কী অদ্ভূত না! একটা দিন আগেও আমরা এমন সময় কতকিছু ভাবছিলাম। আমেদাবাদে ফাইনালে শেষে কী হতে পারে মনের মধ্যে সেই ছবিগুলো যেন এঁকে নিয়েছিলাম। ভারতীয় দলের সদস্যরাও হয়তো তেমনই। দেড় মাস ধরে নানা মুহূর্ত। ওঁদের ঘিরে চারিদিকে ভিড়। নানা আব্দার। একটু কাছ থেকে দেখার আর্তি। স্বপ্নের মায়াজাল। ক্রিকেট প্রেমীদের মতো কি একই অবস্থা ওঁদেরও?
রোহিত শর্মা হয়তো মাঠ থেকে ফিরে ভাবছিলেন কোথায় ভুল হল! কিংবা রাহুল দ্রাবিড়, বিরাট কোহলি। আসলে যতক্ষণ সব ঠিক হয়, ভুলটা কিছুতেই বোঝা যায় না। গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, সঠিক পথেই রয়েছি আমরা। টিম ইন্ডিয়াও তো সেটাই বলে আসছিল। প্রসঙ্গ অন্য ছিল, তবে দ্রাবিড়ের সেই মন্তব্য অর্থবহ। শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞ ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে টাইমড আউট করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। কোথাও নিন্দের ঝড়, কেউ বা বলেছেন, নিয়মে তো রয়েছে! দ্রাবিড়কে এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করায় বলেছিলেন, ‘ঠিক-ভুল বলে কিছু হয় না। সবটাই আমাদের দৃষ্টিকোন। আমরা এটা করতাম না। তার মানে সাকিবকে দোষী করাও সমিচীন নয়।’
ভারতীয় দল ফাইনালে কোথায় ভুল করল! আবার এই ঠিক-ভুল প্রসঙ্গ। যার যার দৃষ্টিভঙ্গিতে যেমন। এটা হলে ভালো হত কিংবা ওটা হলে। ব্যর্থতা শেষে এমনটা বলাই যায়। তাঁরাও কি কারণ খুঁজছেন না? আইসিসি টুর্নামেন্ট ভারত এবং ট্রফির দূরত্ব। এ তো আজ-কালের কাহিনি নয়। গত দশ বছরের পরিস্থিতিই তাই। এ বার যেমন বিশ্বকাপে টানা দশ ম্যাচে জয়, তেমনই টানা দশটি আইসিসি টুর্নামেন্টে ট্রফির খুব কাছ থেকে ফেরা।
বিশ্বজয়ী সমস্ত অধিনায়ককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ফাইনালে। জায়ান্ট স্ক্রিনে একবারও ধোনিকে দেখা যায়নি। কারা এসেছিলেন, পুরো তালিকা নিশ্চিত নয়। হঠাৎ কেন ধোনি প্রসঙ্গ! শেষ আইসিসি ট্রফিটা যে তাঁর নেতৃত্বেই এসেছিল! সেই ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। তারপর যে ট্রফির সুযোগ আসেনি তা তো নয়। ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফাইনালে হার। পরের বছর ওয়ান ডে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে হার। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে সেমিফাইনালে বিদায়। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রানার্স। ২০১৯ ওয়ান ডে বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে বিদায়।
টানা পড়তে অসুবিধা হতে পারে। একটু না হয় বিরতি দিয়ে আবার শুরু করা যাক। ২০১৯ অর্থাৎ গত বারের ওয়ান ডে বিশ্বকাপেও ফেভারিট ছিল ভারত। লিগ পর্বে ফাটাফাটি পারফরম্যান্স। মিডল ও লোয়ার অর্ডারকে কার্যত পরীক্ষার সামনেই পড়তে হয়নি। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পরীক্ষা হল, রেজাল্টে-ফেল লেখা রইল। মাঝে আর একটা পর্ব রয়েছে। উদ্বোধনী বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। দু-বছর টেস্ট ক্রিকেটে চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্সের সৌজন্যে ফাইনালে ওঠা। ২০২১ সালে সেই ফাইনালে হার।
ফেরা যাক, সাদা বলে। ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বেই বিদায়। সে বার বোধ হয় হতাশা একটু কম ছিল। ট্রফির কাছেই তো যাওয়া হয়নি, জেতার প্রত্যাশাও তৈরি হয়নি খুব বেশি। এরপর নেতৃত্ব বদল। কোচও। সব যেন নতুন করে শুরু হল। নতুন স্বপ্নও। সব বদলে যাবে, এই ভাবনায় ধাক্কা লাগল ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হার এবং বিদায়। ২০২১-২০২৩ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় সংস্করণ। আবারও ফাইনালে ভারত। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে তাদের বিরুদ্ধেই নিরপেক্ষ ভেনুতে ফাইনাল। কিচ্ছু বদলায়নি। ফাইনালে হার।
ঘরের মাঠে তেইশের বিশ্বকাপের আগে পরিসংখ্যান, ট্রেন্ড, সুপারস্টার সমৃদ্ধ টিম। সব মিলিয়ে আকাশছোঁয়া স্বপ্ন। তাতে বাতাস লাগল একের পর এক জয়ে। নয়ে নয় করে সেমিফাইনাল। সেখানেও দাপট দেখিয়ে জয়। ফাইনালে গ্যালারিতে লক্ষাধিক, দেশজুড়ে কোটি কোটি মানুষের প্রত্যাশা। আবারও ফাইনালে হার। দেড় মাসের ক্রিকেট উৎসব শেষে, বিরাট শূন্যতা। ক্রিকেটারদেরই শুধু নয়, ক্রিকেট অনুরাগীদেরও।
বিশ্বকাপে টানা দশটা ম্যাচ জেতায়, কোথাও যেন মিলিয়ে গিয়েছিল, আগের ৯টি আইসিসি টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স। ১৯ নভেম্বরের পর হিসেব দাঁড়ালো, দশ বছর-আইসিসির দশ টুর্নামেন্ট-৫বার ফাইনাল, ৪বার সেমিফাইনালেই বিদায়।