Wriddhiman Saha : আইপিএলে প্রায় প্রতি ম্যাচেই ধারাভাষ্যকাররা এক বাক্যে স্বীকার করে নিচ্ছেন, উইকেটের পিছনে ঋদ্ধির মতো অভিজ্ঞ কিপার থাকা অ্যাডভান্টেজ। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ম্যাচেও সঞ্জয় মঞ্জরেকর এমন কথা বলেছেন। ঋদ্ধির ফিটনেস নিয়েও প্রশ্ন তোলার জায়গা নেই। সে কারণেই আলোচনা, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের মতো হাইভোল্টেজ ম্যাচে ঋদ্ধির সুরক্ষিত-গ্লাভস থাকলে হয়তো লাভবান হত ভারতীয় দল।
কলকাতা : ‘ক্যাচেস উইন ম্যাচেস’, ‘ক্যাচ মিস, ম্যাচ মিস’। ধারাভাষ্যকারদের মুখে হামেশাই এই বাক্যদুটি শোনা যায়। একটা ক্যাচ মিস, ম্য়াচের রং কতটা বদলে দিতে পারে, তা কারও অজানা নয়। তেমনই একটা অভাবনীয় ক্যাচ, একটা সেঞ্চুরি কিংবা পাঁচ উইকেট নেওয়াকেও ফিকে করে দিতে পারে। খুঁজলে এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে। টেস্ট ক্রিকেটে শুধু ক্য়াচই নয়, প্রতিটা ডেলিভারিতেই কিপারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আর এখানে বলা যায়, টেকনিকের দিক থেকে এখনও দেশের অন্যতম সেরা কিপার ঋদ্ধিমান সাহা। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে হাতে গোনা সুযোগ পেয়েছেন। টেস্ট ক্রিকেটেও ব্রাত্য ঋদ্ধি। অথচ তাঁর কিছু ক্য়াচ এখনও ইউটিউবে অনেকে খুঁজে দেখেন। প্রশ্ন উঠতে পারে, হঠাৎ কেন ঋদ্ধিমানকে নিয়ে আলোচনা! প্রসঙ্গ বিশ্ব টেস্ট চ্য়াম্পিয়নশিপ ফাইনাল। অজিঙ্ক রাহানের যদি টেস্ট স্কোয়াডে প্রত্যাবর্তন হতে পারে, ঋদ্ধিরও কি হতে পারতো না? কেন ঋদ্ধিকে প্রয়োজন ছিল, বিশ্লেষণ TV9Bangla Sports-এর।
টানা দ্বিতীয় বার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলবে ভারত। উদ্বোধনী সংস্করণে রানার্স হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল আইসিসির এই প্রতিযোগিতায়। ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমীদের আরও এক বার মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, ২০১৩ সালের পর ভারত কোনও আইসিসি ট্রফি জেতেনি। ২০০৭ সালে উদ্বোধনী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়, ২০১১ সালে ঘরের মাঠে ওডিআই বিশ্বকাপ জয় এবং শেষ বার ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এরপর থেকে ফাইনাল এবং সেমিফাইনাল অবধি পৌঁছলেও ট্রফি আসেনি। আরও একবার ভারতের সামনে সুযোগ এসেছে আইসিসি ট্রফি জয়ের। স্কোয়াডে চমক অজিঙ্ক রাহানে। ভারতের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে ম্য়াচ বিশ্ব টেস্ট চ্য়াম্পিয়নশিপ ফাইনাল। আর এই ম্য়াচের স্কোয়াড ঘোষণার পর প্রশ্ন, রাহানেকে ফেরানো গেলে ঋদ্ধিমান সাহাকে কেন নয়?
শ্রেয়স আইয়ারের গুরুতর চোট না থাকলে রাহানের হয়তো সুযোগ মিলত না। সুর্যকুমার যাদবের চেয়ে অভিজ্ঞ রাহানেকে ফেরানোই শ্রেয় মনে করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। ভারতীয় দলের নিয়মিত কিপার ঋষভ পন্থও গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরতর চোট থেকে সেরে উঠছেন। তাঁর ফিরতে কতদিন লাগবে, এই প্রশ্নের আপাতত কোনও উত্তর নেই। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্য়াচে ঋষভকে না পাওয়া বড় ধাক্কা। অভিজ্ঞ রাহানের মতো ঋদ্ধিমানকে ফেরালে হয়তো আরও শক্তিশালী হত স্কোয়াড। কারণ, তাঁর দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা। কোনা শ্রীকার ভরত সর্বাসাকুল্যে খেলেছেন ৪টি টেস্ট। সেখানে ঋদ্ধির ৪০টি টেস্টের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা ইংল্য়ান্ডে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। শ্রীকার ভরত এখানে অনেকটাই পিছিয়ে।
অনেকেই বলতে পারেন, ভবিষ্যতের কথা ভেবেই ভরতের ওপর ভরসা রাখা হয়েছে। খুব ভালো কথা। কিন্তু ইংল্যান্ডের পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য কতটা সময় পাবেন তিনি? অনুশীলন আর ম্য়াচ এক বিষয় নয়। ইংল্য়ান্ডের পরিবেশে সুইংয়ের বিষয় কারও অজানা নয়। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর লেট সুইং এবং বল উবল করা (গ্লাভসের সামনে এসেও বাঁক খেতে পারে)। এমনটা হামেশাই দেখা যায়। ইংল্য়ান্ডের পরিবেশে কিপারদের কাছে সবচেয়ে বড় চ্য়ালেঞ্জ এটাই। শ্রীকার ভরত এই বিষয়টির সঙ্গে কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন সন্দেহ রয়েছে। বিশেষ করে সামি এবং মহম্মদ সিরাজের ১৪০কিমি/ঘণ্টার বেশি ডেলিভারিতে এমন পরিস্থিতিতে কিপিং করা একেবারেই সহজ নয়। তেমনই পিচে বাউন্স থাকায় রবিচন্দ্র অশ্বিন এবং জাডেজার মতো স্পিনারদের বল কিপ করাও বাড়তি চ্য়ালেঞ্জ। ফাইনালের মতো ম্য়াচে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হতে পারে। শ্রীকার ভরতকে ভবিষ্যতের জন্য় প্রস্তুত করা হচ্ছে, সেটা অন্য সিরিজেও করার সুযোগ থাকবে। ফাইনালে তাঁর কোনও ভুল কিন্তু আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যেতে পারে।
ঋদ্ধিকে সুযোগের প্রশ্ন তোলার অন্য়তম কারণ, শ্রীকার ভরত কিন্তু ম্যাচের মধ্যে নেই। এ বারের আইপিএলে গুজরাট টাইটান্সেই রয়েছেন ভরত। নিয়মিত খেলানো হচ্ছে ‘বয়স্ক’ ঋদ্ধিমান সাহাকেই। উইকেটের পিছনে সেফ হ্য়ান্ডকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন টাইটান্স অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া। ঋদ্ধিকে এবার রিটেন করেছেন। সব ম্য়াচে ওপেন করছেন। দলের জন্য় ব্য়াট হাতেও অবদান রাখছেন। তাঁকে যে দায়িত্ব টুকু দেওয়া হয়েছে দক্ষতার সঙ্গে পালন করছেন। কিপিং নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ দেননি। আইপিএলে প্রায় প্রতি ম্য়াচেই ধারাভাষ্যকাররা এক বাক্য়ে স্বীকার করে নিচ্ছেন, উইকেটের পিছনে ঋদ্ধির মতো অভিজ্ঞ কিপার থাকা অ্যাডভান্টেজ। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ম্য়াচেও সঞ্জয় মঞ্জরেকর এমন কথা বলেছেন। ঋদ্ধির ফিটনেস নিয়েও প্রশ্ন তোলার জায়গা নেই। সে কারণেই আলোচনা, টেস্ট চ্য়াম্পিয়নশিপ ফাইনালের মতো হাইভোল্টেজ ম্য়াচে ঋদ্ধির সুরক্ষিত-গ্লাভস থাকলে হয়তো লাভবান হত ভারতীয় দল।