IPL 2023 : নেটে বোলিং করতে করতে একদিন হয়তো ২২ গজে আইপিএলের কোনও ম্যাচে বোলিং করবেন। আপাতত ২১ বছরের জিন্না মন্ডল এমন স্বপ্নই দেখছেন। কেকেআরের হয়ে আইপিএলে খেলার স্বপ্ন তাঁর কবে পূর্ণ হবে?
Image Credit source: Twitter
কলকাতা : কেকেআর (KKR) সব সময় অনামী ক্রিকেটারদের সুযোগ দেয়। তরুণ ক্রিকেটারদের ওপর ভরসা রাখে। এই যেমন ধরুন না রিঙ্কু সিংকেই। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত নাইটদের হয়ে নেটে কঠোর পরিশ্রম করে গিয়েছেন। চলতি মরসুমে আলিগড়ের সেই রিঙ্কু সিং একাধিক ম্যাচে কলাকাতা নাইট রাইডার্সের সঙ্কটমোচন হয়ে উঠেছেন। শুধু রিঙ্কুই নয়, এ বারের আইপিএলে হর্ষিত রানা, সূয়াশ শর্মাদের মতো তরুণ তুর্কিদেরও সুযোগ দিচ্ছে নাইটরা। তাঁরাও সুযোগ পেলে নিজেদের প্রমাণ করতে ছাড়ছেন না। প্লে অফের দৌড়ে টিকে থাকার জন্য দলের সকলেই নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছেন। নাইটদের নেটে কোনও কসুর ছাড়ছেন না নীতীশ রানা-আন্দ্রে রাসেলরা। আর তাঁদের জন্য তৈরি করার দায়িত্ব থাকছে এক তরুণ, উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের জিন্না মন্ডলের (Jinnah Mondal) ওপর। আসলে চলতি আইপিএলে (IPL 2023) কেকেআরের এক নেট বোলার হলেন জিন্না। কে বলতে পারে কয়েক বছর পর তাঁকেও হয়তো রিঙ্কুর মতো দেখা যেতে পারে দলকে ম্যাচ জেতাতে। কীভাবে কেকেআরের নেট বোলার হলেন জিন্না? বিস্তারিত রইল TV9Bangla Sports এর এই প্রতিবেদেন।
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের বিবিপুরে অভাবের সংসারে জন্ম জিন্না মন্ডলের। তাঁর বাড়ি যেখানে, সেই গ্রামে না আছে ক্রিকেট ট্রেনিং সেন্টার, না আছে ভালো কোচ। তাই তিনি যে ক্রিকেটার হয়ে উঠতে পারবেন, এটাই তাঁর কাছে বড় প্রশ্ন ছিল। টেনিস বলে খেলা শুরু করেন জিন্না। ওই সময় তাঁর বাড়ির কাছের এক ক্রিকেট প্রেমীর নজরে পড়েন তিনি। সেই ব্যক্তিই জিন্নাকে কলকাতায় সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অ্যাকাডেমিতে ট্রায়ালের জন্য নিয়ে আসেন। জিন্নার বোলিং দেখে তাঁকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিতে রাজি হয়ে যান সম্বরণ। জিন্নার বাড়ি থেকে সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্রিকেট অ্যাকাডেমির দূরত্ব অনেকটাই। তবে জিন্নার ক্রিকেট খেলার জেদ সেই সবের কাছে কোনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
সব বাধা অতিক্রম করে বসিরহাট থেকে কলকাতায় ক্রিকেটের তালিম নিতে আসতেন জিন্না। ভোর ৩টে নাগাদ ঘুম থেকে উঠে সাইকেল চালিয়ে প্রথমে বাড়ি থেকে ১০ কিমি দূরে থাকা কাকরা মির্জানগর স্টেশনে আসতেন জিন্না। সেখান থেকে ট্রেনে কলকাতায়। এরপর ট্রেনিং গ্রাউন্ডে। জিন্নারা তিন ভাই-বোন। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর মতো অবস্থা হলেও জিন্না পরিবারকে পাশে পেয়েছেন। মাছ ধরে দিন সংসার চালান জিন্নার বাবা। ছেলের পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করে জিন্নার বাবা বলেন, ‘ও দরিদ্রতার মধ্যে বড় হয়েছে। আমরা ওকে ভালো জুতো, জামা কিছুই দিতে পারিনি। ও তাও মনে জোর এবং কঠোর পরিশ্রম করে খেলা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা ওকে সফল হতে দেখতে চাই।’
প্রসঙ্গত, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হয়ে দ্বিতীয় ডিভিশনের বর্তমানে খেলেন জিন্না। সেখান থেকেই আইপিএলে নেট বোলার হিসেবে সুযোগ পান তিনি। জিন্না জানান, ২০১৮-১৯ সালে তিনি নেট বোলার হিসেবে খেলেছিলেন এবং বর্তমানেও তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে নেট বোলিং করছেন।