এক ওভারে পর পর তিনটে ছয় খেয়েছিলেন বাবা, নিজের গল্প শোনাচ্ছেন ছেলে দয়ালকে!


রবি-রাতে আলিগড়ে যখন রিঙ্কুর জন্য বিজয়োৎসব, এলাহাবাদে টেলিভিশনের সুইচ অফ করে দিয়েছিলেন যশ দয়ালের বাবা।

এক ওভারে পর পর তিনটে ছয় খেয়েছিলেন বাবা, নিজের গল্প শোনাচ্ছেন ছেলে দয়ালকে!

আমেদাবাদ: ছুঁতে না পারা স্বপ্ন সন্তানের মধ্যে দিয়ে পূরণ করার চেষ্টা করেন অভিভাবকরা। ক্রিকেট যে কারও পেশা হতে পারে, এখনও অনেকেই মানেন না। যেমনটা মানতেন না চন্দ্রপাল দয়ালের বাবা। বলেছিলেন, ‘ক্রিকেটে কোনও ভবিষ্যৎ নেই। সময় নষ্ট না করে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নাও।’ বাবার নির্দেশ শিরোধার্য করে আর ক্রিকেটার হয়ে ওঠা হয়নি। সেই তিনিই ছেলের ক্ষেত্রে নিলেন অন্য সিদ্ধান্ত। ছেলের মধ্যে প্রতিভার ঝলক দেখে আর দেরি করেননি চন্দ্রপাল। ছেলের পাশে দাঁড়ান। তাঁকে ক্রিকেট নিয়ে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করেন। কে এই চন্দ্রপাল দয়াল (Chandarpal Dayal)? তিনি যশ দয়ালের বাবা। আর যশ দয়াল (Yash Dayal) কে? রবিবার আমেদাবাদে ম্যাচে তাঁরই শেষ ওভারে ৫ বলে টানা ৫টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন রিঙ্কু সিং। মাত্র ৬ বছর বয়স থেকে ক্রিকেট-যোগ যশের। বাবাকে বরাবর পাশে পেয়েছেন। এই ৫ বলে ৫ ছক্কার দগদগে ক্ষতেও একদিন প্রলেপ পড়বে, যশকে ভরসা দিয়েছেন তাঁর বাবা। টানা ৫ ছক্কা হজম করে ভেঙে যাওয়া যশকে আর কী বললেন তাঁর বাবা? বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla-র এই প্রতিবেদনে।

রবি-রাতে আলিগড়ে যখন রিঙ্কুর জন্য বিজয়োৎসব, এলাহাবাদে টেলিভিশনের সুইচ অফ করে দিয়েছিলেন যশ দয়ালের বাবা। যে ব্যক্তি দিনের শুরুটাই করে সংবাদপত্রের পাতা উল্টে, সেই তিনিই কিনা সোমবার সকালের সংবাদপত্র ছুঁয়ে দেখেননি। ছেলের কষ্টটা টের পেয়েছিলেন চন্দ্রপাল দয়াল। যশের কান্নামাখা ছবি দেখতে চাইছিলেন না চন্দ্রপাল। যশের ম্যাচ দেখতে আমেদাবাদ স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন তাঁর কাকু-কাকিমা, তুতো বোনরা। যশের বাবা তাঁদের বলেন, যশের সঙ্গে যেন টিম হোটেলে গিয়ে দেখা করেন। চন্দ্রপাল জানান, তাঁর ছেলে খুব চাপা স্বভাবের। কথা কম বলেন। যন্ত্রণায় আরও বেশি ডুবে যাবেন যশ, ভালোই বুঝতে পেরেছিলেন চন্দ্রপাল।

যশের বাবা নিজেও একসময় ফাস্ট বোলার ছিলেন। ৮০’র দশকের শেষ দিকে ভিজি ট্রফিতে তিনি খেলেছিলেন। সে সময় যশের মতোই অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাঁর। যশকে নিয়ে চন্দ্রপাল বলেন, ‘আমিও ক্রিকেটার ছিলাম। তবে বাবা-মার ভূমিকাটা আলাদা। যশের শেষ ওভারটা দেখে আমিও কিছুটা বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিলাম। মাথায় ঘুরছিল, কেন এমন ঘটল, কী ভাবে ঘটল। ছেলের জন্য চিন্তা হচ্ছিল।’ যশকে ফোন করে চন্দ্রপাল বলেন, ‘ঘাবড়িও না। ক্রিকেটে এ সব নতুন নয়। বোলাররা মার খায়। বড় বড় বোলারদের কেরিয়ারেও হয়েছে। লাসিথ মালিঙ্গা, স্টুয়ার্ট ব্রডের মতো বড় বড় ক্রিকেটাররাও এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। পরিশ্রম করে যাও। খুঁজে বের করো, কোথায় ভুল হয়েছে।’

চন্দ্রপাল নিজেও এইরকম ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘ভিজি ট্রফিতে একটা সেমিফাইনাল ম্যাচে এক ব্যাটার আমার এক ওভারে পরপর ৩টি ছক্কা মেরেছিল। যশকে সেই গল্প বহুবার বলেছি। ম্যাচটা হেরে যাই। গতকাল রাতে ফোন করে যশকে আমার ম্যাচটা মনে পড়িয়ে দিয়েছি।’ ছেলেকে বাবা বলে রেখেছেন, মোহালিতে গুজরাটের ম্যাচে স্টেডিয়ামে থাকবেন। ছেলের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

রিঙ্কুর কাছে ৫ ছক্কা হজম করার পর কেকেআর শিবির থেকেও বার্তা পেয়েছেন যশ। কেকেআর টুইটারে লেখে, ‘তোমার শুধু একটা খারাপ দিন গিয়েছে। শক্তিশালী হও। ক্রিকেট মাঠের সর্বসেরাদের সঙ্গেও এমনটা আগে হয়েছে। তুমি চ্যাম্পিয়ন যশ। নিজের উপর আস্থা রাখো এবং দেখতে তুমি ফের দারুণভাবে প্রত্যাবর্তন করবে।’



Leave a Reply