হানঝাউ: সারাক্ষণ শুধু খেলা আর খেলা! এমন কথা অনেককেই শুনতে হয়। সারাদিনের ক্লান্তির পর রাতে যখন কম্পিউার গেমে বসতেন, মায়ের কাছে এমন কথা শুনতে হত অয়ন বিশ্বাসকেও। এখন হয় উল্টোটা। বিশ্রাম নিতে দেখলে উল্টে মা বলেন, খেলছিস না কেন! বিষয়টা কি জটিল মনে হচ্ছে? আর একটু খোলসা করা যাক। এশিয়ান গেমসে রয়েছে ই-স্পোর্টস। সেখানেই অংশ নেন ভারতের অয়ন বিশ্বাস। তিনি এই বাংলারই ছেলে। পেশায় ডাক বিভাগের কর্মী। নেশায় গেমার। এশিয়াড যেন নতুন পরিচিতি দিয়েছে অয়নকে। বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
কিছু দিন আগেও অয়ন বিশ্বাসের পরিচিতি ছিল সীমিত। পরিধি অনেকটাই বেড়েছে। সৌজন্যে এশিয়ান গেমস। স্পোর্টসটারকে অয়ন বলেন, ‘যখন গেমিং শুরু করি, মা সারক্ষণ বকাঝকা করত। বলত, আমি সময় নষ্ট করছি। আর হানঝাউতে আসার আগে, মা যদি দেখত আমি বাইরে রয়েছি কিংবা এমনই বসে আছি, উল্টে বলত, এটা কী করছিস? খেলছিস না কেন?’ পার্থক্যটা সহজেই ধরা পড়ে ২৪ বছরের অয়নের গলায়।
নদিয়া জেলার বীরনগরে বাড়ি অয়নের। বাবা অবসর প্রাপ্ত রেলকর্মী। মা নার্স। অয়ন ডাক বিভাগের কর্মী (গ্রামীণ ডাক সেবক)। ই-স্পোর্টস গেমিংয়ে Ayan01 তাঁর ট্যাগ। স্ট্রিটফাইটার ভি খেলেন অয়ন। বিশ্বের অন্যান্য গেমাররা প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রস্তুতি সারেন। চাকরির পর তিন-চার ঘণ্টার বেশি প্রস্তুতির সুযোগ নেই অয়নের কাছে। বলছেন, ‘ক্লাস টেনের পরীক্ষায় ভালো নম্বর নিয়েই পাশ করেছিলাম। এই চাকরির জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা মিলে যায়। চাকরিটা পেয়েছি।’
চাকরি সামলে গেমিংয়ে সময় দেওয়া সহজ নয় তাঁর জন্য। সকাল ৯.৩০ টার মধ্যে লোকাল ট্রেন। সব মিলিয়ে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে বেথুয়াডহরিতে (নদিয়া) অফিস পৌঁছতে। সাব অফিস থেকে ব্লাঞ্চ অফিসে চিঠি পৌঁছে দেন। ব্রাঞ্চ অফিস থেকে চিঠি নেয়ে বিভিন্ন ঠিকানায় পৌঁছে দিতে বেরিয়ে পড়েন। অয়নের কথায়, ‘মূলত চিঠি পৌঁছে দেওয়াই কাজ। কখনও মানি অর্ডারও থাকে।’
স্ট্রিটফাইটার ভি, কম্পিউটারে জয়স্টিক ব্যবহার করে খেলতে হয়। সুতরাং, কাজের ফাঁকে যে প্র্যাক্টিস করবেন, সেই সুযোগ নেই। ইউটিউব থেকে নানা কিছু শেখার চেষ্টা করেন। দিনের বেশির ভাগ সময়ই যেন, রানার ছুটেছে! তাঁর ক্ষেত্রে লাইনটা হতে পারে, গেমার ছুটেছে। এশিয়াডে পদক না পেলেও প্রথম বার বড় মঞ্চে নামার অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের প্রেরণা দেবে অয়নকে।