বাবর শিবিরে রাজার আগমন


ইডেনে রামিজের সঙ্গে আলোচনা বাবরের। অনুশীলনের মাঝে হতাশা গ্রাস করল বাবরকে? ছবি: রাহুল সাধুখাঁImage Credit source: OWN Photograph

রক্তিম ঘোষ

কলকাতা: ঘড়ির কাঁটায় তখন তিনটে ছুঁইছুঁই। পাকিস্তান নেটে তখন দাপিয়ে ব্যাট করছেন ইফতিকার ও ফখর জামান। অধিনায়ক বাবর আজম তখন হালকা মেজাজে, এ নেট থেকে ও নেটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শুক্রবার ব্যাট, প্যাড, গ্লাভসের সঙ্গে দূর-দূরের কোনও সম্পর্ক ছিল না বাবরের। হাতে শৌখিন ঘড়ি (কোনও স্পোর্টস ওয়াচ নয়) পরে কখনও মিকি আর্থারের সঙ্গে পিচ পরিদর্শন। কখনও কোচ গ্র্যান্ট ব্র্যাডবার্নের সঙ্গে আলাপ আলোচনা। হাসি-ঠাট্টায় মশগুল থাকা বাবরকে দেখে কে বলবে, সামনে সেমিফাইনালে ওঠার জটিল অঙ্ক। বডি ল্যাঙ্গোয়েজে একবারও মনে হয়নি, ওসব অঙ্কে কোনও মন আছে বলে। হঠাৎ বাবরের তখন নজর গেল টিম ডাগআউটে। হেঁটে আসছেন একজন। বাবরের হাসি মুখটা আরও চওড়া হল। এগিয়ে গেলেন। কে তিনি? বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।

তিনি রামিজ রাজা। পাক ক্রিকেটের প্রাক্তন তারকা। এখন ধারাভাষ্যের কাজে তিনি ভারতে। এই বিশ্বকাপে রামিজের আরও একটা পরিচয় রয়েছে বাবরদের সংসারে। তিনি অন্যতম প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার, যিনি সমালোচনার বর্শায় বিদ্ধ করেননি রিজওয়ান-আফ্রিদিদের। বলা ভাল, পাশে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। আর সেই ইতিবাচক মনোভাবেই রামিজ রাজা এখন বাবর সংসারে ‘আলালের ঘরের দুলাল’। বাবরের আবার রামিজ প্রেমটা অনেক দীর্ঘস্থায়ী। তা জানতে গেলে একটু পেছন দিকে তাকাতে হবে।

২০১৯ সালে পাকিস্তানের টি ২০ ক্রিকেটের দায়িত্ব পান বাবর আজম। তবে তা ধারাবাহিকভাবে এমন নয়। মাঝে শাদাব খানও অধিনায়কত্ব করেছেন টি২০ ক্রিকেটে। একদিনের ক্রিকেটে ২০২০ সালে বাবর অধিনায়কত্ব পান। টেস্টেও প্রথম দিকে ধারাবাহিকভাবে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পাচ্ছিলেনন না। করোনা কালের একেবারে শুরুতে পাক অধিনায়কের মসনদে চেপে বসতে থাকেন বাবর আজম। তখন ক্রিকেট বন্ধ। আস্তে আস্তে পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হতে থাকে। অধিনায়ক বাবর চেষ্টা করেন নিজেকে মেলে ধরার। তাতে অনুঘটকের কাজ করেন রামিজ রাজা। ২০২১ সালে সেপ্টেম্বরে ইমরানের খানের সুপারিশে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্য়ান নিযুক্ত হন রামিজ রাজা। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই পদে ছিলেন রামিজ। অধিনায়ক বাবরের ফুলে ফেঁপে ওঠা তো সেই সময়েই।

ইডেনে রামিজ রাজাকে দেখেই এগিয়ে এলেন বাবর। জনৈক কোচিং স্টাফে রামিজ রাজার সঙ্গে আড্ডা শুরু বাবরের। ঠিক পেছনের নেটেই তখন ব্যাটিং করছেন শফিক ও ফখর। সেদিকে তেমন মন নেই পাক অধিনায়কের। তিনি তখন রাজার ক্রিকেট কাহিনী শুনছেন। তার মিনিট দশেকের মধ্যেই পাকিস্তানের অনুশীলন প্যাক আপ। গুটি গুটি পায়ে এবার রামিজ দরবারে হাজির ইফতিকার। সেই আড্ডা শেষে গোটা পাকিস্তান দল তখন মাঠ ছেড়ে ড্রেসিংরুমে। মাত্র দেড় ঘন্টায় শেষ ইংল্যান্ড ম্যাচের প্রস্তুতি!তারপর তো সেই দৃশ্য…

খালি ইডেনের সবুজ মখমলের মত মাঠের বুকে ২ ব্যক্তির বৈকালিক ভ্রমণ ও গভীর আলোচনা। রামিজ রাজা ও বাবর আজম। দলের কেউ তখন ধারেকাছে নেই। পায়চারি করতে করতে সেই আলোচনা চলল প্রায় মিনিট ২০। বাবর বুঝতে পারছেন, তাঁর অধিনায়কত্বের তাজ এবার খোলার সময় হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে তেমন ইঙ্গিতও দিলেন তিনি। তবে কি কেরিয়ারের পরবর্তী অধ্যায় নিয়ে জোর আলোচনা ইডেনের বুকে! পাকিস্তান সাংবাদিকদের অনেকেই মজা করে আবার বললেন, কাছের মানুষের সঙ্গেই তো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা যায়!

Leave a Reply