সেঞ্চুরিতে লড়াইয়ের রাখলেন মিলার! প্রোটিয়াদের ভরসা স্পিন


কলকাতা: নিম্নচাপের কারণে বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিলই। আকাশ মেঘলা থাকায় দুপুরেই ইডেনর ফ্লাড জ্বালাতে হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা টপ অর্ডার এতটা চাপে ভুগবে, এর পূর্বাভাস ছিল না। কিছুটা আলোকিত করলেন ডেভিড মিলার। একদিক আগলে রেখে লড়াই চালিয়ে গেলেন। লিগ পর্বের ম্যাচে ইডেনে খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপে বিধ্বংসী মেজাজে থাকা তাদের ব্যাটিং ভারতের বিরুদ্ধে মাত্র ৮৩ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল। যদিও সেটা রান তাড়ায়। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে তেম্বা বাভুমা টস জেতেন। শিবিরে গুঞ্জন, অর্ধেক কাজ তো হয়েই গেল। টস জিতে বড় স্কোর গড়ে অজিদের চাপে রাখাই ছিল লক্ষ্য। টপ অর্ডারে ব্যর্থতায় ব্যাকফুটে দক্ষিণ আফ্রিকাই। মিলারের অনবদ্য ইনিংসেও ২১২ রানে গুটিয়ে গেল প্রোটিয়া ইনিংস। অজিদের লক্ষ্য ২১৩। প্রথম বার ফাইনালে যেতে প্রোটিয়াদের ভরসা স্পিনাররাই! বিস্তারিত জেনে নিন TV9 Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।

প্রথম ওভারেই অধিনায়ক তেম্বা বাভুমার উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। টপ থ্রি ব্যাটার আউট এক অঙ্কের রানে। নবম ওভারে মার্কর‌্যামের ফ্লিকে একটা বাউন্ডারি হতেই গ্যালারিতে হাততালি। এটাই তো দেখতে চান দর্শকরা! পরপর ডট-বল কারই বা ভালো লাগে। এর জন্য অবশ্য প্রোটিয়া ব্যাটারদের দোষ দেওয়ার জায়গা নেই। শুরুতেই ক্যাপ্টেনের উইকেট হারানো, জশ হ্যাজলউড-স্টার্কের বিধ্বংসী বোলিং। এর চেয়েও প্রশংসনীয় অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডিং। মার্নাস লাবুশেন, ডেভিড ওয়ার্নারের গ্রাউন্ড ফিল্ডিং দেখে মনে হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া বোধ হয় ১৫জনকেই নামিয়েছে। এবং ক্যাপ্টেন প্যাট কামিন্সের সেই ক্যাচ! প্রথম পাওয়ার প্লে-তে মাত্র ১৮ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা।

ইনিংসের ১৪তম ওভারে বিরল দৃশ্য দেখা গেল। মিড অনে পুশ করেছিলেন বাঁ হাতি ডেভিড মিলার। মিচেল স্টার্ক মিস করলেন, বাউন্ডারিও হল। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিল। সে কারণেই হয়তো স্লিপ করেছিলেন স্টার্ক। এত ভালো ফিল্ডিংয়ের মধ্যে এই একটাই মিস। এই ওভার শেষেই ড্রিংকস ব্রেক। তার মাঝেই দ্রুত পিচ কভার দেওয়া হয়। মাঠের অন্যান্য অংশও ঢাকা শুরু হয়ে যায়। যদিও বৃষ্টির তীব্রতা তেমন বেশি ছিল না। কিছু অংশ ঢাকার পরই অপেক্ষায় থাকেন গ্রাউন্ডসম্যানরা। পুরো মাঠ ঢাকার প্রয়োজন পড়েনি। মাঠের সাউন্ডবক্সে গান বাজতে শুরু করে, ‘টিপ…টিপ বরসা পানি!’ দক্ষিণ আফ্রিকা যেন কিছুক্ষণের জন্য হাফ ছেড়ে বাঁচে। অজি পেসাররা যেমন বোলিং করছিলেন, তাতে বৃষ্টি অনেক ভালো! ১৪ ওভারে ৪ উইকেটে ৪৪! সেমিফাইনালের মঞ্চে এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন।

বৃষ্টি বিরতির প্রায় ৪০ মিনিট পর ফের খেলা শুরু হয়। বিরতিতে যেন ভাবার অনেক সুযোগ পেয়েছিলেন ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার। ক্রমশ হাত খুলতে থাকেন তারা। যোগ্য ডেলিভারিকে সম্মানও দেন। কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাসী দেখায় এই জুটিকে। অফস্পিনার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ভালো বোলিং করছিলেন। টার্নও হচ্ছিল। আর এক পার্টটাইম অফস্পিনার ট্রাভিস হেডকে আক্রমণে আনেন কামিন্স। ক্লাসেনকে ফিরিয়ে ৯৫ রানের জুটি ভাঙেন হেড। পরের বলে ফেরান মার্কো জানসেনকেও ফেরান। প্রবল চাপে পড়ে প্রোটিয়া শিবির।

মিলারের সঙ্গে দারুণ একটা জুটি গড়েন জেরাল্ড কোৎজে। তবে তাঁর আউটেই হতাশা। কামিন্সের বোলিংয়ে লেগ সাইডে কট বিহাইন্ডের আবেদনে আউট দেন আম্পায়ার। একটা রিভিউ বাকি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। আউট নিয়ে সন্দেহ থাকলেও রিভিউয়ের পথে হাঁটেনি। রিপ্লেতে ধরা পড়ে, রিভিউ নিলে বেঁচে যেতেন জেরাল্ড। এই জুটি আরও কিছুক্ষণ থাকলে হয়তো স্কোর কিছুটা বেশি হত দক্ষিণ আফ্রিকার। মিলারকে দেখে মনে হচ্ছিল, যেন উদ্ধারকাজে নেমেছেন। প্রবল চাপের মুখে প্রশংসনীয় ইনিংস। ১১৫ বলে প্যাট কামিন্সের ডেলিভারি লং অনে ছয় মেরে সেঞ্চুরিতে ডেভিড মিলার। ইডেনের প্রায় ৫০ হাজার দর্শক দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানান মিলারকে। পরের বলে মিড উইকেটে ক্যাচ। মিলারের অনন্য ইনিংসকে সম্মান ইডেনের দর্শকদের।

Leave a Reply