জুটেছিল একটিই ম্যাচ, টেস্ট খেলেও ‘খেলেননি’! সৌরভ-সচিনের সতীর্থর আজীবনের হতাশা


কলকাতা: আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন, কিন্তু অস্তিত্ব নেই? এ আবার কেমন কথা! ভারতের এক ক্রিকেটারের ক্ষেত্রে এমনই হয়েছে। তিনি টেস্ট খেলেছেন, কিন্তু খেলেননি। বিষয়টা শুনতে বেশ গোলমেলে। সেঞ্চুরিয়নে চলছে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা বক্সিং ডে টেস্ট। আর সেঞ্চুরিয়নেই টেস্ট খেলেছিলেন সচিন-সৌরভদের সতীর্থ। কিন্তু তাঁর নামের পাশে সরকারি ভাবে টেস্ট প্লেয়ারের তকমা থাকছে না। তাঁর নাম কনর উইলিয়ামস। ঠিক কী হয়েছিল? বিস্তারিত রইল TV9Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ক্রমশ সম্মান পুনরুদ্ধার করছে ভারতীয় ক্রিকেট। সালটা ২০০১। সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ভিভিএস লক্ষ্মণ, অনিল কুম্বলে, জাভাগল শ্রীনাথদের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের পাশাপাশি ভারতীয় দলে একঝাঁক নতুন মুখ। তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে। ব্লুমফন্টেনে প্রথম টেস্ট ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে জেতে দক্ষিণ আফ্রিকা। বেরহায় দ্বিতীয় টেস্টটি ড্র হয়। এই ম্যাচ থেকেই নানা বিতর্ক।

ম্যাচ রেফারি মাইক ডেনেস নানা অভিযোগে ভারতের ছয় ক্রিকেটারকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। এর মধ্যে ছিল আউটের অতিরিক্ত আবেদন, বল বিকৃতির মতো অভিযোগও। স্বাভাবিক ভাবে ম্যাচ রেফারির ওপর বেজায় ক্ষুব্ধ হয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল। এর মধ্যেও কিছুটা উচ্ছ্বাসের জায়গা ছিল ভারতের এক ক্রিকেটার কনর উইলিয়ামসের। বরোদার এই বাঁ হাতি ওপেনার টেস্ট খেলার সুযোগ পান সিরিজের শেষ ম্যাচে। নির্বাসিত বীরেন্দ্র সেওয়াগের জায়গায় একাদশে নেওয়া হয় তাঁকে। পরিস্থিতি এতটাও সহজ ছিল না।

দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ডের কাছে ভারতীয় বোর্ড সরাসরি দাবি জানায়, ম্যাচ রেফারি মাইক ডেনেসকে সরাতে হবে তৃতীয় টেস্ট থেকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার এতে সায় ছিল না। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ড মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, ম্যাচ হবে। মাইক ডেনেসকে সরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ডেনিস লিন্ডসেকে ম্যাচ রেফারি করা হয়। আইসিসি এই বিষয়টিকে ভালো ভাবে নেয়নি। এই টেস্টকে স্বীকৃতি দেয়নি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা। তৎকালীন অধিনায়ক শন পোলক তৃতীয় টেস্টকে উল্লেখ করেছিলেন, ‘প্র্যাক্টিস ম্যাচ’ হিসেবে।

সেই সেঞ্চুরিয়নেই বক্সিং ডে টেস্ট। ২২ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। হতাশা কাটেনি কন উইলিয়ামসের। কেরিয়ারে একটিই আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছিল। প্রথম ইনিংসে কন উইলিয়ামস মাত্র ২ রান করেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ৪২ রান। যদিও আইসিসির স্বীকৃতি না থাকায় এই ম্যাচ খেলেও টেস্ট প্লেয়ার নন কনর। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে হতাশ কন উইলিয়ামস সেই ম্যাচ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ম্যাচের আগের দিন শুনেছিলাম, আইসিসির স্বীকৃতি থাকছে না। আমি সে সব নিয়ে ভাবছিলাম না। আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে চলেছি, মানসিক ভাবে এই প্রস্তুতিই নিয়েছিলাম। ম্যাচের আগে কোনও ডেবিউ ক্যাপ বা কিছুই হয়নি।’

ঘরোয়া ক্রিকেটে মনিপুরের কোচ কন উইলিয়ামস। সেঞ্চুরিয়নে দ্বিতীয় ইনিংসে রান পাওয়ার ক্ষেত্রে সচিনের পরামর্শের কথাও জানিয়েছেন কনর। বলছেন, ‘দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর আগে সচিন তেন্ডুলকর বলেছিল আমি যেন সোজা ব্যাটে খেলি। সেই পরামর্শ কাজে দিয়েছিল।’ একটা দুর্দান্ত ইনিংস খেলেও কনর উইলিয়ামসের আন্তর্জাতিক ম্যাচের সংখ্যা ‘জিরো’। আর কোনও দিনই সুযোগ পাননি। ভারতের ২৪০ নম্বর টেস্ট ক্যাপটা পাওয়ার কথা ছিল তাঁর। যেটা পেয়েছিলেন অলরাউন্ডার সঞ্জয় বাঙ্গার।

Leave a Reply