Women Kabaddi Player : ক্লাস ৩-৫ অবধি তুহিনা প্রথমে জিমন্যাস্টিক্স খেলত। এরপর ক্লাস সিক্স থেকে তুহিনা কবাডি খেলা শুরু করে। এখন চন্দননগর হাটখোলা সপ্ত সম্মেলনী ক্লাবের হয়ে কবাডি খেলেন তুহিনা। জাতীয় স্তরে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।
Kabaddi : বাবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কবাডি খেলে ‘খেলো ইন্ডিয়া’য় ব্রোঞ্জ পদক বর্ধমান ইউনিভার্সিটির তুহিনার
কথায় বলে ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। তা আরও এক বার প্রমাণ করে দেখালেন হুগলির মেয়ে তুহিনা মাইতি। ছেলেবেলা থেকে তুহিনার মা চাইতেন তাঁকে ক্রীড়াবিদ বানাবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। মাত্র ৩ বছর বয়সেই তাই তুহিনাকে স্থানীয় কালিয়াড়া শক্তি সংঘ ক্লাবে ভর্তি করেন তাঁর মা। অন্যদিকে পোলবার কচুয়া গ্রামের তুহিনার বাবা মন্টু মাইতি চাইতেন না মেয়ে কবাডি খেলুক। এক প্রকার স্বামীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়েই মেয়েকে কবাডি (Kabaddi) প্লেয়ার বানানোর স্বপ্ন বুঁনতে শুরু করেন তুহিনার মা মানসী মাইতি। তুহিনার পরিবারের আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল নয়। তার মাঝেই পড়াশুনা ও খেলাধুলো দুটোই সমান তালে চালিয়ে যেতে চায় তুহিনা। সদ্য খেলো ইন্ডিয়া (Khelo India) ইউনিভার্সিটি গেমস থেকে ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে বাড়ি ফিরেছেন তুহিনা। বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla Sports এর এই প্রতিবেদনে।
চন্দননগর গভর্মেন্ট কলেজে এডুকেশন নিয়ে অনার্স পড়ছে তুহিনা। পড়াশোনার পাশাপাশি কবাডি খেলাও চালিয়ে যাচ্ছে সে। চলতি বছরের ২৩ শে মে উত্তরপ্রদেশের নয়ডায় গৌতমবুদ্ধ নগরে ‘খেলো ইন্ডিয়া’-য় অংশগ্রহণ করেছিল বর্ধমান ইউনিভার্সিটির ১২ জন ছাত্রী। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন তুহিনা মাইতি। প্রথমে তিনি ওড়িশায় ইস্ট জোন ইন্টার ইউনিভার্সিটি কবাডি গেমসে অংশগ্রহন করেছিলেন। সেখানে তুহিনারা চ্যাম্পিয়ন হয়ে হরিয়ানা অল ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি গেমসেও অংশ নিয়েছিলেন। এরপর খেলো ইন্ডিয়া কবাডি ইউনিভার্সিটি গেমসে কোয়ার্টার ফাইনলে ম্যাচ জিতে ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছেন তুহিনা। সেখানে ৭ পয়েন্টে দুর্গা ইউনিভার্সিটিকে হারান তুহিনা ও তাঁর সহপাঠীরা।
ক্লাস ৩-৫ অবধি তুহিনা প্রথমে জিমন্যাস্টিক্স খেলত। এরপর ক্লাস সিক্স থেকে তুহিনা কবাডি খেলা শুরু করে। এখন চন্দননগর হাটখোলা সপ্ত সম্মেলনী ক্লাবের হয়ে কবাডি খেলেন তুহিনা। এবং সেখানেই অনুশীলন করেন। জাতীয় স্তরে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। সোনার দোকানে কাজ করেন তুহিনার বাবা। তাতে যা আয় হয় তা থেকে দুই সন্তান, স্ত্রী ও বয়স্ক মাকে নিয়ে কোনও রকমে সংসার চলে মন্টুর। টালির চাল ও মাটির ঘরে কোনও রকমে দিন কাটছে তুহিনার। বর্তমানে সরকারি ঘর পেলেও তা সম্পূর্ণ করতে পারেননি তুহিনার বাবা। আর্থিক অভাব অনটন থাকায় পড়াশোনা ও খেলাধুলো চালিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে। তুহিনার মা জানান, মেয়ের পড়াশোনার ক্ষতি হবে বলে খেলার জন্য তুহিনার বাবা প্রথমে বাঁধা দিয়েছিল। পরবর্তীতে তুহিনার সাফল্য দেখে তাঁর বাবাও পাশে দাঁড়ান। ভবিষ্যতে তুহিনা কবাডি নিয়ে এগোতে চান। এশিয়ান গেমসের মতো আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশ নিতে চান। তুহিনা ও তাঁর মা চান যদি একটা সরকারি চাকরি পাওয়া যেত তা হলে অনেকটা সাহায্য হত।
খেলো ইন্ডিয়া গেমসে ব্রোঞ্জ পাওয়া তুহিনা বলেন, ‘আরও ভালো করে অভ্যাস করলে হরিয়ানার মতো আমরাও প্রথম হতে পারতাম। এখানে থেকে খেলা বা পড়াশোনা করা খুব কঠিন। আমাদের পরিবারিক অবস্থা খুবই খারাপ। আমি চাই এশিয়ান গেমসে ভালো একটা জায়গা করে নেওয়া। খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হয়। চাই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য একটা চাকরি করতে। আমরা দুই ভাই বোন। বাবার স্বল্প আয়ে তাই সব দিক থেকে সমস্যা হয়।’