বাচ্চাটার চোখে কি জল? জায়ান্ট স্ক্রিনে হতাশার একটা ছবি ধরা পড়ল। ব্লু জার্সি গায়ে চাপিয়ে এসেছে। ঘণ্টা দুয়েকের ব্যবধান! বিরাট কোহলির হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ হতেই গ্যালারি দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানাল। সে সময় সেই ছেলেটি আবারও জায়ান্ট স্ক্রিনে। পতাকা নিয়ে দৌড়চ্ছেন। আরও বেশ কয়েকবার একই চিত্র। প্রথম ছবিটা দেখানোর সময় ২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় টিম ইন্ডিয়া। তিনি যে বড় ম্যাচের প্লেয়ার আবারও প্রমাণ করলেন কিং কোহলি। যোগ্য সঙ্গ দিলেন লোকেশ রাহুল। তার মাঝে একটা রং বদলের ছবি রয়েছে। হাওয়ায় বল। নিচে মিচেল মার্শ। অ্যালেক্স ক্যারির সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি। মার্শ ক্যাচ ফসকাতেই ভারতীয় ডাগ আউটে স্বস্তির নিঃস্বাস। ক্যাচটা ছিল বিরাট কোহলির। তিন উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে দল। কোহলি সে সময় ১২ রানে। বিরাটের উইকেট মানে ম্যাচ থেকে হারিয়ে যাওয়া। স্বস্তি হওয়াটাই স্বাভাবিক। বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুলের ৮৪ বলে ৫০ রানের পার্টনারশিপ হতেই স্বস্তি আরও একটু বাড়ে। ৬ উইকেটের জয়ে ‘শাপমুক্তি’ ভারতের! বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
চেন্নাইয়ে ১৯৮৭ বিশ্বকাপের সেই ম্যাচ এখনও তাড়া করে ভারতীয় ক্রিকেটকে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মাত্র ১ রানে হেরেছিল ভারত। সেই দলের রবি শাস্ত্রী কমেন্ট্রি বক্সে। ক্ষতটা টাটকা। ১৯৯২ বিশ্বকাপেও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মাত্র ১ রানে হার। ৮৭-র বিশ্বকাপে জিতেছিল চেন্নাইতে চাপের মুহূর্তে আবারও জ্বলে উঠল বিরাটের ব্যাট। মাত্র ২০০ রানের লক্ষ্য। চিপকের পিচে এই রানও কঠিন লক্ষ্য। তার ওপর ভারতীয় ইনিংসের প্রথম দু ওভারেই তিন উইকেট! বোর্ডে রান মাত্র ২। রোহিত, ঈশান, শ্রেয়স তিনজনই আউট কোনও রান না করেই। বিরাট-রাহুল পরিস্থিতি সামাল না দিতে পারলে বিপর্যয় নিশ্চিত ছিল। ইনিংসের ১৮ তম ওভারে বোলিংয়ে আনা হয় অ্যাডাম জাম্পাকে। এটাই ভারতীয় টিমের কাছে আসল পর্ব হয়ে দাঁড়ায়। অজি টিমে একজনই স্পেশালিস্ট স্পিনার। তার আগে ম্যাক্সওয়েল বোলিং করেছেন।
লেগ স্পিনার জাম্পার সঙ্গে ভারতীয় ব্যাটারদের আলাদা প্রতিযোগিতা। এই ম্যাচের আগে জাম্পার বিরুদ্ধে ১২ ইনিংসে বিরাটের ব্যাটিং গড় ছিল ৪৬। আউট হয়েছেন ৫ বার। লোকেশ রাহুলের গড় ছিল ১০ ইনিংসে ২৬। আউট হয়েছেন ৪ বার। জাম্পাকে ঝাঁকিয়ে বসতে দিলেন না রাহুল-বিরাট। সামান্য শর্ট ফেললেও লেট কাট করেছেন রাহুল। ১৪৭ বলে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ বিরাট-রাহুলের। ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে বিশ্বকাপ অভিষেকেই সেঞ্চুরির রেকর্ড রয়েছে একমাত্র বিরাট কোহলির। ২০১১ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেছিলেন বিরাট। এ বারও ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে ভরসা হয়ে দাঁড়ালেন বিরাট। আরও একটা সেঞ্চুরি সময়ের অপেক্ষা ছিল। হ্যাজলউডের শর্টপিচ ডেলিভারিতে পুল শট। কিন্তু সংযোগ ঠিকঠাক হল না। শর্ট মিড উইকেটে মার্নাস লাবুশেনের হাতে। ২১৫ বলে ১৬৫ রানের পার্টনারশিপে জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছেন।
বিশ্বকাপে রেকর্ড গড়ল অস্ট্রেলিয়া! ১৯৯২-এর পর হার দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হল অস্ট্রেলিয়ার। কোহলির আক্ষেপ একটাই। খুব কাছে পৌঁছেও ম্যাচটা ফিনিশ করে আসতে পারলেন না…।