দুরন্ত কোরিয়াকে থামিয়ে সোনার খুব কাছে ভারতীয় হকি টিম


হানঝাউ: স্কোরলাইন বলছে ৫-৩ এগিয়ে ভারত। দক্ষিণ কোরিয়া মরিয়া স্কোরলাইনে সমতা ফেরানোর জন্য। ম্যাচ শেষ হতে আর ৪ মিনিট বাকি। এমন সময় কিপারকে মাঠ থেকে তুলে নিল কোরিয়া টিম। সর্বস্ব দিতে, আগ্রাসী হয়ে গোল পেতে। হরমনপ্রীত সিংয়ের ভারত দাঁতে দাঁত চেপে লড়ল। নির্ভুল হকির (Hockey) জন্য় পেনাল্টি কর্নারের সুযোগ পেল না কোরিয়া। এশিয়ান গেমসের সেমিফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৫-৩ হারিয়েই আবার ফাইনালে উঠে পড়ল ভারত। ২০১৪ সালের এশিয়ান গেমসের (Asian Games 2023) হকি থেকে সোনা এসেছিল। জাকার্তা এশিয়ান গেমসের ফাইনালে জাপানের কাছে হেরেছিল ভারত (India)। টানা তৃতীয় বার ফাইনালে উঠে সোনার স্বপ্ন মুঠোয় ধরতে চাইছেন হরমনপ্রীত, ললিত, অভিষেকরা। TV9Bangla Sports এ বিস্তারিত।

এ বারের এশিয়ান গেমসে ভারত আক্রমণ আর রক্ষণে চমৎকার তালমেল তুলে ধরেছে। এশিয়ান গেমসের সেমিফাইনালে কোরিয়ার বিরুদ্ধে সেই ছন্দেই শুরু করেছিলেন হরমনপ্রীতরা। ৫ মিনিটে ১-০ করে ফেলে ভারত। ললিত উপাধ্যায়ের শট প্রথমে সেভ করেছিলেন কোরিয়ান ডিফেন্স। কিন্তু ভাইস ক্যাপ্টেন হার্দিক সিং এগিয়ে দেন টিমকে। ১১ মিনিটে আবার নিজের ভুল শুধরে ২-০ করেন। মিনিট খানেক আগেই গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন মনদীপ। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি। ১১ মিনিটে গুরযন্তের মাইনস থেকে দুরন্ত গোল মনদীপের। এই এশিয়ান গেমসে ১০টা ফিল্ড গোল করে ফেললেন মনদীপ। প্রথম কোয়ার্টার শেষ হওয়ার ঠিক আগেই ৩-০ ভারতের। ১৫ মিনিটের মাথায় কোরিয়ান বক্সে সুখজিৎকে মাইনাস করেন হরমনপ্রীত। সুখজিতের শট কোরিয়ান কিপার সেভ করে দেন। কিন্তু ফিরতি বল ধরে ফর্মে থাকা ললিত গোল করে যান।

৩-০ এগিয়ে থাকলেও কোরিয়ান-আগ্রাসন থামাতে পারেনি ভারতীয় ডিফেন্স। ৩-২ থেকে আবার ৪-২ করেন অমিত রোহিদাস। পেনাল্টি কর্নারের সময় হরমনপ্রীত সিং মাঠে না থাকলে ড্র্যাগ ফ্লিকারের ভূমিকা পালন করেন অমিত। এই এশিয়ান গেমসে ধারাবাহিক ভাবে এই দায়িত্ব পালন করছেন অমিত রোহিদাস। পি-সি থেকেই চারটে গোল করে ফেললেন তিনি। ৪-৩এ যখন গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে কোরিয়ানরা, সেই সময় ৫-৩ করেন অভিষেক। কোরিয়ার লুজ বল ধরে ব্যাকহ্যান্ডে দুরন্ত গোল। মোট আটটা গোল করলেন অভিষেক। সবই ফিল্ড গোল।

কোরিয়ানরা হাফকোর্ট স্ট্র্যাটেজি নিয়ে হকি খেলে। বিপক্ষ টিমকে যতই আগ্রাসী হোক না কেন, ডিফেন্সিভ থার্ডে ঢোকার সুযোগ মেলে না। মাত্র চারটে ক্লাব রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। যেখান থেকে উঠে আসেন প্লেয়াররা। তাদের নিয়েই দিনের পর দিন এক ছক প্রতিপক্ষের জন্য তৈরি রাখেন কোরিয়ানরা। প্রথম কোয়ার্টারে ভারতের বিরুদ্ধে কিন্তু সেটা তুলে ধরতে পারেননি জ্যাং, জুন, লিরা। ভারতীয় টিম ৫৬ গোল দিয়ে শেষ চারে পা রেখেছেন হরমনপ্রীত, ললিত, বিবেকরা। খানিকটা চাপেই ছিলেন কোরিয়ানরা। কিন্তু দ্বিতীয় কোয়ার্টারে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। নিজেদের স্ট্র্যাটেজি আঁকড়ে ধরতেই ভারতীয় টিম একটি বিভ্রান্ত হল। ০-৩ থেকে কিছুক্ষণের মধ্যে ২-৩ করে ফেললেন জুং মানজাই।

কোরিয়ান টিমের মিডফিল্ডার জেনারল জুং। ছোটখাটো চেহারার মিডিও টিমের জন্য খেলা তৈরি করেন। বল সাপ্লাই করেন। বিপক্ষকে চাপে রাখেন। সেই তিনিই খেলায় ফেরালেন টিমকে। পেনাল্টি কর্নার থেকে সরাসরি স্ট্রোক না নিয়ে সেটপিস তৈরি করে কোরিয়া। যে মুভ থেকে ১-৩ করে যান জুং মানজাই। বক্সে কোরিয়ান মিডিও যে ওঁৎ পেতে রয়েছেন, খেয়াল করেননি ভারতীয় ডিফেন্ডাররা। জুংয়ের দ্বিতীয় গোল চমৎকার। অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভারতের ডিফেন্স আর একবার ভাঙলেন ৩০০র বেশি ম্য়াচ খেলে ফেলা জুং। বল ধরে এগোত এগোতে হঠাই শট নেন। চকিতে ২-৩ করে ফেলে কোরিয়া। ১৭ ও ২০ আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। যতবার ভারত স্কোরলাইনে পিছনে ফেলেছে কোরিয়াকে, ততবার টিমের পরিত্রাতা হয়েছেন ৩৭ বছরের জুন। তিনিই হ্য়াটট্রিক করে ব্য়বধান কমিয়ে ফেলেন তৃতীয় কোয়ার্টারে। পেনাল্টি কর্নার থেকে ৩-৪ করেন তিনি।

Leave a Reply