বলছেন, বোধ হয় সময় এসেছে আইপিএল কমিটিকে তা গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখার।
দীর্ঘ আইপিএল ম্যাচে বিরক্ত ক্রিকেটাররা, বিসিসিআইয়ের ঘুম ভাঙবে কবে?
মুম্বই: দল বেড়েছে আইপিএলে (IPL)। দিনও। কিন্তু সবকিছুর থেকে ক্রমশ কি বিরক্তি হয়ে উঠছে, ম্যাচের মোট সময়? দর্শকরা কী ভাবছে, তা হয়তো বলা কঠিন। কিন্তু ক্রিকেটাররা যে অধৈর্য হয়ে পড়ছেন, বলাই যায়। টেস্ট এবং ওডিআই ক্রিকেটের একঘেয়েমি কাটাতেই আনা হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাট। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ম্যাচ কি এত দীর্ঘ হয়? এই সময়ে ওডিআই ক্রিকেটের একটা ইনিংস শেষ হয়েও অনেকটা সময় বাকি থাকবে। তাহলে টি-টোয়েন্টি (T20) ক্রিকেট দেখার উৎসাহ কী ভাবে একই থাকবে! এমন ভাবনা আসাই স্বাভাবিক। প্রতিটি দলেরই ওভার শেষ করার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে দেওয়া হয়। কিন্তু এ বারের আইপিএলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইনিংস কিংবা ম্যাচ শেষ হতে দেখা যায়নি। দিল্লি ক্যাপিটালস বনাম গুজরাট টাইটান্স ম্যাচটাই ধরা যাক। সন্ধে সাড়ে ৭টায় ম্যাচ হলেও বিকেল ৫.৩০ এর মধ্যে ৮০ শতাংশ দর্শক মাঠ ভরিয়েছে। আগে আসার অন্যতম কারণ, ওয়ার্ম আপে প্রিয় ক্রিকেটারদের দেখা। কিন্তু বেরোনোর সময় যন্ত্রণা সঙ্গী হচ্ছে। অনেকে ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই চলে যাচ্ছেন। বিষয়টা শুধু দিল্লি ক্যাপিটালস বনাম গুজরাট ম্যাচে নয়। বিস্তারিত TV9Bangla-য়।
একটা ইনিংসই ১২০ মিনিট! হ্যাঁ, এ বারের আইপিএলে এমনটাই দেখা যাচ্ছে। প্রতিটি দলের একটা ইনিংসের জন্য বরাদ্দ থাকে ৯০ মিনিট। এর মধ্যে ২০ ওভার শেষ করার কথা। কার্যক্ষেত্রে এমনটা হচ্ছে না। একটা ইনিংস শেষ হতে চলে যাচ্ছে আধঘণ্টা বেশি সময়। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। চেন্নাইতে ধোনিরা নেমেছিলেন লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে। মাঠে কুকুর ঢুকে পড়ায় ৫ মিনিট দেরিতে শুরু হয় ম্যাচ। রাজস্থান রয়্যালসের বিধ্বংসী ওপেনার তথা বিশ্বজয়ী ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার সোশ্য়াল মিডিয়ায় একটি ইমোজি এবং আইপিএল হ্যাশট্যাগ দিয়ে পোস্ট করেন, ‘খেলার গতি বাড়ুক প্লিজ।’ সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংস শেষ হয়েছিল ১ ঘণ্টা ৪৮ মিনিটে। ম্যাচ শেষ হয় রাত ১১.৩০টার পর। কোনও দল অলআউট না হলে অথবা রান তাড়ায় দ্রুত না জিতলে প্রায় প্রতি ম্যাচেই এই চিত্রটা দেখা যাচ্ছে। তবে এটাই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের কিংবা আইপিএলের প্রথম ন’টি ম্যাচের সবচেয়ে দীর্ঘ ইনিংস নয়। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর নেমেছিল। আরসিবি বোলিং শেষ হয় ২ ঘণ্টা ২মিনিট! তেমনই গুজরাট টাইটান্স বনাম চেন্নাই সুপার কিংস উদ্বোধনী ম্যাচে হার্দিকরা বোলিং শেষ করেছিলেন ২ ঘণ্টায়। ওপেনিং সেরিমনির জন্য এমনিতেই ম্যাচটি ২ মিনিট দেরিতে শুরু হয়েছিল। এ বারে আইপিএলে কোনও সম্পূর্ণ ইনিংস নেই যেখানে ৯০ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়েছিল। এই যে ৯০ মিনিট দেওয়া হয় এর মধ্যে ৫ মিনিট স্ট্র্যাটেজিক টাইম আউট ধরাই থাকে। সব মিলিয়ে আইপিএলে একটি ম্যাচের জন্য ধরা থাকে ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট।
টিমগুলি যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য়ে ইনিংস শেষ করতে পারে, এর জন্য নানা পেনাল্টিও রয়েছে। কোনও দল বেশি সময় নিলেই পেনাল্টি হিসেবে ফিল্ডিং বিধি নিষেধও আনা হয়েছে। ৯০ মিনিটের মধ্যে ওভার শেষ না হলে, বাকি ওভারগুলিতে ৩০ গজ সার্কেলের বাইরে একজন কম ফিল্ডার নিয়ে বোলিং করতে হয়। দর্শকদের কথা ভেবে ৮টার পরিবর্তে আধ ঘণ্টা এগিয়ে আনা হয়েছিল আইপিএলের ম্যাচ। কোনও কিছুতেই লাভ হয়নি। প্রায় প্রতিটি ম্যাচই ৪ ঘণ্টা সময় লাগছে শেষ হতে। ফলে একদিনে দুটো ম্যাচ থাকলে টেলিভিশন এবং ওটিটি প্লাটফর্মের দর্শকরা যেমন সমস্যায় পড়ছেন। মাঠের দর্শকদেরও বিরক্তি বাড়ছে। যা কোনও ভাবেই আইপিএল কিংবা ব্রডকাস্টারদের জন্য় ভালো বার্তা নয়। ম্যাচ দেরি হওয়ার ক্ষেত্রে ওভার বাউন্ডারি হওয়া, বল খুঁজে পাওয়া যেমন কারণ, তেমনই আরও একটা বড় কারণ রিভিউ। এ বারের আইপিএলে আউটের সিদ্ধান্ত ছাড়া ওয়াইড-নো বলের ক্ষেত্রেও রিভিউ চালু হয়েছে। ফলে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফের ভাবতে হবে ভারতীয় বোর্ডকে। এখন সবে টুর্নামেন্টের শুরুর দিক। হোম-অ্যাওয়ে ফরম্যাটে টুর্নামেন্ট ফেরায় মাঠে দর্শকও বাড়ছে। কিন্তু ম্যাচের সময় যদি এ ভাবেই বাড়তে থাকে, দর্শকরা মুখ ফিরিয়েও নিতে পারেন। ২০১৮ সালে ইন্ডিয়ান্স এক্সপ্রেস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল যেখানে স্টার স্পোর্টসের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের মন্তব্য়ও ছিল। তিনি পরিষ্কার জানিয়েছিলেন, রাত ১০.৪৫ মিনিটের পর থেকেই টেলিভিশন দর্শক সংখ্য়া কমে যাচ্ছিল। শুধু তাই নয়, ১১টার পর গ্রাফটা আরও ভয়ঙ্কর। এর থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, দর্শকদের বেশির ভাগ অংশই এত সময় ধরে ম্যাচ দেখার পক্ষপাতী নয়। টুর্নামেন্টে বেশ কিছু ম্যাচেই স্লো-ওভার রেট দেখা গিয়েছে। হাতে গোনা কিছু ম্য়াচে কোনও দল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইনিংস শেষের চেষ্টা করেছে। বাটলারের মতো একজন ক্রিকেটারও খেলার গতি বাড়ানোর কথা বলছেন, বোধ হয় সময় এসেছে আইপিএল কমিটিকে তা গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখার।