শ্রীকান্তে যেন ইতি! ২-০ এগিয়েও হার, রুপোতেই থামল স্বপ্নের সফর


হানঝাউ: ফাইনালে উঠে আগেই ইতিহাস গড়েছিল ভারতীয় ব্যাডমিন্টন টিম। প্রত্যাশা ছিল সোনার। এশিয়ান গেমসের ইতিহাসে টিম ইভেন্টে ভারত প্রথম বার ফাইনালে উঠেছিল। সোনার স্বপ্ন দেখিয়ে রুপোতেই থামতে হল। পিঠের চোটের কারণে ফাইনাল থেকে ছিটকে যান প্রণয়। ভারতীয় শিবিরে যা বড় ধাক্কা ছিল। ১৯৮৬ সালে শেষ বার কোনও পদক জিতেছিল ভারত। সেই টিমে ছিলেন প্রকাশ পাডুকোন, বিমল কুমাররা। প্রণয় ছিটকে গেলেও প্রধান ভরসা ছিলেন লক্ষ্য সেন, সাত্বিক-চিরাগ জুটি এবং কিদম্বি শ্রীকান্ত। প্রথম দুটি ম্যাচ জিতে ২-০ এগিয়ে যায় ভারত। এরপরই অঘটন। রুপোতেও অবশ্য ইতিহাস। বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।

একাধিকবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চিন। গত বারের চ্যাম্পিয়নও। তাদের বিরুদ্ধে যাত্রা শুরু করেন লক্ষ্য সেন। সিঙ্গলসে তাঁর প্রতিপক্ষ শি ইউকি। ১১-৬ লিড নিয়ে ব্রেকে যান লক্ষ্য। সেনসেশনাল কিছু ডাউন দ্য লাইন স্ম্যাশ রিটার্ন করেন লক্ষ্য। যা সকলেই চমকে দেয়। ক্রমশ গ্যাপ কমিয়ে চাপ লক্ষ্যর চাপ বাড়ান চিনা প্রতিপক্ষ। নিজের ভুলে বেশ কিছু পয়েন্ট হাতছাড়া করেন। টানা চার পয়েন্ট নিয়ে লক্ষ্যর সঙ্গে আরও গ্যাপ কমান অলিম্পিক পদকজয়ী শি ইউকি। ১৬-১৬ পয়েন্ট দাঁড়িয়ে চাপ বাড়ে টিম ইন্ডিয়ারও। দ্রুত লিডও নেন চিনা প্রতিপক্ষ। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই প্রত্যেকটা পয়েন্টের জন্য। শি ইউকি গেম পয়েন্টে পৌঁছন। সেখান থেকে পরপর পয়েন্ট জিতে গেম নিজের নামে করেন লক্ষ্য। দ্বিতীয় গেমে ১১-৮ লিড নিয়ে ব্রেকে চিনের প্রতিপক্ষ। এই গেমে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি লক্ষ্য। ম্যাচ গড়ায় তৃতীয় গেমে। সেখানেও ১১-৭ লিড নিয়ে বিরতিতে শি ইউকি। টানা পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে স্কোর লেভেল করেন লক্ষ্য়। ম্যাচ পয়েন্টে পৌঁছে একটা ভুল জাজমেন্ট লক্ষ্যর। পরপর দু পয়েন্ট নষ্ট করলেও দুর্দান্ত কামব্যাক। ২১-১৮ তে গেম এবং ম্যাচ পকেটে পুরে নেন লক্ষ্য। ভারতকে ১-০ এগিয়ে দেন লক্ষ্য।

দ্বিতীয় ম্যাচে লিড বাড়ানোর লক্ষ্যে নামে সাত্বিক-চিরাগ জুটি। প্রথম গেম থেকেই অনবদ্য। ডিফেন্স-অ্যাটাক কার্যত নিখুঁত। তাদের বোঝাপড়া বরাবরই ঈর্ষণীয়। ২১-১৫ ব্যবধানে প্রথম গেম জিতে নেয় সাত্বিক-চিরাগ জুটি। ম্যাচ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে সাত্বিকরা। সে সময় জাজমেন্ট দিয়ে রিভিউ নেয় চিনা জুটি। আরও এক পয়েন্টের ব্যবধান কমান। তবে পরের পয়েন্ট নিয়েই ম্যাচ জিতে ভারতকে ২-০ এগিয়ে দেন সাত্বিক-চিরাগ। সেমিফাইনালে জুটিতে হেরেছিলেন। সেই হতাশা ছিল। ফাইনালের মঞ্চে চিনা জুটিকে হারিয়ে উচ্ছ্বাস ধরে রাখতে পারেননি। জার্সি খুলে ওড়ান চিরাগ শেঠি। ডান্সও করেন। সোনা আর ভারতের মাঝে তখন শুধুই একটি জয়ের ফারাক। এরপরই খেই হারাল ভারত।

তৃতীয় ম্যাচে সিঙ্গলসে নামেন কিদম্বি শ্রীকান্ত। তাঁর প্রতিপক্ষ লি শিফেং। প্রথম গেম থেকেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ১১-১০ লিড নিয়ে বিরতিতে শ্রীকান্ত। সেমিফাইনালে নির্ণায়ক ম্যাচে জিতে ভারতকে ফাইনালে তুলেছিলেন। শ্রীকান্তের ওপর প্রত্যাশার পাহাড়। শ্রীকান্তের গেম পয়েন্ট থেকে গেম ছিনিয়ে নেন লি শিফেং। দ্বিতীয় গেমেও পেরে উঠলেন না। চিনের লি শিফেংয়ের পক্ষে ফল ২৪-২২, ২১-৯। শ্রীকান্তের হারে ভারতীয় টিমের আত্মবিশ্বাসে চরম আঘাত লাগে। ২-১ এগিয়ে থাকলেও সুরক্ষিত ছিল না। কেন না, এরপর যে অনভিজ্ঞ জুটি! প্রণয় না থাকায় কিছুটা ব্যাকফুটে ছিলই ভারত।

শ্রীকান্তের হারে বড় ধাক্কা খেয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। ধ্রুব কপিল-কৃষ্ণ প্রসাদের অনভিজ্ঞ জুটির ম্যাচে নজর রাখতে হয় টিম ইন্ডিয়াকে। অর্জুনের সামান্য চোট থাকায় এই জুটি গড়া হয়। তাঁরা মূলত মিক্সড ডাবলসে খেলে থাকেন। পুরুষদের ডাবলসে প্রবল চাপ নিয়ে নামতে হয়। এই জুটির হারে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ২-২।

ভারতের সোনার ভাগ্য নির্ভর করছিল সিঙ্গলসের শেষ সৈনিক মিঠুন মঞ্জুনাথের ওপর। নির্ণায়ক ম্যাচে তাঁর প্রতিপক্ষ হং ওয়েংহাং। বাঁ হাতি ওয়েংয়ের বিরুদ্ধে প্রথম গেমে আত্মবিশ্বাসী শুরু মিঠুনের। বিশ্ব ক্রমতালিকায় ২০ নম্বরে থাকা প্রতিপক্ষর বিরুদ্ধে লড়াই খুবই কঠিন। দর্শনীয় কিছু রিটার্ন, স্ম্যাশ, ডাউন দ্য লাইন রিটার্ন করলেও স্নায়ুর চাপ ও অনভিজ্ঞতায় ভেঙে পড়লেন। ভারতের ঝুলিতে রুপো। খুব কাছ থেকেও সোনার সঙ্গে দূরত্ব থেকে গেল অনেকটা।

Leave a Reply