কেউ যখন প্রথম বার ক্রিকেট ব্যাট কিংবা বল হাতে তুলে নেয়, স্বপ্ন দেখতে শুরু করে যে, একদিন জাতীয় দলের হয়ে খেলবে। সবার স্বপ্ন পূরণ হয় না। খেলা দূর অস্ত, জাতীয় দলের দরজা অবধি পৌঁছনোর রাস্তাটাও যে খুবই কঠিন। এত্ত বড় দেশ, অনেকেই তো ক্রিকেট খেলে। প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েন বেশির ভাগই। যাঁরা লেগে থাকেন, সঠিক পথ দেখানোর মতো গুরু থাকে, তাঁরা ঠিক লক্ষ্যে পৌঁছে যান। গত বছর ভারতের মহিলা ক্রিকেটে সাড়া ফেলেছিল উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগ। তার আগে ভারতে মেয়েদের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ হলেও সেটা এত বড় আকারের ছিল না। দেশ-বিদেশের তারকা ক্রিকেটারদের মধ্যে চোখ ধাঁধানো পারফর্ম করেছিলেন বাংলারই এক বাঁ হাতি স্পিনার। ক্রিকেট জীবনের একটা ধাপে পৌঁছেছেন তিনি। সাইকা ইসাক। কিন্তু সাফল্য কি তাঁর একারই? বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
সাফল্যের সংজ্ঞা প্রত্যেকের কাছে আলাদা। উঠতি ক্রিকেটারের কাছে সাফল্যের প্রথম ধাপ নিঃসন্দেহে জাতীয় দলে সুযোগ করে নেওয়া। সেটাই করেছেন বাংলার বাঁ হাতি স্পিনার সাইকা ইসাক। উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগের উদাহরণ দেওয়ার কারণ সেটার সাফল্য। সাইকার সফর শুরু হয়েছিল আরও অনেক আগেই। ঘরোয়া ক্রিকেটে একের পর এক ভালো পারফরম্যান্স। ধারাবাহিকতার প্রকৃত উদাহরণ। প্রত্যেকটা ধাপ পেরিয়ে অবশেষে প্রথম বার জাতীয় দলে।
সামনেই ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জোড়া সিরিজ। টি-টোয়েন্টির পাশাপাশি রয়েছে টেস্ট ক্রিকেটও। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একটি করে টেস্ট খেলবে ভারতীয় মহিলা দল। জোড়া টেস্ট এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজের স্কোয়াড ঘোষণা হয়েছে। তাতে রয়েছেন সাইকা ইসাক। জাতীয় দলে সুযোগ আর এই উত্তেজনাটা গুরুর সঙ্গে ভাগ করে নেবেন না তা কী করে হয়! ক্লাব, রাজ্য দল হোক বা জাতীয় দল। কোচের পাশাপাশি একজন থাকেন, যাঁকে সুখের দিনেও যেমন পাশে পাওয়া যায়, তেমনই কঠিন থেকে কঠিন পরিস্থিতিতেও। সাইকার জীবনে সেই মানুষটি বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার শিবসাগর সিং।
বাংলার সিনিয়র মহিলা দল থেকে শুরু করে সমস্ত বয়সভিত্তিক দলের ক্রিকেটারদেরই শিবসাগরের কোচিংয়ের সুযোগ হয়েছে। তবে সাইকার কাছে কোচ এবং গুরু শিবসাগর সিং যেমন আলাদা গুরুত্ব রাখেন তেমনই গুরুর কাছে তাঁর ছাত্রীও। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পরই সাইকা ভিডিয়ো কল করেছিলেন। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার উত্তেজনা যেমন ভাগ করে নিয়েছেন, তেমনই প্রাপ্তি হয়েছে মূল্যবান পরামর্শও।
মেয়েদের ক্রিকেটে টেস্ট ক্রিকেট খেলার সুযোগ খুবই কম। এখন তবু বছরে এক দুটি টেস্ট খেলার সুযোগ আসছে। সেই সুযোগ সকলেই পাবেন তা নয়। সাইকা স্কোয়াডে থাকলেও খেলার সুযোগ মিলবে কিনা, সময়ই বলবে। প্রস্তুত থাকতে হবে। লাল-বলের ক্রিকেট ‘অপরিচিত’। দীর্ঘদিনের ছাত্রী সাইকাকে কী পরামর্শ দিয়েছেন? শিবসাগর সিং টিভিনাইনকে বলছেন, ‘নিজের যোগ্যতা, ধারাবাহিক পারফর্ম করেই জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে। সব কৃতিত্ব ওরই। ও যে ভাবে পারফর্ম করছিল, জাতীয় দলে আসাটা শুধুই সময়ের অপেক্ষা ছিল। ওকে নতুন করে পরামর্শ দেওয়ার কিছু নেই। আর টেস্টে সুযোগ পেলেও সাইকা ভালো পারফর্ম করবে এটুকু বলতে পারি। ওকে শুধু লেন্থ সম্পর্কে একটু বলেছি। সাদা-বলের ক্রিকেট আর লাল-বলে লেন্থের হেরফেরই আসল।’
শিবসাগর যতই যাবতীয় কৃতিত্ব সাইকাকে দিক। এই সফরে শিবসাগরের ভূমিকা অনেক আগেই বলেছেন সাইকা। বাংলা দলে একটা সময় নিয়মিত হলেও মাঝে অনেক উত্থান-পতনের মধ্যে কেটেছে সাইকার। দু-বছর বাংলা দলের বাইরে ছিলেন। প্রত্যাবর্তন সম্ভব হয়েছিল শিবসাগরের সৌজন্যেই। আর সেখান থেকে শুধুই তাঁর উত্থান দেখা গিয়েছে। প্রত্যাবর্তনের পুরো কৃতিত্ব দিয়েছিলেন শিবসাগর স্যারকেই। হয়তো তাই জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে স্যারের সামনে আবেগ ঢেকে রাখতে পারেননি। উচ্ছ্বাসের মাঝেই বলেছেন, ‘দু-বছর আগের এই সময়টা মনে আছে স্যার? আর এখনকার সময়টা ভাবুন…।’
সময় থেমে থাকে না। সাফল্যও দীর্ঘস্থায়ী করতে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। তাতেও অনেকের স্বপ্ন পূরণ হয় না। অমোল মুজুমদার, রাজিন্দর গোয়েলদের মতো ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল ক্রিকেটাররা জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাননি। শিবসাগর সিংও সেই তালিকায় রয়েছেন। ছাত্রী সাইকার মাধ্যমে কি তাঁরও স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে? শিবসাগরের ছোট্ট উত্তর, ‘বলতে পারেন। অনেকটা হয়তো তাই।’